ভারত চাল রপ্তানি বন্ধ করলেও ‘সমস্যা’ নেই

0
92
চাল

অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে দুই লাখ টন চাল সংগ্রহ বাড়ানো হবে। বুলগেরিয়া–রোমানিয়া থেকে গম আনার চেষ্টা।

গমের পর এবার বিশ্ববাজারে চাল নিয়ে নতুন সংকট দেখা দিয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক দেশ ভারত বিশ্ববাজারে চাল রপ্তানিতেও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলাদেশের কম দামে আমিষযুক্ত গমের সবচেয়ে বড় উৎস ইউক্রেন থেকে ওই খাদ্যপণ্য আমদানি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। খাদ্যশস্য রপ্তানি নিয়ে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যে সমঝোতা ছিল, তা নবায়ন না হওয়ায় ওই সংকট তৈরি হয়েছে।

তবে সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয় ও বড় আমদানিকারকেরা আপাতত চাল নিয়ে কোনো সমস্যা দেখছেন না। সরকারি গুদামে প্রায় ২০ লাখ টন চাল–গম মজুত আছে। আর বেসরকারিভাবেও এবার খুব বেশি চাল আমদানির দরকার হবে না। সরকারিভাবে পাঁচ লাখ টন চাল ও সাত লাখ টন গম কেনার পরিকল্পনা হয়েছিল। কিন্তু দেশে চালের উৎপাদন ভালো হওয়ায় আমদানির লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে দুই লাখ টনে নামিয়ে আনা হয়েছে। তা–ও জরুরি দরকার হলে তা করা হবে। আর গমের ক্ষেত্রেও পরিমাণ কমিয়ে পাঁচ লাখ টনে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দেশে এবার চালের উৎপাদন যথেষ্ট ভালো হয়েছে। আমি নিজে এ বছর ৭০ হাজার টন চাল ভারত থেকে আমদানি করেছি। তা এখনো বিক্রি করা যাচ্ছে না। ফলে এবার ভারত থেকে চাল আমদানি না করলেও আমাদের তেমন সমস্যা হবে না।

চাল আমদানিকারক চিত্ত মজুমদার

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘এবার আমাদের বোরোতে উৎপাদন ভালো হয়েছে। আশা করি, আমনেও ভালো ফলন হবে। ফলে দেশে যা চাল আছে, তা দিয়ে আমাদের সারা বছরের চাহিদা মিটবে। যে কারণে ভারত চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হবে না। আর গমের ক্ষেত্রে আমরা রাশিয়া ও ইউক্রেনের বাইরে বিকল্প বাজার নিয়ে কাজ করছি। আর ওই দুই দেশ থেকেও কীভাবে আমদানি অব্যাহত রাখা যায়, সেই চেষ্টাও করছি।’

ভারত চাল রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দিলেও বাংলাদেশের কোনো সমস্যা হবে না। আর গমের ক্ষেত্রে আমরা রাশিয়া ও ইউক্রেনের বাইরে বিকল্প বাজার নিয়ে কাজ করছি।

মো. ইসমাইল হোসেন, সচিব, খাদ্য মন্ত্রণালয়

খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদেশ থেকে চাল আমদানির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে এবার দেশের ভেতর থেকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হচ্ছে। এ বছর চাল ও ধান মিলিয়ে মোট ১২ লাখ ৫০ হাজার টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছিল। আগামী ৩০ আগস্ট পর্যন্ত তা কেনা হবে। এরই মধ্যে ৯ লাখ টনের ওপরে সংগ্রহ হয়েছে। বাকি চাল আগামী মাসের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে সংগ্রহের পর আরও দুই লাখ টন অতিরিক্ত চাল কেনার পরিকল্পনা নিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। আর বুলগেরিয়া, বেলারুশ, রোমানিয়াসহ আরও কয়েকটি দেশ থেকে গম আনার ব্যাপারে আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে এক লাখ টন গম আমদানির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জুলাই মাসের শুরুতে প্রকাশ করা খাদ্য পরিস্থিতির প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছিল, ভারতে আবহাওয়াগত কারণে চালের উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে দেশটিতে চালের দাম বাড়ছে। গত এক মাসে দেশের অভ্যন্তরে খুচরা বাজারে চালের দাম ৩ শতাংশ বেড়েছে।

গত বৃহস্পতিবার ভারত সরকারের জারি করা একটি পরিপত্রে বাসমতী ছাড়া অন্য সব ধরনের চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। এ জন্য বর্ষা মৌসুমে ভারী বৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় বিষয়টিকে সামনে এনেছে দেশটির সরকার। ভারতের এ সিদ্ধান্তের কারণে নতুন করে বিশ্বব্যাপী খাদ্যের মূল্যস্ফীতি বাড়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবর প্রকাশ করেছে।

বাংলাদেশ সরকারের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জুলাই মাসের শুরুতে প্রকাশ করা খাদ্য পরিস্থিতির প্রতিবেদনে অবশ্য বলা হয়েছিল, ভারতে আবহাওয়াগত কারণে চালের উৎপাদন কম হয়েছে। ফলে দেশটিতে চালের দাম বাড়ছে। গত এক মাসে দেশের অভ্যন্তরে খুচরা বাজারে চালের দাম ৩ শতাংশ বেড়েছে।

বিশ্ববাজারে চাল রপ্তানির ৪০ শতাংশের বেশি করে ভারত। তারা চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর অন্য কোনো দেশ থেকে সরবরাহ কমলেই খাদ্যের মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে, যা কিনা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এমনিতেই বেশি রয়েছে।

ভারতের খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, চাল রপ্তানি বন্ধের এ সিদ্ধান্ত ২০ জুলাই থেকে কার্যকর হবে। তবে রপ্তানির উদ্দেশ্যে যেসব প্রক্রিয়া চলমান, তা ৩১ আগস্টের মধ্যে সম্পন্ন করা যাবে। এ ছাড়া কোনো দেশের সরকার যদি তাদের খাদ্যনিরাপত্তার জন্য চাল রপ্তানির অনুরোধ করে, তাহলে ভারত সরকার বিশেষভাবে অনুমতি দিতে পারবে।

বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ চাল আমদানিকারক চিত্ত মজুমদার বলেন, ‘দেশে এবার চালের উৎপাদন যথেষ্ট ভালো হয়েছে। আমি নিজে এ বছর ৭০ হাজার টন চাল ভারত থেকে আমদানি করেছি। তা এখনো বিক্রি করা যাচ্ছে না। ফলে এবার ভারত থেকে চাল আমদানি না করলেও আমাদের তেমন সমস্যা হবে না।’

বিশ্ববাজারে চাল রপ্তানির ৪০ শতাংশের বেশি করে ভারত। তারা চাল রপ্তানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পর অন্য কোনো দেশ থেকে সরবরাহ কমলেই খাদ্যের মূল্যস্ফীতিকে উসকে দেবে, যা কিনা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে এমনিতেই বেশি রয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.