আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশনে নির্বাচন করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। এরই মধ্যে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আওয়ামী লীগের আটজন ও জাতীয় পার্টির দুজন নেতা মাঠে নেমেছেন। দলীয় মনোনয়ন পেলে তাঁরা নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন। নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে তাঁদের সমর্থনে ব্যানার, পোস্টার ও বিলবোর্ড টাঙানো হয়েছে।
বিএনপির মনোনয়নে টানা দুবার মেয়র নির্বাচিত হওয়া আরিফুল হক চৌধুরী সিটি নির্বাচনে আবারও প্রার্থী হবেন কি না, এ নিয়ে এখন আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীন কোনো ধরনের নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে না। যেহেতু আমি দল করি, তাই দলের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। নির্বাচন নিয়ে আপাতত কোনো মন্তব্য করতে আগ্রহী নই। তবে কিছুদিন অপেক্ষা করেন, সময়ই সব প্রশ্নের জবাব দেবে।’
আরিফুল হক চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকেরা জানিয়েছেন, গত রোববার তিনি যুক্তরাজ্য সফরে গেছেন। দেড় সপ্তাহ পর তাঁর দেশে ফেরার কথা রয়েছে। তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আরিফুলের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। সময় ও পরিস্থিতি বিবেচনা করে আরিফুল নিজের মতামত জানাবেন বলে তাঁরা মনে করছেন।
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিএনপি বর্তমান সরকারের অধীন কোনো নির্বাচনে যাবে না ঘোষণা দিয়ে সরকারবিরোধী আন্দোলন করছে। এ অবস্থায় সিলেট সিটি নির্বাচনেও দলটি কোনো প্রার্থী দেবে না বলে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের ধারণা। ফলে দলীয় মনোনয়ন পেলে সহজে জয় পাওয়া যাবে, এমন মনে করছেন আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা বলেন, উন্নয়নবান্ধব মেয়র হিসেবে নগরে আরিফুলের ব্যাপক জনপ্রিয়তা আছে। তাই নগরের অনেক ভোটার চান, বিএনপি নির্বাচনে না এলেও আরিফুল যেন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে তাঁর জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। আরিফুল স্বতন্ত্র প্রার্থী হবেন, দলের ভেতরে যেমন এমন একটা প্রচারণা আছে, দলের বাইরেও আছে। সব মিলিয়ে তিনি প্রার্থী হবেন কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিএনপির সাবেক অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমানের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত আরিফুল হক চৌধুরী একসময় ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। পরে তিনি মহানগর বিএনপির সভাপতি, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক, সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলরসহ নানা গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ টানা দুবার তিনি বিএনপির মনোনয়নে নির্বাচন করে মেয়র হন। বর্তমানে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি এবং সিলেট জেলা কমিটির সদস্য হিসেবে আছেন।
বিএনপির কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে কে মনোনয়ন পাবেন, এ নিয়ে কোনো ধারণা করা এখনই সম্ভব নয়। কারণ, মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন পেতে এখানে একাধিক নেতা তৎপর আছেন। তবে জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতার বিবেচনায় আরিফুল হক চৌধুরীর বিকল্প নেতা বিএনপিতে খুব একটা নেই বলেও নগরে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে আলোচনা আছে। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো আরিফুলের বিকল্প না থাকলেও দলে তাঁর বিরোধী শক্তির অবস্থান অত্যন্ত পাকাপোক্ত। বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সিলেট-১ (নগর ও সদর) আসন থেকে বিগত সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা খন্দকার আবদুল মুক্তাদিরের সঙ্গে আরিফুলের ‘ঠান্ডা লড়াই’ আছে বলে রাজনীতির মাঠে প্রচলিত আছে। তাই বিএনপি নির্বাচনে এলেও আরিফুল যেন মনোনয়ন না পান, এ নিয়ে বিপক্ষ বলয়ের নেতারা স্বাভাবিকভাবেই তৎপর থাকবেন।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইভিএমে হবে। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ সময় ২৩ মে। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে। আর মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ সময় ১ জুন। ভোট হবে ২১ জুন। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত একটানা ভোট গ্রহণ চলবে।