বেহাল ঘর ছেড়েছে ৮২ পরিবার

0
119
গুচ্ছগ্রামে ঘরের মেঝের মাটি সরে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নে

বেশির ভাগ ঘরের মেঝের মাটি ধসে গেছে। সংস্কার না করায় এসব ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

লালমনিরহাটের পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নের আবাসন প্রকল্পের (গুচ্ছগ্রাম) ঘর সংস্কার না করায় সেগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। বেশির ভাগ ঘরের মেঝের মাটি ধসে গেছে। এসব ভোগান্তির কারণে ১৩০টি পরিবারের মধ্যে ৮২টি পরিবার গুচ্ছগ্রাম ছেড়ে চলে গেছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার (পিআইও) কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, চারপাশ ভারত–ঘেরা আলোচিত ভূখণ্ড দহগ্রাম ইউনিয়ন। এ ইউনিয়নের তিস্তা নদীর তীরে ২০১৭-১৮ সালে নির্মাণ করা হয় দহগ্রাম-১ গুচ্ছগ্রাম। পরে সরকারের ভূমি মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে ওই ইউনিয়নের তিস্তা নদীর অববাহিকার বড়বাড়ি এলাকায় ২০১৮ সালে গুচ্ছগ্রাম দ্বিতীয় পর্যায়ে ক্লাইমেট ভিকটিমস রিহ্যাবিলিটেশন প্রজেক্ট (সিভিআরপি) প্রকল্পের আওতায় ৩ ধাপে ১৩০টি বসতবাড়ি নির্মাণ করা হয়। সেখানে পর্যায়ক্রমে ভূমিহীন, গৃহহীন, নদীভাঙনের শিকার দরিদ্র পরিবারগুলোকে বরাদ্দ দেওয়া হয়।

নদীভাঙনের শিকার হয়ে জমি, বসতভিটা হারিয়ে এ গুচ্ছগ্রামে আসছি। এখানকার ঘরগুলোর মাটি ধসে যাওয়ায় অনেকে চলে গেছেন।

জয়নাল আবেদীন, গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা

স্থানীয় ও গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত দুই-তিন বছরে ভারী বৃষ্টি ও বন্যায় এই গুচ্ছগ্রামের ঘরের মাটি ও মেঝে ধসে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এখানকার বাসিন্দাদের আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ঘর মেরামত করতে পারেননি। তখন অনেক পরিবার গুচ্ছগ্রাম থেকে চলে যায়। তা ছাড়া গুচ্ছগ্রামে চলাচলের একমাত্র সড়কটি খানাখন্দে ভরা। শুকনা মৌসুমে ধুলাবালু এবং বর্ষায় কাদামাটি ভরা সড়কে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষা মৌসুমে তিস্তা নদীর পানি বৃদ্ধি পেলে এখানকার বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ থাকে না।

গত শনিবার গিয়ে দেখা গেছে, গুচ্ছগ্রামের বেশির ভাগ ঘরের মেঝের মাটি ধসে গেছে। সেখানকার স্যানিটেশন–ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে। দহগ্রামের নয়ারহাটগামী পাকা সড়ক থেকে গুচ্ছগ্রামের দূরত্ব প্রায় দুই কিলোমিটার। ওই কাঁচা রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। সড়কে থাকা একটি কালভার্টও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে রয়েছে। গুচ্ছগ্রামটিতে ঘর বরাদ্দ পাওয়া পরিবারগুলো অসচ্ছল এবং এসব পরিবারের সদস্যরা দিনমজুর। তাঁদের কাজের সন্ধানে দূরে যেতে হয়। এর ফলে যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহান তাঁরা। এসব পরিবারের অনেক ছেলেমেয়ে দূরের বিদ্যালয় ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থী। তাদেরও যাতায়াতে ভোগান্তি পোহাতে হয়।

এ সব সমস্যার কারণে গুচ্ছগ্রামের ১৩০টি পরিবারের মধ্যে ৮২টি পরিবার গুচ্ছগ্রাম ছেড়ে চলে গেছে। বর্তমানে বসবাস করছে ৫২টি পরিবার।

দহগ্রাম গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দা জয়নাল আবেদীন (৪৮) বলেন, ‘নদীভাঙনের শিকার হয়ে জমি, বসতভিটা হারিয়ে এ গুচ্ছগ্রামে আসছি। এখানে থাকা কষ্টকর। কামকাজের জন্য এখানকার সড়ক দিয়ে বাইরে যাওয়া-আসা করা যায় না। এখানকার ঘরগুলোর মাটি ধসে যাওয়ায় অনেকে চলে গেছেন।’

এ গুচ্ছগ্রামের ১১ নম্বর ঘরের বাসিন্দা জুলেখা বেগম (৩০) বলেন, কাজ না করলে তাঁদের ভাত জোটে না। গুচ্ছগ্রাম থেকে যাওয়া-আসার রাস্তার খুব সমস্যা। মাটি সরে যাওয়ায় ঘরে থাকা যায় না। এ জন্য অনেকে চলে গেছেন।

দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান বলেন, দহগ্রাম গুচ্ছগ্রামের সড়কের কারণে এখানে বসবাসকারীরা খুব কষ্টে আছেন। অনেকে চলে গেছেন। সড়কটি মেরামত করা জরুরি। বর্তমানে সেখানে বসবাসকারী ব্যক্তিরা নানা দুর্ভোগের মধ্যে দিন পার করছেন। এ বিষয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছেন।

পিআইও উত্তম কুমার নন্দি বলেন, পাচঁ-ছয় বছর আগে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়েছিল। একটু তো সমস্যা হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও ভারপ্রাপ্ত) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘সড়কের বিষয়ে শুনেছি। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে। গুচ্ছগ্রামের বাসিন্দাদের অনেকের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় অনেকে বাইরে চলে গেছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.