ভারতে সহপাঠীদের একে একে মুসলিম শিশুটিকে চড় দিতে নির্দেশ দিলেন শিক্ষিকা

0
107
ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরের নেহা পাবলিক স্কুলের সেই শিক্ষিকা তৃপ্তি তিয়াগি, ছবি: ভিডিও থেকে নেওয়া

শ্রেণিকক্ষের মাঝামাঝি চেয়ার-টেবিল পাতা। বসে রয়েছেন শিক্ষিকা। এক পাশে মেঝেতে শিক্ষার্থীরা বসা, অন্য পাশে এক শিশুশিক্ষার্থী দাঁড়িয়ে। এক এক করে শিশুশিক্ষার্থীরা উঠে আসছে, দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থীকে মারছে। এরপর নিজের জায়গায় গিয়ে বসে পড়ছে। পুরো ঘটনা ঘটছে শিক্ষিকার সামনে, তাঁর তত্ত্বাবধানে। এমনই একটি ভিডিও অনলাইনে ঘুরছে। চলছে আলোচনা, সমালোচনা ও বিতর্ক।

ঘটনাটি ঘটেছে ভারতের উত্তর প্রদেশের মুজাফফরনগরের একটি বেসরকারি বিদ্যালয়ে। জানা গেছে, দাঁড়িয়ে থাকা শিক্ষার্থী মুসলিম সম্প্রদায়ের। শিক্ষিকার চোখে এটাই তার ‘অপরাধ’। তাই অঙ্ক ভুল করায় তিনি ওই শিক্ষার্থীকে সহপাঠীদের দিয়ে মার খাইয়েছেন। অপমান করেছেন। মুসলিমবিদ্বেষী কথা বলেছেন।

মুজাফফরনগরের খুব্বাপুর গ্রামের নেহা পাবলিক স্কুলে এ ঘটনা ঘটেছে গত বৃহস্পতিবার। ওই শিক্ষিকার নাম তৃপ্তি তিয়াগি। তিনি ওই বিদ্যালয়ের মালিক ও প্রধান শিক্ষক। বিদ্যালয়টিতে প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করে। এ ঘটনায় স্থানীয় মনসুরপুর থানার পুলিশ ও শিক্ষা বিভাগ তদন্তে নেমেছে।

অনলাইনে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা যায়, ভুক্তভোগী শিশুটি এক পাশে দাঁড়িয়ে কাঁদছে আর শিক্ষিকা তৃপ্তি অন্য শিশুদের একে একে উঠে এসে ওই শিশুকে চড় মারতে নির্দেশ দিচ্ছেন।

ক্যামেরার পেছনে থাকা একজনের উদ্দেশ্যে তৃপ্তিকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি তো বলেই দিয়েছি, যত মুসলিম বাচ্চা আছে, তোমরা এখান থেকে চলে যাও।’
সহপাঠীকে চড় মারা এক শিক্ষার্থীকে তৃপ্তি বলেন, ‘তুমি এটা কীভাবে মারছ? জোরে মারো।’ এরপর শিক্ষার্থীদের তিনি বলেন, ‘এরপর কে আছ? পরের জন এসে চড় মেরে যাও।’

ওই সময় ভুক্তভোগী শিশুটি দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। আরেক সহপাঠী শিশুটিকে মারার জন্য এগিয়ে এলে শিক্ষিকা তৃপ্তি বলেন, ‘চড় খেয়ে ওর মুখ লাল হয়েছে গেছে। মুখে আর মেরো না। এবার কোমরে মারো।’

এ ঘটনা সম্পর্কে জানতে শিক্ষিকা তৃপ্তি তিয়াগির সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনাটি নিয়ে মুজাফফরনগরের পুলিশ সুপার (শহর) সত্যনারায়ণ প্রজাপত গতকাল শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেন, ‘মনসুরপুর থানার পুলিশ শ্রেণিকক্ষের একটি ভিডিও দেখেছে। সেই ভিডিওতে অঙ্ক না শেখায় এক শিক্ষার্থীকে মারতে সহপাঠীদের নির্দেশ দিতে দেখা গেছে।’

সত্যনারায়ণ প্রজাপত আরও বলেন, ‘ভিডিওতে ওই শিক্ষিকাকে আপত্তিজনক কিছু কথা বলতে দেখা গেছে। তিনি বলেছেন, “মুসলিম মায়েরা শিশুদের পড়াশোনায় মনোযোগ দেন না। তাই শিশুরা সহজে নষ্ট হয়ে যায়।” এ ঘটনা স্থানীয় শিক্ষা কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে। ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

তবে এ ঘটনায় ভুক্তভোগী শিশুর বাবা আইনগত ব্যবস্থা নিতে রাজি হননি। তিনি জানান, শিশুটিকে আর বিদ্যালয়ে পাঠাবেন না। তবে মামলা করার পরিকল্পনা নেই তাঁর। তিনি চান, তাঁর সন্তানের জন্য দেওয়া বেতন ফেরত দেবে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

মুজাফফরনগরের প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শুভম শুক্লা বলেন, তিনি ওই বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদকে একটি চিঠি দিয়ে এ ঘটনায় তাদের প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছেন।

এ ঘটনার সমালোচনা করে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি বার্তা দিয়েছেন। তিনি লিখেছেন, ‘নিরীহ শিশুদের মনেও বৈষম্যের বিষ বপন করা হচ্ছে। বিদ্যালয়ের মতো পবিত্র একটি জায়গাকে ঘৃণার বাজারে পরিণত করা হয়েছে। একজন শিক্ষক দেশের জন্য এর চেয়ে খারাপ আর কিছু করতে পারেন না। ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকার এই একই কেরোসিন ছড়িয়ে দেশের প্রতিটি কোনায় আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

রাহুল গান্ধী আরও লেখেন, ‘শিশুরা ভারতের ভবিষ্যৎ; তাই শিশুদের ভালোবাসার বার্তা শেখাতে হবে, ঘৃণা নয়।’

ঘটনাটি ভারতের জাতীয় শিশু অধিকার সুরক্ষা কমিশনের নজরে এসেছে। এক নোটে সংস্থাটি বলেছে, মুজাফফরনগরের ঘটনাটি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।

কমিশনের চেয়ারপারসন প্রিয়াঙ্কা কানুনগো বলেন, ‘ভিডিওটি অনলাইনে ছড়িয়ে না দিতে এবং ভুক্তভোগী শিশুটির নাম-পরিচয় প্রকাশ না করতে সবার প্রতি অনুরোধ জানাচ্ছি।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.