গ্রীষ্মকালে যুক্তরাষ্ট্রের মানুষ সাধারণত বেসবল খেলা দেখেন, মেলায় যান বা মার্শম্যালো পুড়িয়ে খান; কিন্তু এবারের গ্রীষ্ম কালের চিত্র পুরোপুরি আলাদা। পুলগুলোয় লাইফগার্ডের অনুপস্থিতি, রেস্তোরাঁয় ওয়েটার ও ক্যাম্পে কাউন্সেলরের ঘাটতি দেখা যাচ্ছে এবার। এই বেকারত্ব সমস্যা যে শুধু ব্যবসার জন্য খারাপ তা নয়, সার্বিকভাবে দেশটির পুরো অর্থনীতির জন্য চ্যালেঞ্জও বটে। ফেডারেল রিজার্ভ গত এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতির বিরুদ্ধে যে লড়াই করছে, দেশটির শ্রমবাজারে তার বড় প্রভাব পড়ছে। শ্রমবাজারের এ পরিস্থিতিই বলে দিচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র কি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের যুদ্ধে জয়ী, নাকি পরাজিত।
প্রাথমিকভাবে শ্রমিকঘাটতির জন্য কোভিড মহামারি দায়ী হলেও সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে বিষয়টি পরিষ্কার, অর্থনীতি নিজেই এ পরিণতির জন্য দায়ী। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি একজন বেকার ব্যক্তির বিপরীতে ১ দশমিক ৬টি শূন্য পদ আছে, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ের তুলনায় তা কিছুটা কম হলেও কোভিড মহামারির আগের সময়ের চেয়ে ভালো।
কোভিড আঘাতের আগে, অর্থাৎ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে। দেশটির ২৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী মানুষের ৮৪ শতাংশ নানা ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত, ২০০২ সালের পর যা সর্বোচ্চ, সর্বকালীন রেকর্ডের চেয়ে যা সামান্য কম। শ্রমিকদের জন্য এ পরিস্থিতি ভালোই বলতে হয়। বিশেষত পরিষেবা খাত, যেখানে বিশেষ শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রয়োজন নেই, সেই সব কর্মক্ষেত্রে শ্রমিকদের বেতন বেশ দ্রুতহারে বেড়েছে। যেমন নির্মাণ খাত। এতে সে দেশের আয়ের বৈষম্য কিছুটা হলেও দূর হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে অর্থাৎ কর্মসংস্থানের হার বেশি থাকলে সমাজের স্বল্প আয়ের মানুষেরা বেশি উপকৃত হন, কারণ এ সময় উল্লেখযোগ্য হারে মজুরি বৃদ্ধি পায়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে কৃষ্ণাঙ্গ মার্কিন নাগরিকদের বেকারত্বের হার হ্রাসের রেকর্ড সৃষ্টি হয়—৪ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসে তা।
জুন মাসে যুক্তরাষ্ট্রের শ্রমজীবীদের আয় বার্ষিক হিসাবে ঘণ্টাপ্রতি ৪ দশমিক ৪ শতাংশ হারে বেড়েছে। মজুরি বৃদ্ধির এই হার মূল্যস্ফীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, মূল্যস্ফীতির হার কমলেও এখনো তা ফেডারেল রিজার্ভের মূল্যস্ফীতির ২ শতাংশ হারের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দ্বিগুণ। ফেডের আটলান্টা শাখা ধারণা করছে, এ বছর প্রায় ৬ শতাংশ হারে মজুরি বাড়তে পারে।
এ বাস্তবতায় যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ আবারও নীতি সুদহার বাড়াতে পারে, জুলাই মাসের শেষে ফেড তাদের মাসিক সভায় নীতি সুদহার বাড়াতে পারে; যদিও জুন মাসে তারা সুদহার বাড়ায়নি। বাজারের ধারণা, শূন্য দশমিক ২৫ শতাংশীয় হারে নীতি সুদ বৃদ্ধির সম্ভাবনা ৯২ শতাংশ। গত মার্চ মাসে যখন সিলিকন ভ্যালি ব্যাংকসহ দুটি ব্যাংকের পতন ঘটে, তখন অনেকেই আশঙ্কা করেছিলেন, আর্থিক খাতের এই টালমাটাল পরিস্থিতির প্রভাব অর্থনীতিতে সঞ্চারিত হবে।
৬ জুলাই এক বক্তৃতায় ফেডের ডালাস শাখার প্রধান লরি লোগান যুক্তি দিয়েছিলেন, কর্মসংস্থানের এই বাড়বাড়ন্তের মধ্যে ফেডের আরও কঠোর অবস্থান নেওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। তিনি সেদিন আরও বলেন, ‘আপাতদৃষ্টে শ্রমবাজারের আকস্মিক অবনতির সম্ভাবনা নেই।’
শুভাকাঙ্ক্ষীরা আশা করেন, আপাতত শ্রমবাজার যেমন আছে, তেমনই চলতে পারে। কর্মসংস্থানের হার কিছুটা কমলেও হঠাৎ বেকারত্ব অনেক বেড়ে যাবে—এমন সম্ভাবনা কম। বেশ কয়েকটি সূচকের ভিত্তিতে তাঁরা এই ধারণা পোষণ করেন। উদাহরণস্বরূপ, মে মাসে প্রায় ৯৪ লাখ শূন্য পদ ছিল, যা এক বছরের আগের তুলনায় ১৬ লাখ কম। তাত্ত্বিকভাবে কর্মী চাহিদার এই ধরনের হ্রাস মজুরি বৃদ্ধিতে কিছুটা প্রভাব ফেলবে।
এখন কিছু মাত্রায় হলেও সেটাই ঘটছে। মজুরি বৃদ্ধির গতি ভালো হলেও ঘণ্টাপ্রতি মজুরি বৃদ্ধির হার এক বছর আগের তুলনায় ১ শতাংশীয় পয়েন্ট কম।
ফেড গত বছর থেকে আক্রমণাত্মকভাবে সুদহার বাড়িয়ে যাচ্ছে, যার পূর্ণাঙ্গ প্রভাব এখনো টের পাওয়ার যাচ্ছে না। যত দিন কর্মসংস্থানের হার বাড়বে এবং মূল্যস্ফীতি লাগামহীনভাবে বাড়তে থাকবে, তত দিন সুদহার বাড়ানো ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর কোনো বিকল্প থাকবে না। এখন পর্যন্ত শ্রমবাজার খুব একটা ভঙ্গুর অবস্থায় পৌঁছায়নি, কিন্তু প্রতিনিয়ত তার ওপর চাপ সৃষ্টি হচ্ছে।