নরসিংদীর বেলাবতে পিটিয়ে অচেতন অবস্থায় গর্তে ফেলে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনার ৩৫ ঘণ্টা পর ওই অটোচালকের চেতনা ফিরেছে। আজ মঙ্গলবার সকাল ৮টার দিকে কিশোরগঞ্জের বাজিতপুরের ভাগলপুর এলাকার জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর চেতনা ফেরে। বেলা দুইটার দিকে মুঠোফোনে ঘটনার বর্ণনা দেন তিনি।
ওই চালকের নাম মো. তৌফিক মিয়া (৪০)। তিনি কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের গোবরিয়া গ্রামের মৃত শহীদুল্লাহ মিয়ার ছেলে। গতকাল সোমবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বেলাব উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের শিংবাড়ির মোড় এলাকার সড়কের পাশের প্রায় ২০ ফুট গর্ত থেকে তৌফিক মিয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায় পুলিশ। এর আগে গত রোববার সন্ধ্যায় বাড়ি থেকে অটোরিকশা নিয়ে বের হওয়ার পর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন।
তৌফিক মিয়া বলেন, রোববার রাতে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচরের বড়চারা বাজারে যাত্রীর জন্য অপেক্ষা করছিলেন। সাড়ে ৮টার দিকে ২০ থেকে ২২ বছর বয়সী তিন তরুণ পার্শ্ববর্তী বেলাব উপজেলার পোড়াদিয়া বাজারে যাওয়ার জন্য তাঁর অটোরিকশা ভাড়া করেন। যাত্রা শুরু করার আগে ওই তিনজন পাশের একটি দোকান থেকে কোমল পানীয় ও পান কিনে খান। তাঁকেও খাওয়ান। শেষে সিগারেট খান, তাঁকেও খাওয়ান। এরপরই রওনা হয়ে কথা বলতে বলতে ৩০ মিনিট পর বেলাব উপজেলার পাটুলি ইউনিয়নের শিংবাড়ি মোড় পৌঁছান তাঁরা। এ সময় তাঁর মাথা ঝিমঝিম করতে থাকে। তখনই তাঁরা তিনজন অটোরিকশা থেকে নেমে ভাড়া পরিশোধ করেন। এরপরই তিনি ঢলে পড়েন। তারপরে তাঁর সঙ্গে কী হয়েছে, আর কিছু মনে নেই তাঁর। তখন রাত ৯টা বাজে।
মারধরের বিষয়ে জানতে চাইলে তৌফিক মিয়া বলেন, তাঁকে কখন মারধর করা হয়েছে, কখন গর্তে ফেলা হয়েছে, তা মনে নেই তাঁর। অচেতন হওয়ার সময় ঘটনাস্থলটি ছিল নির্জন, আশপাশে কোথাও কেউ ছিল না। আজ সকালে চেতনা ফেরার পর তিনি জানতে পেরেছেন, তাঁর অটোরিকশা ও মুঠোফোনটি ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওই তিন তরুণকেও তিনি আগে কখনো দেখেননি। তবে দেখলে চিনতে পারবেন।
মামলা করার বিষয়ে তৌফিক মিয়া বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। মামলা চালানো প্রচুর খরচের ব্যাপার। এই টাকা কোথায় পাব?’ আক্ষেপ করে তিনি বলেন, ‘একটি সমিতি থেকে কিস্তিতে ৭০ হাজার টাকা ঋণ করে গত দুই মাস আগে অটোরিকশাটি কিনেছিলাম। এর আয় থেকেই আমাদের (স্ত্রী ও তিন ছেলে) পাঁচজনের সংসার চলত। এখন আয়-উপার্জন কেমনে হবে, আর কিস্তির টাকাই–বা শোধ করব কীভাবে…।’
তৌফিক মিয়ার স্বজনেরা জানান, রোববার সন্ধ্যায় বাড়িতে বাজার করে দিয়ে অটোরিকশা নিয়ে বের হন তৌফিক। রাত ১০টার দিকে বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও ফেরেননি। এর পর থেকে তাঁর খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। রাতভর তাঁর মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছিল। পরে গতকাল বেলা ১১টার দিকে ফেসবুকে ছবি দেখে হাসপাতালে আসেন তাঁরা।
তৌফিক মিয়ার মা ফাতেমা বেগম ও স্ত্রী সবলা বেগম বলেন, অচেতন হওয়ার পরই হয়তো তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য চোখ, গাল, কান, ঘাড় ও গলায় আঘাত করা হয়েছিল। মৃত ভেবেই হয়তো তাঁকে ওই সড়কের পাশে গভীর গর্তে ফেলে গিয়েছিল ছিনতাইকারীরা।
বেলাব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তানভীর আহমেদ জানান, এই ঘটনায় কোনো লিখিত অভিযোগ তাঁরা পাননি। পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।
পুলিশ ও স্থানীয় লোকজন জানান, গতকাল সকাল ১০টার দিকে স্থানীয় কয়েক ব্যক্তি সড়কের পাশের প্রায় ২০ ফুট গভীর গর্তে একজনকে পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর তাঁরা গর্তে নেমে দেখেন, সারা শরীরে মারধরের চিহ্ন, কিন্তু ব্যক্তিটি বেঁচে আছেন। খবর পেয়ে পুলিশ এসে তাঁকে উদ্ধার করে বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠান। এরপর স্থানীয় অনেকে অচেতন ব্যক্তির ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করেন। তৌফিক মিয়ার পরিবারের সদস্যরা ফেসবুকে ছবি দেখে বেলাব থানায় যোগাযোগ করেন। এরপর দুপুর ১২টার দিকে তাঁরা বেলাব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যান।