বান্দরবানে দুর্গম এলাকায় দুই পক্ষের গোলাগুলি

0
103
বান্দরবনের রুমা

বান্দরবানের রুমা উপজেলার দুর্গম মুয়ালপিপাড়া এলাকায় আজ মঙ্গলবার ভোর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির খবর পাওয়া গেছে। থেমে থেমে দুপুর পর্যন্ত গুলির শব্দ শোনা গেছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। তবে কোন দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে, সেটা নিশ্চিত করতে পারেনি পুলিশ।

রুমার স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানান, মুয়ালপিপাড়ায় কয়েক মাস ধরে কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) একটি দল অবস্থান করছিল। রুমা উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে পাইন্দু ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত মুয়ালপিপাড়ায় ৮০টি বম পরিবার ও ৫০টি মারমা পরিবার বসবাস করে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ভোর পাঁচটা থেকে মুয়ালপিপাড়া এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সকাল আটটা পর্যন্ত ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়। এরপর গোলাগুলি একটু কমে গেলেও বেলা দুইটা পর্যন্ত থেমে থেমে গোলাগুলি চলছিল। এরপর আর কোনো গুলির শব্দ শোনা যায়নি।

পাইন্দু ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য অংসাপ্রু মারমা বলেন, মুয়ালপিপাড়ার ৫০টি মারমা পরিবার গত বৃহস্পতিবার কেএনএফের ভয়ে উপজেলা সদরে আশ্রয় নেয়। তবে বম পরিবারগুলো পাড়ায় ছিল। কিন্তু গোলাগুলির ঘটনায় তাঁরা কোথায় আশ্রয় নিয়েছেন, সে ব্যাপারে কিছুই জানা যাচ্ছে না। তাঁদের মুঠোফোন নম্বরগুলোও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পাইন্দু ইউনিয়নের কয়েকজন জনপ্রতিনিধি বলেন, মুয়ালপিপাড়ায় কয়েক মাস ধরে কেএনএফ প্রকাশ্যে ঘাঁটি গেড়েছে। আজ তাঁদের ওই ঘাঁটিতে অন্য কোনো সশস্ত্র গোষ্ঠী আক্রমণ করেছে। কেএনএফ পাল্টা আক্রমণ করে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু টিকতে না পেরে ঘাঁটি ছেড়ে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে। তাঁরা আরও বলেন, ৭ এপ্রিল রোয়াংছড়ি উপজেলার খামতাংপাড়া এলাকায় কেএনএফ ও গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের গুলি বিনিময়ে বম জনগোষ্ঠীর আটজন সদস্য নিহত হয়েছিলেন। মুয়ালপিপাড়ায়ও গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের সঙ্গে কেএনএফের গোলাগুলি হয়েছে বলে তাঁরা ধারণা করছেন।

রুমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনির হোসেন বলেন, গোলাগুলির খবর পেয়েছেন। স্থানীয়দের মাধ্যমে জানতে পেরেছেন, কেএনএফ ও গণতান্ত্রিক ইউপিডিএফের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে। তবে হতাহতের বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি।

বান্দরবানের পুলিশ সুপার তারিকুল ইসলাম বলেন, রুমার দুর্গম মুয়ালপিপাড়ায় দুটি সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে বলে তিনি শুনেছেন। তবে কোন কোন দলের মধ্যে গোলাগুলি হয়েছে এবং এতে কোনো হতাহত হয়েছে কি না, সেটা জানা যায়নি। তাঁরা খোঁজখবর নিচ্ছেন বলে তিনি জানান।

২০২২ সালের মে-জুন থেকে ভারত ও মিয়ানমার সীমান্তসংলগ্ন রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলার বড়থলি ইউনিয়ন ও বান্দরবানের রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলার দুর্গম এলাকায় তৎপরতা শুরু করে কেএনএফ। তারা বম, পাংখুয়া, লুসাই, খুমি, খেয়াং ও ম্রো—ছয়টি জনগোষ্ঠীর অধিকারের জন্য সশস্ত্র আন্দোলন করছে বলে দাবি করে। কেএনএফের গোপন আস্তানায় ‘জামাতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বিয়া’র জঙ্গিদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার অভিযোগে গত ৩ অক্টোবর থেকে ওই এলাকায় অভিযান চালানো শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

গত ১৩ মার্চ বান্দরবান জেলা পরিষদের সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, পাহাড় থেকে ৩৮ জন শারক্বিয়ার জঙ্গি ও ১৭ জন কেএনএফ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের অভিযান চলমান। এ ছাড়া রুমা, রোয়াংছড়ি ও থানচি উপজেলায় পর্যটক ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.