কথা রাখলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই সরকারি বাংলো ছেড়ে চলে গেলেন। লোকসভার সদস্য হিসেবে দুই দশক ধরে যা ছিল তাঁর ঠিকানা, শনিবার ১২ তুঘলক লেনের সেই বাংলো ছেড়ে দিয়ে তিনি চলে গেলেন মা সোনিয়া গান্ধীর বাসস্থান ১০ জনপথে।
কংগ্রেস সূত্রের খবর, আপাতত ১০ জনপথেই রাহুল তাঁর ঠিকানা করছেন। তাঁর সঙ্গে যাঁরা কাজ করছেন, তাঁর অফিস কর্মীরা, সবাই ১০ জনপথ থেকে কাজ করবেন।
সরকারি বাসস্থানের চাবিসহ প্রয়োজনীয় তথ্য লোকসভার হাউজিং কমিটির কাছে সম্ভবত সোমবার পাঠিয়ে দেওয়া হবে। কংগ্রেস সূত্রের খবর, শনিবার ও রোববার সাপ্তাহিক ছুটির দিন বলে বাড়ি ছেড়ে দিলেও চাবি হয়তো সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করা হবে।
‘মোদি’ পদবি মামলায় সুরাট আদালতের রায়ে দুই বছরের জেল হওয়ার পরদিনই লোকসভা সচিবালয় রাহুলের সদস্যপদ খারিজ করে দেয়। তার পরের দিন চিঠি দিয়ে জানানো হয়, এক মাসের মধ্যে রাহুলকে সরকারি বাংলো খালি করে দিতে হবে। নির্দেশ মেনে রাহুলও জানিয়ে দেন, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই তা করবেন। কিছুদিন ধরেই ধীরে ধীরে ১২, তুঘলক লেনের বাংলো থেকে তিনি ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ১০ জনপথে নিয়ে যান। শনিবার সকালে বোন প্রিয়াঙ্কাকে সঙ্গে নিয়ে দুবার তুঘলক লেনের এত বছরের আবাসস্থলে যান। বেলা তিনটা নাগাদ শেষবারের মতো বেরিয়ে যান বাংলো থেকে। ২০০৫ সালে লোকসভার হাউজিং কমিটিই এই সরকারি বাংলো সাংসদ হিসেবে রাহুলকে বরাদ্দ করেছিল।
রাহুল অবশ্য আরও কিছুদিন এই বাড়িতে থাকার আবেদন করতে পারতেন। নিয়ম অনুযায়ী, বাজারদরে ভাড়া দিয়ে আরও কিছুদিন থাকার অনুরোধ বিদায়ী সংসদ সদস্যরা করতেও পারেন। আবার সরকার চাইলে সাবেক সংসদ সদস্য হয়েও কেউ কেউ অনির্দিষ্টকাল সরকারি বাংলো রেখে দিতে পারেন। যেমন রয়েছেন বিজেপির সাবেক নেতা লালকৃষ্ণ আদভানি, মুরলী মনোহর যোশী কিংবা সাবেক কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদ। তাঁদের কাউকেই ঘর ছাড়তে বলা হয়নি। রাহুল সেই পথে পা বাড়াননি। অনুরোধ–উপরোধের পথে হাঁটেননি।
বাড়ি ছাড়ার নির্দেশ পাওয়ার পরই রাহুলকে ‘বাড়ি দেওয়ার’ হিড়িক পড়ে যায়। সামাজিক মাধ্যমে ‘হ্যাশট্যাগ মেরা ঘর আপকা ঘর’ প্রচার ছড়িয়ে পড়ে। কংগ্রেস নেতা থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ রাহুলকে নিজের ‘ঘর’ ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার শুরু করেন। সেই উল্লেখ করে কংগ্রেস শনিবার টুইট করে বলে, ‘গোটা দেশই রাহুলের ঘরবাড়ি। দেশবাসীর হৃদয়ে রাহুলের বাস। এই সম্পর্ক চিরন্তন। কারও কাছে তিনি পুত্র, কারও ভাই, কারও কাছে তিনি নেতা। রাহুলের কাছে সবাই তাঁর, তিনিও সবার। সেই জন্যই আজ সবাই বলতে পারছে, রাহুলজি, আমার ঘর আপনারই ঘর।’
কেরালার লোকসভার সদস্য শশী থারুর টুইট করে বলেন, ‘নির্দেশ মেনে রাহুল আজ বাড়ি ছেড়ে দিলেন। এই অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত প্রমাণ করে, আইনের প্রতি তিনি শ্রদ্ধাশীল।’
কংগ্রেস নেতা কে সি বেনুগোপাল টুইট করে বলেন, ‘এই সব ছোটখাটো ঘটনা তুচ্ছ। মানুষের জন্য কথা বলতে কিংবা সত্যভাষণের জন্য এই সব ঘটনা আপনার পথে কোনো রকম বাধা সৃষ্টি করতে পারবে না। গোটা দেশের দরজা আপনার জন্য খোলা রয়েছে।’