মণিপুর নিয়ে সংসদ উত্তপ্ত, অধিবেশন পণ্ড

0
115
দিল্লিতে লোকসভার বর্ষাকালীন অধিবেশনে বিরোধী সদস্যরা স্লোগান দিচ্ছেন। আজ ২৪ জুলাই তোলা, ছবি: এএনআই

ভারতের মণিপুর রাজ্যের পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর বিবৃতি ও আলোচনার দাবিতে আজ সোমবারও সংসদের উভয় কক্ষের অধিবেশন বারবার ভন্ডুল হয়েছে। বিরোধীদের সমস্বর দাবি, সভার সব কাজ বন্ধ রেখে মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে হবে। প্রধানমন্ত্রীকে বিবৃতি দিতে হবে। সরকারের বক্তব্য, তারা আলোচনায় রাজি, তবে তা হবে অধ্যক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী।

এই পরস্পরবিরোধী দাবির মধ্যে রাজ্যসভায় আম আদমি পার্টির (আপ) সদস্য সঞ্জয় সিংকে চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় সাময়িক বরখাস্ত করে দেন। চলতি অধিবেশনে তিনি আর সভায় উপস্থিত থাকতে পারবেন না। প্রতিবাদে বিরোধীরাও চেয়ারম্যানের ডাকা বৈঠক বর্জন করেন। বর্জন করেন সভার আলোচ্যসূচি নির্ধারণ কমিটির বৈঠকও।

আজ সোমবার সংসদীয় অধিবেশন শুরুর আগে বিরোধী জোট ‘ইন্ডিয়া’র পক্ষ থেকে সংসদ ভবনের বাইরে মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে বিক্ষোভ করা হয়। বিরোধীদের দাবি, মণিপুর নিয়ে যে কথা প্রধানমন্ত্রী সংসদের বাইরে বলেছেন, সংসদের ভেতরে তা তিনি বলুন।

বিরোধীদের পাল্টা হিসেবে বিক্ষোভ দেখান বিজেপির সাংসদেরাও। তাঁরা ক্ষোভ দেখান বিরোধীশাসিত রাজস্থান, ছত্তিশগড়, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, ঝাড়খন্ডসহ বিভিন্ন রাজ্যে নারী নির্যাতনের ঘটনার বিরুদ্ধে। দুই পক্ষের হাতেই ছিল বিভিন্ন পোস্টার।

শাসক দল বিজেপির এটা নতুন কৌশল। মণিপুর থেকে দৃষ্টি ঘোরানো তাদের উদ্দেশ্য। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই এই কৌশলের জন্ম দেন। সংসদ শুরুর দিন মণিপুর নিয়ে মৌনতা ভেঙে তিনি বলেছিলেন, দুঃখ–কষ্টে তাঁর হৃদয় বিদীর্ণ। কিন্তু শুধু মণিপুরে আবদ্ধ থেকে নয়, নারী নির্যাতনের ঘটনায় রাজস্থান–ছত্তিশগড়ের মতো বিরোধীশাসিত রাজ্যের নাম উল্লেখ করে তিনি বিষয়টিতে রাজনীতির অন্য রং লাগিয়েছিলেন। সংসদে শাসক দলও সেই প্রসঙ্গ তুলে বিরোধীদের মোকাবিলায় ব্যস্ত।

শাসক দলের দাবি, সরকার আলোচনায় প্রস্তুত, বিরোধীরা রাজি নয়। লোকসভার স্পিকার ও রাজ্যসভার চেয়ারম্যানও বারবার বলছেন সরকার আলোচনায় প্রস্তুত। কিন্তু বিরোধীরা তাতে কর্ণপাত করছে না। আজ সোমবার লোকসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও রাজ্যসভায় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং দুজনই বলেন, সরকার আলোচনায় প্রস্তুত। তাঁদের অভিযোগ, বিরোধীরাই আলোচনা চাইছেন না।

সরকার ও বিরোধীরা দুই পক্ষই আলোচনা চায়। কিন্তু তাতে গুণগত পার্থক্য আছে। বিরোধীরা চায় লোকসভা ও রাজ্যসভা দুই কক্ষেই মুলতবি প্রস্তাবের ওপর আলোচনা হোক। এই প্রস্তাব গৃহীত হলে সভার অন্য সব কাজ বন্ধ থাকবে। একমাত্র ওই প্রস্তাব নিয়েই সভাকে আলোচনা করতে হবে। মুলতবি প্রস্তাবে সরকারকে তিরস্কার করা যায়। বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের ব্যাখ্যা চাওয়া যায়। সরকারও জবাবদিহিতে বাধ্য থাকে।

কিন্তু সরকার মুলতবি প্রস্তাবের ওপর আলোচনা চায় না। তারা চায় স্বল্প মেয়াদের আলোচনা। এ ধরনের আলোচনায় সরকারের কোনো দায়বদ্ধতা থাকে না। বিরোধীরা সরকারি জবাবের ওপর পাল্টা প্রশ্ন করতে বা ব্যাখ্যা চাইতে পারেন না। দুই বা আড়াই ঘণ্টার মধ্যে আলোচনা শেষ হয়ে যায়। সরকারকে তিরস্কার করার সুযোগও ওই প্রস্তাবে থাকে না।

মুলতবি প্রস্তাবের ওপর আলোচনা ছাড়াও বিরোধীরা চাইছে প্রধানমন্ত্রীকে বক্তব্য পেশে বাধ্য করতে। মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী সংসদে কিছু বললে বিরোধীরা তাঁকে প্রশ্ন করতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী জবাব দিতে বাধ্য। কিন্তু ঘটনা হলো গত ৯ বছরে প্রধানমন্ত্রী একবারের জন্যও তাঁকে প্রশ্ন করার সুযোগ কাউকে দেননি। তিনি তাঁর মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত কোনো প্রশ্নের জবাবও দেননি। মণিপুর নিয়েও সংসদে তিনি কোনো রকম জবাবদিহিতে যেতে চান না।

এই অধিবেশনে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিল সরকার পাস করাতে চায়। এগুলোর একটি দিল্লির আমলাশাহির নিয়ন্ত্রণসংক্রান্ত। অর্ডিন্যান্স এনে দিল্লির নির্বাচিত সরকারের যে ক্ষমতা কেন্দ্র নিজের হাতে নিয়েছে, সরকার তা আইনে পরিণত করতে চায়। সিদ্ধান্তটি সুপ্রিম কোর্টের বিচারাধীন। যদিও সুপ্রিম কোর্ট তার ওপর কোনো স্থগিতাদেশ দেননি।

রাজ্যসভায় বিলটি পাস করাতে জেডিএস, ওয়াইএসআর কংগ্রেসের মতো বিরোধীদের সহায়তা প্রয়োজন। সোমবার আপের সঞ্জয় সিংকে ‘সাময়িক বরখাস্ত’ করা সরকারের সেই লক্ষপূরণের একটা কৌশল বলে আপ মনে করছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.