মেডিকেল অক্সিজেন সব সময়ই জরুরি

0
180
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাঙ্গণে স্থাপিত অক্সিজেন প্ল্যান্ট

ওষুধ ও টিকার মতো অক্সিজেনও গুরুত্বপূর্ণ। মেডিকেল অক্সিজেনের জন্য জাতীয়ভাবে পরিকল্পনা তৈরি করা দরকার।

করোনা মহামারির প্রকোপ কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে সাধারণ মানুষ ও নীতিনির্ধারকদের মুখ থেকে অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তার কথা শোনা যাচ্ছে না। হাসপাতালে অক্সিজেন-স্বল্পতার কারণে বিশেষ কোনো সমস্যা বা দুর্ঘটনার কথাও সাম্প্রতিক মাসগুলোতে শোনা যায়নি।

অবশ্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর প্রতিদিন করোনা পরিস্থিতির যে তথ্য দেয়, তাতে সারা দেশের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সরবরাহ পরিস্থিতির হিসাব থাকে। ৩০ মার্চ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য বলছে, সারা দেশে ১২০টি সরকারি ও বেসরকারি কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন লাইন আছে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার আছে ২৯ হাজার ৫৬৩টি। এ ছাড়া আছে হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা ২ হাজার ৪৮টি ও অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ২ হাজার ৪৭৭টি। অক্সিজেন নিয়ে মানুষের এখন আর অভিযোগ নেই।

২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয়। এর পর থেকে জীবন রক্ষায় কৃত্রিম অক্সিজেন কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, তা করোনা মহামারি শিখিয়েছে।

‘অক্সিজেনে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। মহামারির সময়ে দেশে যেসব অক্সিজেন স্থাপনা তৈরি হয়েছে ও সরবরাহব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তা ধরে রাখতে হবে ও সচল রাখতে হবে। পাশাপাশি আরও স্থাপনা গড়ে তুলতে হবে যেন যেকোনো পরিস্থিতিতে মেডিকেল অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়।
মুশতাক হোসেন, সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা

ওষুধের মতোই অক্সিজেন গুরুত্বপূর্ণ। বহু রোগীর ক্ষেত্রে একমাত্র অক্সিজেনই জীবন রক্ষার উপায় হয়ে দাঁড়ায়। করোনায় আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে অক্সিজেন-সংকটের কথা গণমাধ্যমে প্রকাশ পেতে থাকে। ঠিক সময়ে অক্সিজেন না পাওয়ায় মানুষের মৃত্যুও হয়েছে। মহামারি দেখিয়েছে, হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ ও ওষুধ সরবরাহ সমার্থক।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আভাস দিয়েছে, বিশ্বে করোনা মহামারি পরিস্থিতির অবসান ঘটেছে এমন ঘোষণা তারা এপ্রিল মাসেই দিতে পারে। তবে মহামারির থেকে নেওয়া কিছু শিক্ষা যেন চিরস্থায়ী হয়, তার উদ্যোগও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আছে। এর মধ্যে আছে মেডিকেল অক্সিজেনের বিষয়টি। ৩ ফেব্রুয়ারি সংস্থার নির্বাহী পরিষদ মেডিকেল অক্সিজেন বিষয়ে একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ বছরের মে মাসে সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অনুষ্ঠেয় ৭৬তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে প্রথমবারের মতো মেডিকেল অক্সিজেন বিষয়ে অধিবেশন বসবে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের চেষ্টা করবে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এই উদ্যোগকে বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছেন সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা মুশতাক হোসেন। এই জনস্বাস্থ্যবিদ বলেন, ‘অক্সিজেনে আমাদের স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। মহামারির সময়ে দেশে যেসব অক্সিজেন স্থাপনা তৈরি হয়েছে ও সরবরাহব্যবস্থা গড়ে উঠেছে, তা ধরে রাখতে হবে ও সচল রাখতে হবে। পাশাপাশি আরও স্থাপনা গড়ে তুলতে হবে যেন যেকোনো পরিস্থিতিতে মেডিকেল অক্সিজেনের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হয়।’

সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশে মেডিকেল অক্সিজেনের চাহিদা কত, চাহিদার কত শতাংশ মিটছে, কীভাবে মিটছে, ল্যানসেট কমিশন তা নিরূপণ করবে। পাশাপাশি বাকি চাহিদা মেটানোর জন্য কী করণীয়, তারও সুপারিশ করবে কমিশন।

