ভারী বর্ষণে পেকুয়ার ভাঙা বেড়িবাঁধ দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে, বন্যার শঙ্কা

0
166
ছড়ার পাড় উপচে পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকছে লোকালয়ে। রোববার বিকেলে পেকুয়ার টৈটং ইউনিয়নের মাঝিরপাড়া এলাকায়

টানা ভারী বর্ষণে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামা এলাকার ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে লোকালয়ে পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকছে। এতে আবার পেকুয়ায় বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন এলাকার বসতঘর ছুঁই ছুঁই করছে পাহাড়ি ঢলের পানি।

আজ রোববার বিকেল চারটার দিকে পেকুয়া সদর ইউনিয়নের পূর্ব মেহেরনামা এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলের পানি ঢুকছে। এতে ফসলি জমির বীজতলা ও আমনের খেত ডুবে গেছে। কয়েকটি এলাকায় মানুষের বাড়ির উঠানে পানি উঠে গেছে। কিছু কিছু বসতঘরের মেঝে ছুঁই ছুঁই করছে পানি।

পেকুয়া সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সদস্য শাহেদুল ইসলাম বলেন, টানা ভারী বর্ষণের ফলে ভাঙা বেড়িবাঁধ দিয়ে আজ সকাল ১০টা থেকে পানি ঢুকছে লোকালয়ে। আমনের বীজতলা ও খেত তলিয়ে গেছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে রাতেই বসতঘরে পানি ঢুকবে। তিনি বলেন, বালুর বস্তা ও গাছ-বাঁশ দিয়ে ঢলের পানি আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু স্রোত বেশি থাকায় পানি আটকানো সম্ভব হয়নি।

মেহেরনামার খাসপাড়ার বাসিন্দা জাকির হোসেন (৫৫) বলেন, ভাঙা বেড়িবাঁধ মেরামত না করায় পেকুয়া সদরের মানুষ দুশ্চিন্তায় আছেন। সবার মনে আবার প্লাবনের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

আজ দুপুরের দিকে পেকুয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) পূর্বিতা চাকমা বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ পরিদর্শন করেছেন। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পূর্ব মেহেরনামার বেড়িবাঁধের তিনটি ভাঙা অংশের মধ্যে ৮০ মিটারের অংশটিতে কাজ চলমান। সেখানে অন্তত দেড় শতাধিক গাছ পোঁতা হয়েছে। বৃষ্টির কারণে বালু তুলতে না পারায় টিউব ব্যাগ ভরার সুযোগ হয়নি। বৃষ্টি কমলে টিউব ব্যাগ ফেলা হবে।

পেকুয়া উপজেলার ১৩৪ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বান্দরবান পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন। বান্দরবানের নির্বাহী প্রকৌশলী অরূপ চক্রবর্তী বলেন, আগস্টের শুরুতে বন্যায় মেহেরনামা এলাকার তিনটি স্থানে বাঁধ ভেঙে যায়। বর্তমানে তিনটি স্থানে ২১০ মিটার, ৪০ মিটার ও ৮০ মিটার করে বেড়িবাঁধ ভাঙা। জরুরি ভিত্তিতে সেখানে কাজ চলমান। পর্যাপ্ত সময়ের অভাবে টিউব ব্যাগে বালু ভরতে না পারায় ভাঙা অংশ দিয়ে আজ সকাল থেকে আবার ঢলের পানি ঢুকছে।

বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। রোববার বিকেলে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার পূর্ব মেহেরনামা এলাকায়
বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকছে। রোববার বিকেলে কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার পূর্ব মেহেরনামা এলাকায়, ছবি: সংগৃহীত

পেকুয়া সদরের বেড়িবাঁধ ছাড়াও টৈটং ইউনিয়নের মাঝেরপাড়া এলাকায় আজ দুপুর থেকে ঢলের পানি ছড়ার পাড় উপচে লোকালয়ে ঢুকছে। টৈটং ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সাহাবউদ্দিন বলেন, গত বন্যায় রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় ছড়ার পানি সহজে লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। এতে মানুষের বসতবাড়ি প্লাবিত হচ্ছে। বিস্তীর্ণ আমন খেত তলিয়ে গেছে।

ইউএনও পূর্বিতা চাকমা বলেন, ‘আমি যখন দুপুরে বেড়িবাঁধ পরিদর্শনে যাই, তখনই বেড়িবাঁধে যে মাটি ফেলা হয়েছে, সবই ভেসে গেছে। এখন ঢলের কারণে সেখানে কাজ করা সম্ভব নয়। কাল-পরশু বৃষ্টি না হলে সেখানে কাজ করা হবে।’ কয়েক দিনের মধ্যে বেড়িবাঁধের ভাঙা অংশ মেরামত করা সম্ভব বলে তিনি জানান।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.