ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনে ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলেছেন সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের তিন প্রার্থী। বৃহস্পতিবার ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ এনে নির্বাচন আপিল বোর্ডের কাছে আবার ভোট গণনার জন্য আপিল করেছেন তারা।
অভিযোগকারী তিন প্রার্থী হলেন, বাংলাদেশ সোলার অ্যান্ড রিনিউয়েবল এনার্জি অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিনিধি মোস্তফা আল মাহমুদ, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথিক মেডিসিন প্রস্তুতকারক সমিতির প্রতিনিধি মো. মাহবুব হাফিজ ও বাংলাদেশ মিষ্টি উৎপাদক সমিতির প্রতিনিধি মো. মারুফ আহমেদ।
অবশ্য এফবিসিসিআই এরই মধ্যে বুধবার মনোনীত ও বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত পরিচালকদের মধ্য থেকে সমঝোতার মাধ্যমে সভাপতি, সিনিয়র সহসভাপতি ও সহসভাপতি নির্বাচন সম্পন্ন করেছে। ১৮ আগস্ট নতুন পরিষদের দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু পর্ষদ গঠনের এক দিনের মাথায় ভোট আবার গণনার দাবি উঠলো।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে সোমবার এফবিসিসিআইয়ের ২০২৩-২৫ মেয়াদের পরিচালনা পর্ষদের একাংশ, অর্থাৎ খাতভিত্তিক সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন গ্রুপের ২৩ পরিচালক পদে নির্বাচন হয়। ভোট গণনা শেষে সোমবার রাত সাড়ে তিনটায় ফল প্রকাশ করে নির্বাচন বোর্ড। ২৩ পদের মধ্যে ১৫টিতে জয়ী হন সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ প্রার্থীরা। এ প্যানেলের নেতৃত্বে ছিলেন মীর নিজাম উদ্দিন আহমেদ। অবশ্য ছায়াশক্তি হিসেবে এর মূল নেতৃত্বে ছিলেন এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
অন্যদিকে সরকার সমর্থিত প্রভাবশালী প্যানেল হিসেবে পরিচিত ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রার্থীদের মধ্য থেকে জয়ী হয়েছেন ৮ জন। এর নেতৃত্বে ছিলেন নতুন নির্বাচিত সভাপতি মাহবুবুল আলম।
এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচন বোর্ডের প্রকাশিত ফল অনুযায়ী, ভোট পুনর্গণনায় আপিল করা মো. মোস্তফা আল মাহমুদ পেয়েছেন ভোট ৮০৫ ভোট। নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী ৪৯ প্রার্থীর মধ্যে তাঁর অবস্থান ছিল ২৪তম। মোস্তফা আল মাহমুদের চেয়ে মাত্র ৮ ভোট বেশি পেয়ে ২৩তম পরিচালক পদে বিজয়ী হয়েছেন ব্যবসায়ী ঐক্য পরিষদের প্রার্থী হাফেজ হারুনুর রশিদ। তিনি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির প্রতিনিধি হয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। ভোট পুনর্গণনার আপিল করা অন্য দুই প্রার্থীর মধ্যে মো. মাহবুব হাফিজ ৭৯৯ ও মো. মারুফ আহমেদ ৭৭৫ ভোট পেয়েছিলেন। তাঁদের অবস্থান যথাক্রমে ২৫ ও ২৬তম।
আপিল আবেদনে পরিচালক পদপ্রার্থী মোস্তফা আল মাহমুদ ১৬তম বিজয়ী শমী কায়সার, ২৩তম বিজয়ী হারুনুর রশীদ ও ২৪তম বিজয়ী (আপিল আবেদনকারী) প্রার্থীর ভোট পুনর্গণনার দাবি করেন।
ভোট পুনর্গণনার জন্য আপিল করা অন্য দুই প্রার্থী মো. মাহবুব হাফিজ ও মো. মারুফ আহমেদের আবেদনের অভিযোগ প্রায় একই রকম। তাঁরাও অভিযোগ করে বলেছেন, গভীর রাতে ভোট গণনার সময় কৌশলে কয়েকটি টেবিলে তাঁদের নামে ভোটের জায়গায় অন্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বিষয়টি নজরে এলে তারা মৌখিক প্রতিবাদ করেন। কিন্তু তাতে কেউ গ্রাহ্য করেননি বরং তাড়াহুড়া করে গণনা শেষ করে ফল ঘোষণা করা হয়।
এদিকে আপিল বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, তারা ভোট আবার গণনার জন্য আপিল পেয়েছেন। পরে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
তিন প্রার্থীর আপিলের ব্যাপারে জানতে চাইলে নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান এ মতিন চৌধুরী শুক্রবার সমকালকে বলেন, প্রার্থীদের উপস্থিতিতেই ভোট গণনা করা হয়েছে। ২৩ ও ২৪তম বিজয়ী প্রার্থীর ব্যবধান ৮ ভোট হওয়ার পর এই দুই প্রার্থীর ভোট পুনরায় গণনা করা হয়। এতে উভয় প্রার্থী সন্তুষ্ট হন। আর সেজন্য ওইদিন রাতে ভোটের ফল ঘোষণা করতে আধাঘণ্টা দেরি হয়েছিল।
ভোট গণনা প্রক্রিয়ায় কোনো ত্রুটি তাঁর নজরে পড়েনি মন্তব্য করে তিনি বলেন, নির্বাচন বোর্ড সবার অংশগ্রহণে নিরপেক্ষ ও সুন্দর নির্বাচন করার চেষ্টা করেছে। সবাই যাতে নির্বাচনে সন্তুষ্ট থাকেন সেই বিষয়গুলোও নিশ্চিত করা হয়েছে। এরপরও কোনো প্রার্থীর সন্দেহ থাকলে ভোট পুনর্গণনার সুযোগ আছে। এ ধরনের দাবি তারা করতে পারে। ব্যালট পেপারগুলোও আছে।
তবে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন আপিল বোর্ডের চেয়ারম্যান। তারা যে সিদ্ধান্ত নেবেন সেটাই চূড়ান্ত হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন বোর্ডের চেয়ারম্যান।
এফবিসিসিআইয়ের নির্বাচনের তফসিল অনুযায়ী, শুক্রবার পর্যন্ত ভোটের ফল নিয়ে আপিল করার সুযোগ আছে। এ বিষয়ে আপিল বোর্ড সোমবারের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেবে। তারপর নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল প্রকাশিত হবে মঙ্গলবার।
যদিও ইতিমধ্যে এফবিসিসিআইয়ের মূল নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়ে গেছে। বুধবার বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মাহবুবুল আলম এফবিসিসিআইয়ের নতুন সভাপতি, মো. আমিন হেলালী জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এবং খায়রুল হুদা, মোহাম্মদ আনোয়ার সাদাত সরকার, যশোদা জীবন দেবনাথ, শমী কায়সার, রাশেদুল হোসেন চৌধুরী ও মুনির হোসেন-এই ছয়জন সহসভাপতি নির্বাচিত হন।