বাংলাদেশ: কী ছিল, এখন কী আছে

দেশে করোনা শনাক্ত হওয়ার দুই মাস পর ২০২০ সালের ১৪ মে প্রথম পৃষ্ঠায় ‘হাসপাতালে অক্সিজেন ঘাটতি’ শিরোনামে প্রতিবেদন ছাপা হয়। সরকারের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের এক কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, রাজধানীর বাইরে করোনার জন্য নির্ধারিত হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল ৩ হাজার ২০০টি।

আর রাজধানীর নির্ধারিত ১৯টি হাসপাতালে অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল ২ হাজার ৫৮৩টি। অর্থাৎ সারা দেশে ওই সময় করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার ছিল ৫ হাজার ৭৮৩টি। সরকার, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও উন্নয়ন সহযোগীদের গৃহীত পদক্ষেপের কারণে সেই সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯ হাজার ৫৬৩। সরকার শুধু সিলিন্ডারের সংখ্যা বাড়ায়নি, অক্সিজেন সরবরাহের আরও গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ নিয়েছিল।

কোভিড-১৯ মহামারির সময় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে মেডিকেল অক্সিজেন ব্যবহারবিষয়ক একটি মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনা মহামারি শুরুর আগে বাংলাদেশে দৈনিক ৫০ থেকে ৭০ মেট্রিক টন মেডিকেল অক্সিজেনের প্রয়োজন হতো। মহামারির সময় অক্সিজেনের চাহিদা আড়াই থেকে তিন গুণ বেড়ে যায়। একটি স্বাধীন মূল্যায়ন প্রতিবেদনের উদ্ধৃতি দিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, মহামারির দ্বিতীয় ঢেউয়ের সময় বাংলাদেশে দৈনিক ৬০০ মেট্রিক টন মেডিকেল অক্সিজেনের প্রয়োজন দেখা দিয়েছিল।

তরলীকৃত মেডিকেল অক্সিজেনের মাধ্যমে দেশের হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেনের প্রয়োজন মিটত। চাহিদার এক-পঞ্চমাংশ অক্সিজেন আসত ভারত থেকে। একসময় সেই অক্সিজেন আসা বন্ধ হয়ে যায়। ২০২১ সালের জুলাই মাসে দেশে অক্সিজেনের চাহিদা কয়েক গুণ বেড়ে যায়। সরকার অক্সিজেন প্রস্তুতকারী ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেনের পরিবর্তে মেডিকেল অক্সিজেন উৎপাদন করে তা হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সরবরাহ করতে বলে। এ ছাড়া বিদেশ থেকে অক্সিজেন আমদানি করার শর্ত সহজ করা হয়।

অক্সিজেনের এই জরুরি প্রয়োজনের কথা ভুলে থাকলে চলবে না।

অন্যদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ২০২১ সালের অক্টোবরে যুক্তরাষ্ট্রের দাতা সংস্থা ইউএসএআইডি, আন্তর্জাতিক এনজিও সেভ দ্য চিলড্রেন এবং চিকিৎসকদের সংগঠন বাংলাদেশ সোসাইটি অব মেডিসিনের সহায়তায় অক্সিজেন সরবরাহ ও এর যৌক্তিক ব্যবহার নিয়ে একটি নির্দেশিকা তৈরি করে। পাশাপাশি অক্সিজেন ব্যবহার নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

সরকারের পাশাপাশি নাগরিকদের কিছু উদ্ভাবন অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে অবদান রাখে। যেমন অক্সিজেন–স্বল্পতায় ভোগা রোগীদের চিকিৎসায় বিজ্ঞানীরা ‘অক্সিজেট’ নামের একটি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছিলেন। এটি ব্যবহারে বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় না। সংযোগ নামের একটি উদ্যোগ বাড়ি বাড়ি অক্সিজেন পৌঁছে দেয়।

এ ধরনের বহুপক্ষীয় সহযোগিতার ফলে সরকার অক্সিজেনসংকট কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়। মেডিকেল অক্সিজেন উৎপাদন, সরবরাহ ও ব্যবহার বৃদ্ধির উদ্যোগ বিশ্বের বহু দেশে দেখা গেছে। এ থেকে শিক্ষা হচ্ছে এই যে মেডিকেল অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে বহু ধরনের অক্সিজেন উৎসের প্রয়োজন।

বৈশ্বিক উদ্যোগ কী আছে

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, করোনার প্রকোপ কমে এলেও বা করোনা মহামারি শেষ হয়ে গেলেও মেডিকেল অক্সিজেনের প্রয়োজনীয়তা শেষ হয়ে যাবে না। আফ্রিকার দেশ উগান্ডা আসন্ন মে মাসের বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে তোলার জন্য মেডিকেল অক্সিজেন বিষয়ে একটি খসড়া প্রস্তাব তৈরি করেছে। এতে বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২৭টি দেশ, কেনিয়া, তুরস্কের সমর্থন আছে।

