১২ বছর পর এই প্রথম কোনো পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রতিবেশী দেশ ভারত সফরে গেলেন। সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (এসসিও) পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সম্মেলনে যোগ দিতে দুই দিনের সফরে বৃহস্পতিবার ভারতে গেছেন পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি। বৃহস্পতিবার গোয়ায় এই সম্মেলন শুরু হয়। তবে এই সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. সুব্রামানিয়াম জয়শংকরের সঙ্গে তার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের কোনো কর্মসূচি নেই। যদিও সম্মেলনে জোটের অন্যান্য সদস্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে আগ্রহ প্রকাশ করেন বিলাওয়াল।
আজ ৫ মে শেষ হচ্ছে এই সম্মেলন। এসসিও জোটের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের মূল বৈঠকটি হবে আজ যেখানে আফগানিস্তান আলোচনার একটা বড় অংশ জুড়ে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আয়োজক দেশ ভারতের পক্ষ থেকে ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে, তালেবান শাসনের অধীনে আফগানিস্তান যাতে আরও একবার সন্ত্রাসবাদের আঁতুরঘরে পরিণত না হয় এসসিও জোটের দেশগুলোর যৌথভাবে সেই লক্ষ্যেই কাজ করা দরকার।
ইউরেশীয় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা বিষয়ক এই জোটে আছে ৮ সদস্য দেশ। দেশগুলো হলো- ভারত, পাকিস্তান, চীন, রাশিয়া, কাজাখস্তান, কিরগিজস্তান, তাজিকিস্তান ও উজবেকিস্তান। ভারত বর্তমানে এসসিও’র প্রেসিডেন্ট পদে আছে। গোয়ায় এ জোটের সম্মেলনের জন্য সদস্যদেশগুলোকে জানুয়ারিতেই আমন্ত্রণ পাঠায় ভারত।
দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা নেই
পাকিস্তান সরকার জানিয়েছে, বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির এই সফর পুরোপুরি এসসিও ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে। এর সঙ্গে ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক কোনোভাবে জড়িত নয়। তবু সাম্প্রতিককালে কথিত জঙ্গী অনুপ্রবেশের ইস্যুতে দুই দেশের সম্পর্ক যে রকম তলানিতে এসে ঠেকেছে, সেই পটভূমিতে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সশরীরে ভারতে আসাটাকেই খুব গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে মনে করছেন অনেক পর্যবেক্ষক।
গোয়া যাওয়ার আগে এক টুইটে বিলাওয়াল বলেছিলেন, এসসিও সম্মেলনে যোগ দিতে পাকিস্তানি প্রতিনিধি দল নিয়ে গোয়ায় যাচ্ছি। এসসিও সনদের প্রতি পাকিস্তান কতটা দৃঢ়ভাবে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ- এ সফরের মধ্য দিয়ে সেই বার্তাই স্পষ্টভাবে দেওয়া হচ্ছে।
সম্মেলনে জোটের অন্যান্য সদস্যদেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করারও আগ্রহ প্রকাশ করেন বিলাওয়াল। কিন্তু আঞ্চলিক এই জোটের সম্মেলনে যোগ দিলেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের সম্ভাবনা নেই পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর। সম্মেলনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা না হলেও বৈঠকের ফাঁকে বিলাওয়াল বন্ধুপ্রতীম অন্যান্য দেশগুলোর পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করবেন বলে আশা করা হচ্ছে। বিলাওয়াল তার সম্মেলনে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্তকে এসসিও সনদের প্রতি পাকিস্তানের প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকারই প্রতিফলন বলে বর্ণনা করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০১১ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রাব্বানি খার ভারত সফরে এসেছিলেন। সে দেশের কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সেটাই শেষবারের মতো ভারতে আসা। বিলাওয়ালের এ সফর এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন চির প্রতিদ্বন্দ্বী এই দুই দেশ সম্প্রতি কয়েক বছরে বিভিন্ন কারণে একে অপরের বিষয়ে নাক গলিয়েছে। দুই দেশের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সন্ত্রাসবাদ।