ভারত-কানাডা দ্বন্দ্বে বিপাকে যুক্তরাষ্ট্র

0
98

একদিকে প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠ মিত্র কানাডা, অন্যদিকে কৌশলগত বন্ধু ভারত– কোন দিকে যাবে যুক্তরাষ্ট্র? তারা কি কানাডাকে সমর্থন করবে নাকি ভারতের নিন্দা জানাবে? নাকি নয়াদিল্লির পাশে থাকবে?

শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা হারদিপ সিং নিজ্জার হত্যার জেরে ভারত ও কানাডার মধ্যে চলমান দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে এ রকম নানা প্রশ্ন সামনে আসছে। চলমান ঘটনাপ্রবাহের মধ্যে শ্যাম রাখি না কুল রাখি দশায় পড়েছে যুক্তরাষ্ট্র।

নিজ্জার হত্যার জেরে কানাডায় ভারতীয়দের ভ্রমণে সতর্কতা জারি করেছে নয়াদিল্লি। এনডিটিভি জানায়, দুই দেশের মধ্যে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষাপটে পাঞ্জাব বংশোদ্ভূত জনপ্রিয় শিখ র‌্যাপার শুভনিৎ সিংয়ের ভারত সফর বাতিল হয়েছে।

গত সোমবার পার্লামেন্টে দেওয়া ভাষণে নিষিদ্ধ ঘোষিত খালিস্তান টাইগার ফোর্সের নেতা নিজ্জার হত্যায় ভারতীয় এজেন্ট জড়িত বলে অভিযোগ করেন কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। যুক্তরাষ্ট্র এটাকে ‘গুরুতর অভিযোগ’ বলে মন্তব্য করেছে।  মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র জন কিরবি বলেন, তারা নিজ্জার হত্যার তদন্তে সহায়তার জন্য ভারতের প্রতি জোর আহ্বান জানিয়েছেন। ভারত বরাবরই এ হত্যায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে।

সিএনএনকে কিরবি বলেন, এ হত্যার তদন্তে

কানাডার প্রচেষ্টাকে তারা সমর্থন করেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তার দুই মিত্র ভারত ও কানাডার  সঙ্গে এ বিষয়ে যোগাযোগ রেখে যাচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ উদ্বেগ জানালেও কেউ নিন্দা জানায়নি। কানাডার দ্য গ্লোব অ্যান্ড মেইল অনলাইনের খবরে বলা হয়, অটোয়ার অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকাশ্যে নয়াদিল্লির নিন্দা জানাতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ কানাডার মিত্র দেশগুলো। চলতি মাসের ৯ ও ১০ তারিখে দিল্লিতে জি২০ সম্মেলন চলাকালে ট্রুডো ও তাঁর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জডি থমাস বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানদের সঙ্গে নিজ্জার হত্যা নিয়ে আলাপ করেন। ট্রুডো দাবি করেন, তাঁর কাছে ‘বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য’ আছে যে হত্যায় ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে। বিষয়টি তিনি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে সরাসরি অবগত করেন। তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অন্য মিত্ররা সরাসরি ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের সমালোচনা করা থেকে বিরত থেকেছে।

নিজ্জার হত্যার ঘটনায় কানাডায় অবস্থানরত শিখ নেতারা দেশটির সরকারের কাছে নিরাপত্তার আবেদন করেছেন। বিশ্ব শিখ সংস্থার বোর্ড সদস্য মুখবীর সিং বলেন, তাদের নেতা নিজ্জারের হত্যাকে কেন্দ্র করে প্রধানমন্ত্রী ট্রুডোর দেওয়া বক্তব্যের পর তারা ‘মর্মাহত’। কিন্তু তারা বিস্মিত নন। কয়েক দশক ধরেই ভারত কানাডায় শিখদের বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি করছে; এখন হত্যাকাণ্ড চালাচ্ছে। তিনি জানান, খুন হওয়ার কয়েক মাস আগে থেকেই নিজ্জার এ ধরনের কিছুর শঙ্কা প্রকাশ করে আসছিলেন।

গত ১৮ জুন কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া প্রদেশের একটি গুরুদুয়ারার বাইরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন খালিস্তানপন্থি শিখ নেতা নিজ্জার। কানাডা এটাকে ‘সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন’ বলে ঘোষণা দিয়েছে। সেইসঙ্গে তারা কানাডা থেকে ভারতের কূটনীতিক পবন কুমার রায়কে বহিষ্কারও করেছে। পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ভারতও কানাডার কূটনীতিক অলিভার সিলভেস্টারকে বহিষ্কার করে। কানাডায় ভারতীয়দের ভ্রমণ সতর্কতা জারির মধ্য দিয়ে তিক্ততা নতুন মাত্রায় পৌঁছাল। এরই মধ্যে দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য আলোচনাও অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়েছে।

উদ্ভূত পরিস্থিতিতে মনে হচ্ছে, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমের মিত্ররা ভারতের সঙ্গে দ্বন্দ্ব এড়িয়ে যেতে চাইবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা কতটা সম্ভব হবে, সেটাই দেখার বিষয়। কারণ, কানাডা শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতার হত্যাকাণ্ডকে ‘সার্বভৌমত্বে’র লঙ্ঘন বলে ঘোষণা দিয়েছে। বিষয়টিকে তারা গুরুত্ব দিয়ে প্রচার চালাচ্ছে এবং ‘আত্মমর্যাদা’র ইস্যুতে পরিণত করেছে।   কানাডা সরকারের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, শিখ নেতা হত্যার ঘটনায় যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে ‘অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে’ কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই কর্মকর্তা বলেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন; তার ভিত্তিতেই সোমবার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনা হয়েছে।

গত জুনে তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান নরেন্দ্র মোদি। সফরকালে তিনি তিনবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে বৈঠক করেন; মার্কিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনেও ভাষণ দেন। তাঁর সম্মানে ছিল প্রেসিডেন্ট ও ফার্স্ট লেডির বিশেষ ডিনার আয়োজন। সমরাস্ত্রসহ বেশ কয়েকটি চুক্তিও করেন। সব মিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্র সাদরেই গ্রহণ করেছিল ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে। পরে বাইডেন যখন দিল্লিতে জি২০ সম্মেলনে দিল্লিতে এলেন, তখন তিনিও একইভাবে অভ্যর্থনা পেয়েছিলেন। বলা বাহুল্য, ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বর্তমানে অন্য যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো পর্যায়ে রয়েছে। কানাডা ও ভারতের বিরোধ তাতে প্রভাব ফেলে কিনা তাই এখন দেখার বিষয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.