বার্লিনের ক্লাইনমাঁখো শহরে অজানা একটি প্রাণীর ঘুরে বেড়ানোর খবরে হুলুস্থুল ঘটে যায়। এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণ করা একটি ভিডিওর সূত্র ধরে পুলিশ কর্মকর্তারাসহ সবাই ধরে নেন শহরে একটি সিংহী ঘুরে বেড়াচ্ছে। এতে ঘাবড়ে যান সবাই। শহরজুড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার ও অধিবাসীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেয় পুলিশ। পরে অজানা প্রাণীটির খোঁজে ৩০ ঘণ্টাব্যাপী রুদ্ধশ্বাস অভিযান শেষে শহরের মেয়র জানান, ভিডিওতে দেখা অজানা প্রাণীটি সিংহী নয়, সম্ভবত একটি বুনো শুয়োর ছিল।
বার্লিনের কেন্দ্রস্থল থেকে মাত্র ১৪ মাইল দূরের ক্লাইনমাঁখো শহর। ২০ হাজার অধিবাসীর এই শান্ত শহরে বুধবার একটি খবরে সবার মধ্যে গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দেখা দেয়। খবর ছড়িয়ে পড়ে, শহরের একটি রাস্তার পাশেএকটি সিংহীকে বন্য শুয়োর খেতে দেখা গেছে। এক প্রত্যক্ষদর্শীর ধারণা করা কিছুটা অস্পষ্ট ভিডিওতে দেখা যায়, গাছপালায় ঘেরা একটি স্থানে একটি বড় আকৃতির প্রাণী ঘুরে বেড়াচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে, যেটিকে সিংহী বলে মনে হচ্ছিলো। এরপরই পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে মেলা হয় শহরটি।
অধিবাসীদের সতর্ক থাকা এবং শিশু ও পোষা প্রাণীদের নিরাপদে রাখার নির্দেশনা দেয় পুলিশ। পরে পুলিশ ও বন্যপ্রাণী শিকারী ও প্রাণী চিকিৎসকদের নিয়ে বিশাল একটি দল গঠন করে অজানা প্রাণিটির খোঁজে অভিযান শুরু করা হয়। প্রায় ৩০ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযানে আকাশে হেলিকপ্টার ও ভিডিও ক্যামেরাযুক্ত অনেকগুলো ড্রোন ব্যবহার করা হয়। যেখানে অজানা প্রাণীটির দেখা মিলেছিল সেই জায়গাটি চারদিকে সাঁজোয়া যান নিয়ে রাতভর পাহারায় থাকে পুলিশ। অভিযানে ঘ্রাণ সনাক্তকারী প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কুকুরও ব্যবহার করা হয়।
দীর্ঘ সময় ধরে চালানো রুদ্ধশ্বাস তল্লাশি অভিযানে অজানা প্রাণী বা সিংহীর খোঁজ না পাওয়ার পর শুক্রবার সংবাদ সম্মেলন শহরের মেয়র। এসময় ক্লাইনমাঁখোর মেয়র মাইকেল গ্রুবার্ট জানান, প্রত্যক্ষদর্শী সূত্রে পাওয়া ভিডিওর ফুটেজটি দুইজন বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞকে দেখানো হয়। তারা এটি বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে অজানা প্রাণীটি আসলে সিংহী নয়। এছাড়া ব্যাপক তল্লাশি অভিযানেও ঘটনাস্থলে সিংহ বা বাঘ গোত্রীয় কোনো প্রাণীর সন্ধান মেলেনি। তল্লাশিতে শহরের জঙ্গলপূর্ণ অঞ্চলে কিছু বন্যশুয়োর ছাড়া আর কিছু পাওয়া যায়নি।
পরিবেশ বিষয়ক সংগঠন এনএবিইউ বার্লিনের বন্যপ্রাণী বিশেষজ্ঞ রাইনার আল্টেনক্যাম্প জানান, ভাইরাল হওয়া ভিডিও ফুটেজে দেখা প্রাণীটি প্রকৃতপক্ষেই একটি বন্য শুয়োর ছিল। তিনি ফুটেজে পাওয়া প্রাণীটির লেজ, গোলাকৃতি পেছনের অংশ এবং লম্বা মাথার বিষয়টি উল্লেখ করে জানান, এগুলো একটি বড় আকৃতির বেড়াল গোত্রীয় প্রাণী থেকে বরং বন্য শুয়োরের সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ।
এদিকে বৃহস্পতিবার রাতে তল্লাশি অভিযানে থাকা কর্মকর্তাদের কেউ কেউ সিংহের গর্জন শুনতে পাওয়ার বিষয়টিও তদন্ত করে পুলিশ। পরে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, তাঁরা ধারণা করছেন এটা কোনো কিশোর প্রাঙ্কস্টারের কাজ। মজা করার জন্যই, ব্লুটুথ ও লাউড স্পিকার ব্যবহার করে সিংহের গর্জন শোনানো হয়েছে।