খসড়া প্রস্তাবটি নিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্বাহী পরিষদের সভায় আলোচনা হয়েছে। প্রস্তাবে পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে: প্রতিটি দেশের প্রাপ্তবয়স্ক ও শিশুদের অত্যাবশ্যকীয় ওষুধ ও সরঞ্জামের তালিকায় অক্সিজেন ও অক্সিজেন সরঞ্জাম অন্তর্ভুক্ত করার নিশ্চয়তা, জাতীয় মেডিকেল অক্সিজেন পরিকল্পনা তৈরি, অক্সিজেনের ব্যবহার ও ঘাটতি মূল্যায়ন ও পর্যবেক্ষণ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ অক্সিজেনবিষয়ক নির্দেশনার আলোকে জাতীয় ওষুধ তালিকার হালনাগাদকরণ এবং জীবন রক্ষাকারী মেডিকেল অক্সিজেন বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি করা।

গবেষকদেরও একটি বৈশ্বিক উদ্যোগ আছে। এই উদ্যোগের নেতৃত্বে আছে চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ ও মেডিকেল অক্সিজেন নিয়ে কাজ করা বৈশ্বিক সংগঠন এভরি ব্রেথ কাউন্টস। ল্যানসেট বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ২০ জন বিজ্ঞানীকে নিয়ে একটি কমিশন গঠন করেছে। এর একজন সদস্য আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) মাতৃ ও শিশু স্বাস্থ্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ পরিচালক শামস-এল-আরেফিন। কমিশনকে সহায়তা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞ নিয়ে একটি উপদেষ্টা কমিটি তৈরি করা হয়েছে। তার সদস্য আইসিডিডিআরবির নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ।

পুরো কাজ করার জন্য পাঁচ সদস্যের একটি নির্বাহী কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে আছেন ল্যানসেট গ্লোবাল হেলথ-এর এডিটর ইন চিফ, এভরি ব্রেথ কাউন্টসের চেয়ারম্যান, উগান্ডা ও অস্ট্রেলিয়ার একজন করে প্রতিনিধি। আর আছেন আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানূর রহমান।

স্বাস্থ্য নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে ল্যানসেট কমিশন অনেক গুরুত্ব বহন করে। কমিশনের সুপারিশ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ বিশ্বের বড় বড় প্রতিষ্ঠান গুরুত্বের সঙ্গে মেনে চলার চেষ্টা করে। ল্যানসেটের কোনো কমিশনে এই প্রথমবারের মতো কোনো বাংলাদেশি বিজ্ঞানীরা যুক্ত হতে পারলেন।

আহমেদ এহসানূর রহমান বলেন, সারা বিশ্বের প্রতিটি দেশে মেডিকেল অক্সিজেনের চাহিদা কত, চাহিদার কত শতাংশ মিটছে, কীভাবে মিটছে, ল্যানসেট কমিশন তা নিরূপণ করবে। পাশাপাশি বাকি চাহিদা মেটানোর জন্য কী করণীয়, তারও সুপারিশ করবে কমিশন। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে কমিশন বৈশ্বিক প্রতিবেদন প্রকাশ করবে।

অক্সিজেন কেন প্রয়োজন

মানুষ শ্বাসের মাধ্যমে বাতাস থেকে অক্সিজেন নেয়। বাতাসে ৭৮ শতাংশ নাইট্রোজেন থাকে, অক্সিজেন থাকে ২০ শতাংশ। বাকি ২ শতাংশ থাকে অন্যান্য গ্যাস ও ধূলিকণা।

বাতাসে অক্সিজেন কমে গেলে শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। আবার ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাতাস থেকে প্রয়োজনমতো অক্সিজেন নেওয়া যায় না। নিউমোনিয়া রোগী বা করোনার রোগীর ফুসফুস আক্রান্ত থাকে বলে তারা প্রয়োজনমতো অক্সিজেন নিতে পারে না। তখন কৃত্রিমভাবে অক্সিজেন দেওয়ার দরকার হয়।

যন্ত্রের সাহায্যে বাতাস থেকে অক্সিজেন পৃথক করা যায়। কিছু শিল্পে অক্সিজেন দরকার হয়, তাকে বলা হয় ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন। ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন পরিশোধনের মাধ্যমে মেডিকেল অক্সিজেন তৈরি হয়। মহামারির সময় কাজটি করা হয়েছিল। যেসব প্রতিষ্ঠান ইন্ডাস্ট্রিয়াল অক্সিজেন উৎপাদন করে, তারাই হাসপাতালে মেডিকেল অক্সিজেন সরবরাহ করেছিল।

রক্তে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়াকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় হাইপোক্সেমিয়া। হাইপোক্সেমিয়া মৃত্যুরও কারণ হতে পারে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, পাঁচ বছরের কম বয়সী নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে ১৩ শতাংশের অক্সিজেন–স্বল্পতা বা হাইপোক্সেমিয়া দেখা দেয়। তীব্র নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের ৮০ থেকে ১০০ শতাংশেরই একটি পর্যায়ে হাইপোক্সেমিয়া দেখা দেয়। এদের জন্য মেডিকেল অক্সিজেন দরকার হয়।

শুধু শিশুদের নয়, প্রাপ্তবয়স্কদেরও মেডিকেল অক্সিজেন দরকার হয়। যেসব বয়স্ক ব্যক্তি শ্বাসতন্ত্রের দীর্ঘস্থায়ী রোগে ভোগেন, যাঁদের অ্যাজমা আছে, যাঁরা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হন, তাঁদের মেডিকেল অক্সিজেন দরকার হয়।

করোনা মহামারির প্রবল প্রকোপের সময় হাসপাতালে ভর্তি থাকা ৭০ শতাংশ রোগীরই হাইপোক্সেমিয়া দেখা গেছে। এঁদের প্রত্যেকেরই মেডিকেল অক্সিজেনের দরকার ছিল।

আইসিডিডিআরবির সহযোগী বিজ্ঞানী আহমেদ এহসানূর রহমান বলেন, অক্সিজেনের এই জরুরি প্রয়োজনের কথা ভুলে থাকলে চলবে না।

কী করা দরকার

করোনা মহামারির কারণে মেডিকেল অক্সিজেন সরবরাহ বাড়ানো নিয়ে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়েছে। হাসপাতালগুলোতে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ মাপার জন্য অক্সিমিটার ব্যবহার বেড়েছে। সাধারণ মানুষও অক্সিমিটারের ব্যবহার শিখে নিয়েছেন। বাজারে অক্সিমিটার এখন সহজলভ্য হয়েছে।

তবে করোনা মহামারির মতো জরুরি সময়ের বাইরে বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কী পরিমাণ মেডিকেল অক্সিজেন প্রয়োজন, তার সুনির্দিষ্ট কোনো হিসাব কারও কাছে নেই। মহামারির সময়ে যেসব উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো কী অবস্থায় আছে, তারও সঠিক চিত্র কারও কাছে নেই।

মেডিকেল অক্সিজেনের বিষয়টি দেখভাল বা তদারকির জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সুনির্দিষ্ট কোনো পরিচালক বা দপ্তর নেই। হাসপাতালে রোগীদের জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার বা অক্সিজেন ব্যবহারসামগ্রী সরবরাহের কাজটি করে অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখা। অক্সিজেন সরবরাহের কাজটি করে রোগনিয়ন্ত্রণ শাখা। এদের কারও কাছে অক্সিজেন বিষয়ে কোনো পরিকল্পনা নেই।

এদিকে বাংলাদেশ সরকার পঞ্চম স্বাস্থ্য, জনসংখ্যা ও পুষ্টি খাত কর্মসূচি (এইচপিএনএসপি) প্রণয়নের কাজ প্রায় শেষ করে এনেছে। ২০২৪ সাল থেকে নতুন কর্মসূচি বাস্তবায়ন শুরু হওয়ার কথা।

এই কর্মসূচিতে প্রায় ৩০ বা ৩১টি পৃথক কর্মপরিকল্পনা (অপারেশনাল প্ল্যান) থাকবে, যেগুলো পরবর্তী পাঁচ বছর ধরে বাস্তবায়ন করা হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অক্সিজেন উৎপাদন, অক্সিজেন সরবরাহ, অক্সিজেন ব্যবহারে স্বাস্থ্যকর্মীদের প্রশিক্ষণের মতো বিষয়গুলো কোনো না কোনো কর্মপরিকল্পনায় থাকা দরকার।

কেউ বলেন অক্সিজেন হচ্ছে ওষুধ, কেউ বলেন অক্সিজেন টিকার মতোই গুরুত্বপূর্ণ। জনস্বাস্থ্যবিদ মুশতাক হোসেন বলেন, মেডিকেল অক্সিজেনের গুরুত্বের কথা ভুলে গেলে চলবে না। এর জন্য সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা যেমন থাকতে হবে, তেমনি থাকতে হবে এই খাতে অর্থায়নের নিশ্চয়তা।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.