সড়ক দুর্ঘটনায় দুই সহপাঠীর মৃত্যুর ঘটনায় আজ সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত ক্যাম্পাসের সামনের সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) শিক্ষার্থীরা। দুই ঘণ্টা ধরে চলা এ বিক্ষোভ শুরুতে শান্ত ছিল। তবে রাত আটটার দিকে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তিনটি বাস ভাঙচুর করেন ও একটি বাসে আগুন দেন। ক্ষতিগ্রস্ত চারটি বাসই শাহ আমানত পরিবহনের। এ সময় চট্টগ্রাম-কাপ্তাই সড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ ছিল। পরে চুয়েটের ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে শান্ত করেন। এরপর তাঁরা রাস্তা ছেড়ে দেন।
এর আগে আনুমানিক বেলা সাড়ে তিনটার দিকে রাঙ্গুনিয়া থানার জিয়ানগরে মোটরসাইকেলে ঘুরতে বেরিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হন চুয়েটের তিন শিক্ষার্থী। দ্রুতগতির শাহ আমানত পরিবহনের একটি বাস শিক্ষার্থীদের মোটরসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে ঘটনাস্থলে মারা যান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী শান্ত সাহা। গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান একই বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তৌফিক হোসাইন। নিহত শান্ত সাহা নরসিংদী সদরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাজল সাহার ছেলে এবং তৌফিক হোসেন নোয়াখালী সদর উপজেলার সুধারাম থানার নিউ কলেজ রোডের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেনের ছেলে। এ ঘটনায় আহত হন জাকারিয়া হিমু। তিনি চুয়েটের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। বর্তমানে তিনি এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
কাপ্তাই সড়ক নামে পরিচিত ক্যাম্পাসের সামনের সড়কে চলাচলকারী দ্রুতগতির বেপরোয়া যানবাহন নিয়ে শিক্ষার্থীরা আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া চুয়েটের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী গোলাম মুরাদ বলেন, ‘এই সড়কে বাসগুলো খুবই বেপরোয়া। চালকেরাও অদক্ষ। অনেকবার বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। কিন্তু এ পর্যন্ত কোনো প্রতিকার মেলেনি। সড়কে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নেই। যে কারণে আজ আমরা দুই সহপাঠীকে হারিয়েছি।’
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দোষী ব্যক্তিদের বিচার এবং নিহত-আহত শিক্ষার্থীদের পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ না দেওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করারও ঘোষণা দেন তাঁরা।
এ বিষয়ে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের উপপরিচালক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই তাঁদের সহপাঠীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে গাড়িতে আগুন দেন ও ভাঙচুর করেন। খবর পেয়ে আমরা সেখানে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমরা পরবর্তী আইনি কার্যক্রমের ব্যবস্থা নেব। দোষী ব্যক্তিদের অবশ্যই বিচারের আওতায় আনা হবে।’
জানতে চাইলে রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) চন্দন কুমার চক্রবর্তী বলেন, দুর্ঘটনার পর বাসটি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে। বাসের নম্বর থাকলেও গাড়ির ফিটনেস আছে কি না, জানা যায়নি। চালক ও সহকারীকে ঘটনাস্থলে পাওয়া যায়নি। ঘটনার পর চুয়েটের শিক্ষার্থীরা সড়কে অবস্থান নিয়েছিল। পুলিশ তাদের শান্ত করার চেষ্টা করেছে।
এদিকে রাত ১০টায় চুয়েটের উপাচার্য মোহাম্মদ রফিকুল আলম জানান, শিক্ষার্থীদের মরদেহ নিজ নিজ বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে।