বাজার ও রাস্তার স্বস্তি নিয়ে স্বজনদের কাছে ছুটছে মানুষ

0
119
বাড়ি ফিরছেন সাধারন মানুষ।

আর কয়েকদিন পরেই পবিত্র ঈদ উল ফিতর। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব পালন করবে গোটা বিশ্ব। ঈদকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে শহর ছেড়ে বাড়ির পথে মানুষ। ঊর্ধ্বমুখী বাজার থেকে কিছুটা স্বস্তি নিয়েই অনেকটা আরামেই এবারের ঈদযাত্রা। একদিকে সরকারের নানা উদ্যোগে কমেছে নিত্যপণ্যের দাম আবার অন্যদিকে সড়ক মহাসড়কে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছেন সাধারন মানুষ। তাই এখন কারই তেমন কোন অভিযোগ নেই।

এবার ঈদের পরপরই পহেলা বৈশাখ। সব মিলিয়ে ৫-৬ দিনের ছুটি পাবে দেশবাসী। ছুটি শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই গ্রামে ফিরতে শুরু করবে ঢাকাবাসী। তাছাড়া ছুটি শেষে স্কুল-কলেজ খুলবে ঈদের ১০-১২ দিন পর। ফলে ঈদের পর ঢাকার স্বাভাবিক চিত্র ফিরে আসতে কিছুটা সময় লাগবে। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগেই কম দামে নিত্য পণ্য মিলছে বাজারে। কমেছে সবজি এবং মসলার দাম।

রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা যায়, শাকসবজি, পেঁয়াজ ও ফলমূলসহ স্থানীয় মৌসুমি ফলের দাম নিম্নমুখী। প্রায় সব সবজির দাম কমলেও ঢেঁড়স, সজিনা, মটরশুঁটি ও করলার মতো নতুন সবজি কেজিপ্রতি ৬০ থেকে ১৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এগুলোর দামের কোনো পরিবর্তন দেখা যায়নি। তবে বেগুনসহ অন্যান্য সবজি ৩০ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। লাউ, চালকুমড়া ও ফুলকপি প্রতি পিস ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

মানভেদে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৩০ থেকে ৬০ টাকা, রসুন ১৮০ থেকে ২৫০ টাকা, আদা ২০০ থেকে ২৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

ডিমের দাম কিছুটা কমিয়ে প্রতি ডজন বাদামি ডিম ১৩০ টাকা, হাঁসের ডিম প্রতি হালি ৭০ টাকা এবং গৃহপালিত মুরগির ডিম প্রতি হালি ৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে ব্যাপকভাবে কমে গেছে তরমুজের দাম। সবচেয়ে ভালো মানের তরমুজ প্রতি কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আকার এবং মানের ভিত্তিতে প্রতি পিস আনারস ২০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পেয়ারা ৫০ থেকে ৭০ টাকা, পাকা পেঁপে যা রমজানের প্রথম সপ্তাহে ২০০ টাকা বা তার বেশি দরে বিক্রি হচ্ছিল, তা ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

আপেল, মাল্টা, কমলা ও নাশপাতি ২৬০ থেকে ৩৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। চলতি রমজানের প্রথম ২ সপ্তাহে এই ফলগুলো ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতো।

কাঁচাবাজারে চাল, ভোজ্যতেল, চিনি, গম ও আটার দাম অপরিবর্তিত থাকলেও গরু ও মুরগির মাংস এবং মাছের দামে কিছুটা ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
বিক্রেতারা জানান, রমজান মাসের শুরুর দিকে লেবু যেখানে ১০০ টাকা পর্যন্ত হালি বিক্রি হয়েছে সেই লেবু এখন বিক্রি হচ্ছে ২০-৩০ টাকা হালি। এছাড়া আলুর দাম সামান্য বেড়েছে। বর্তমানে আলু প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫ টাকায়। তবে কিছুটা স্বস্তি এসেছে পেঁয়াজের বাজারে। কেনা যাচ্ছে ৫৫-৬০ টাকা কেজিতে। অথচ রোজার আগেও পেয়াজের কেজি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১৩০ টাকা। এছাড়া আটা, ময়দা, চিনি, সয়াবিন তেল ও চালের দাম অপরিবর্তিত আছে।

অতীতের রেকর্ড ভেঙে গত ছয় থেকে সাত মাস আগে জিরার দাম ওঠে কেজিপ্রতি এক হাজার ২০০ টাকায়। তবে বর্তমানে দেশের বাজারে পণ্যটির দাম নেমে এসেছে কেজিপ্রতি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার ঘরে।জিরার পাশাপাশি দেশি পেঁয়াজ, দেশি রসুন, শুকনা মরিচ, হলুদসহ কয়েকটি মসলার দামও কমেছে। লবঙ্গের দাম মাঝে বেড়ে গেলেও এখন আবার কমে গেছে। এলাচ ও দারচিনির বাজারে কোনো পরিবর্তন নেই। আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে।

নিত্যপণ্যের বাজারের পর স্বস্তির দেখা মিলছে ঈদ যাত্রায়ও। দেশের বিভিন্ন মহাসড়কে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরছেন ঈদে ঘরমুখো মানুষ। এ নিয়ে স্বস্তি এবং সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অনেকেই। ঈদযাত্রার এই সময়ে আগে উত্তরের পথে যানজট লেগে থাকতো। কিন্তু এবার ঈদযাত্রায় এখনও কোথাও যানজটের সৃষ্টি হয়নি। তবে ক্রমেই গাড়ির চাপ বাড়ছে। স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। যানজট নিরসনে মহাসড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে প্রায় সাত শতাধিক পুলিশ কাজ করছে।

বগুড়াগামী হানিফ পরিবহনের যাত্রী সিদ্দিক বলেন, পরিবারের সঙ্গে একত্রে ঈদ উদযাপন করতে বাড়িতে যাচ্ছি। এবার অল্প সময়েই ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল পর্যন্ত এসেছি। সড়কে কোথাও যানজট পাইনি।

লিটন নামে এক বাসযাত্রী বলেন, গাবতলী থেকে বাসে রওনা হয়েছি। সড়কের কোথাও যানজটে আটকে থাকতে হয়নি। আশা করছি রংপুরে যানজট ছাড়াই পৌঁছাতে পারবো।
এলেঙ্গা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মীর মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান বলেন, রাতে গাড়ির কিছুটা চাপ ছিল। সে তুলনায় বর্তমানে চাপ কমই রয়েছে। স্বাভাবিক গতিতে যানবাহন চলাচল করছে। আশা করছি, ঘরমুখো মানুষ নির্বিঘ্নে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে।

অন্যদিকে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমবঙ্গের প্রবেশদ্বার পদ্মা সেতুর মাওয়া প্রান্তের টোল প্লাজায় বাড়তি গাড়ি দেখা গেলেও নেই অতিরিক্ত চাপ। পথে যানজট বা গাড়ি চলাচলে ধীরগতি নেই। নির্বিঘ্নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এক্সপ্রেসওয়ে হয়ে পদ্মা সেতু পাড়ি দিচ্ছে যানবাহনগুলো। তবে দূরপাল্লার গণপরিবহনের চেয়ে ব্যক্তিগত গাড়ি বেশি দেখা গেছে। পদ্মা সেতুর সাইট অফিসের অতিরিক্ত পরিচালক মো. আমিরুল হায়দার চৌধুরী জানান, তেমন চাপ নেই। কোথাও কোনও বিড়ম্বনা নেই। মানুষ সহজেই পদ্মা সেতু পাড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরছেন।

এদিকে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কে বেশ চাপ দেখা গেছে। কুমিল্লা বাস মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মহাসড়কে যানজট নেই। তবে কয়েকগুণ চাপ বেড়েছে। এই চাপ ঈদ পর্যন্ত হয়তো আরও বাড়বে। আমরা হাইওয়ে পুলিশ ও সড়ক বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করছি৷ আশা করি এ বছরও মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন হবে।

হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম বলেন, আমাদের এআই ক্যামেরা আছে। পুলিশ মাঠে কাজ করছে। আমরা সার্বক্ষণিকভাবে মহাসড়কে নজর রাখছি। এখনও কোথাও যানজটের কোনও সম্ভাবনা নেই। দুর্ঘটনা ঘটলে আমাদের তাৎক্ষণিক রেসপন্স টিম আছে, রেকার আছে, অ্যাম্বুরেন্স আছে সর্বোপরি আমাদের হাইওয়ে পুলিশ ২৪ ঘণ্টা মাঠে আছে। সবাই নিয়ম মেনে চললে এবং সবার সহযোগিতা থাকলে ভালো একটা ঈদযাত্রা উপহার দিতে পারবো আমরা।

এছাড়া ঈদ যাত্রায় স্বস্তির কোথা জানিয়েছেন ট্রেন যাত্রীরাও। গত ৩ এপ্রিল থেকে শুরু হয়েছে ট্রেনে ঈদের বাড়ি ফেরার চাপ। সেসময় দেখা গেছে ভোগান্তিহীনভাবেই যাত্রা শুরু হয়েছে ঘরমুখো মানুষের। অন্যান্য বারের মতো স্টেশনে উপচে পড়া ভিড় বা সিডিউল বিপর্যয় নেই। কমলাপুর থেকে নির্ধারিত সময়েই ছেড়ে যাচ্ছে ট্রেন।

কমলাপুরে যাত্রীদের নিরাপত্তায়ও নেওয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। পজ মেশিন দিয়ে টিকিট ভেরিফাই করে তারপর প্ল্যাটফর্মে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। প্ল্যাটফর্মে বিনা টিকিটের যাত্রী প্রবেশ রোধ করতে স্কাউট এবং রেড ক্রিসেন্টের সদস্যরাও কাজ করছেন। যাত্রীরা বলছেন, শেষ পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন হবে।

একতা এক্সপ্রেসের যাত্রী ফারহান জনি বলেন, অনলাইনে টিকিট পেতে একটু ঝামেলা হলেও স্টেশনে এসে কোনও ভোগান্তিতে পড়তে হয়নি। যথা সময়েই প্ল্যাটফর্মে ট্রেন এসেছে। এছাড়া টিকিটবিহীন যাত্রীরা স্টেশনে প্রবেশ করতে না পারায় ভিড়ও কম।

বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সরদার সাহাদাত আলী বলছেন, ঈদযাত্রায় ট্রেনের বিলম্ব সহনীয় পর্যায়ে রাখার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। যেসব ট্রেনের সময়সূচিতে বিলম্ব আছে, সেগুলোকে প্রতি ঘণ্টায় মনিটরিং করা হচ্ছে। বিশেষ কোনও ঘটনা না ঘটলে আমাদের যে ব্যবস্থাপনা আছে, তাতে সব ট্রেন সঠিক সময়ে চালানোর ব্যবস্থা করতে পারবো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.