সবকিছু ঠিকমতো এগোলে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আসন্ন যুক্তরাষ্ট্র সফরে গুরুত্বপূর্ণ দুটি সামরিক চুক্তি সই হতে চলেছে। এই দুই চুক্তি সম্পাদিত হলে প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে ভারত যেমন স্বাবলম্বী হওয়ার দিকে কয়েক কদম এগিয়ে যাবে, তেমনই প্রভূত সামরিক শক্তি বাড়বে। মোদির সফরের প্রাক্কালে সরকারি সূত্রে এ আশাবাদের খবর জানা গেছে। মোদি যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন ২১ জুন।
ভারতে তৈরি হালকা যুদ্ধবিমান ‘তেজস’-এর ইঞ্জিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যৌথভাবে তৈরির বিষয়টি ইতিমধ্যে প্রায় চূড়ান্ত হয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিক কোম্পানির প্রযুক্তি হস্তান্তরের মাধ্যমে এ ইঞ্জিন তৈরি করা হবে কর্ণাটকের ‘হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড’-এ (হ্যাল)। এ ছাড়া ভারত কিনতে চলেছে ‘এমকিউ-৯বি সি গার্ডিয়ান’ সশস্ত্র ড্রোন। চালকবিহীন এই ড্রোন মারফত আকাশ থেকে জমিতে ছোড়ার জন্য থাকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ও স্মার্ট বোমা। মোট ৩০০ কোটি ডলারের এ ড্রোন চুক্তি আপাতত দুই দেশের শেষ পর্যায়ের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
ভারতের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম সরকারি সূত্রের বরাতে জানিয়েছে, চুক্তি চূড়ান্ত হলে ভারত মোট ৩০টি ড্রোন কিনবে। এর মধ্যে ১০টি দেওয়া হবে ভারতীয় নৌবাহিনীকে।
৮টি করে দেওয়া হবে সেনাবাহিনী ও বিমানবাহিনীকে। ওয়াকিবহাল মহলের খবর, মোদির সফর চূড়ান্ত করতে ভারতে এসে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান এই দুই চুক্তি সইয়ের বিষয়টি অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেছেন। প্রযুক্তি হস্তান্তর ও লগ্নির বিষয়ে কথাবার্তা চূড়ান্ত করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রে ওই ড্রোন তৈরি করে ‘জেনারেল অ্যাটমিক্স’। আর ‘জেনারেল ইলেকট্রিক’ তৈরি করে যুদ্ধবিমানের ইঞ্জিন। রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ‘হ্যাল’–এ সম্পূর্ণ ভারতীয় প্রযুক্তিতে তৈরি ‘তেজস মার্ক-২’ হালকা যুদ্ধবিমানের ‘জিই-এফ ৪১৪’ টার্বোফ্যান ইঞ্জিন তৈরির চেষ্টা ভারত অনেক দিন ধরেই করছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচি সফল করতে এ প্রকল্প যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।
পাকিস্তানকে চীন বেশ কিছুদিন ধরেই সশস্ত্র চালকবিহীন ‘কাই হং-৪’ ও ‘উইং লুং-২’ ড্রোন সরবরাহ করছে। তার মোকাবিলায় ভারতের ‘এমকিউ-৯বি সি গার্ডিয়ান’ আনার সিদ্ধান্ত। খরচ, প্রযুক্তি হস্তান্তর ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নে সিদ্ধান্ত রূপায়ণে বেশ খানিকটা দেরি হয়। এখন মনে করা হচ্ছে, মোদির এ সফরে চুক্তি সই হবে।
২০২০ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ভারতীয় নৌবাহিনী প্রধানত ভারত মহাসাগরে নজরদারি চালাতে দুটি ‘এমকিউ-৯বি সি গার্ডিয়ান’ ব্যবহার করছে। ওই দুটি ড্রোন নৌবাহিনী ইজারা নিয়েছে জেনারেল ইলেকট্রিক থেকে। তবে তাতে ক্ষেপণাস্ত্র নেই। পূর্ব লাদাখে চীনের সেনা সমাবেশের ওপর নজরদারিতেও এই চালক ও অস্ত্রবিহীন ড্রোন ব্যবহৃত হচ্ছে।