বৃষ্টি ভালোবাসে না, এমন লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। বৃষ্টির দিনে বারান্দায় বসে কড়া লিকারের এক কাপ চা আর ব্যাকগ্রাউন্ডে রবীন্দ্রসংগীত, ব্যাস মন ভালো করা কিংবা নিঃসঙ্গতাকে উপভোগ করার জন্য আর কী লাগে। আর ঝুমবৃষ্টিতে মাঝনদীতে নৌকায় ভিজতে পারলে তো কথাই নেই। শহরে সে সুযোগ কই? তাই ‘নকশা’ থেকে কল আসার সঙ্গে সঙ্গে একলাফে রাজি হয়ে গিয়েছিলাম। বলছি ২০২১ সালের নকশার বর্ষা শুটের কথা।
নকশা থেকে জানানো হলো, ‘আমরা বৃষ্টির শুট করব। ঢাকার বাইরে যেতে হবে। সারা দিন থাকব। আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেখা হয়েছে, ১৭ জুন বৃষ্টি থাকবে।’ কিন্তু ১৭ আর ১৮ জুন যে আমার ঈদের নাটকের শুটিং। অনেক নাটক করে নাটকের শুটটা এক দিন পিছিয়ে দিলাম। আসলে বর্ষা আমার প্রিয় ঋতু, তাই নৌকায় করে নদীতে বৃষ্টিতে ভেজার এই সুযোগ আমি হাতছাড়া করতে চাইছিলাম না। আমি তো নদীপাড়ের মেয়ে, তাই নদীর প্রতি আমার তীব্র টান।
এমনও বৃষ্টির দিনে
শুটের দিন সকালে ভাবছিলাম, আজ কি বৃষ্টি আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে, নাকি আমরা বৃষ্টির জন্য। সকালে ধানমন্ডি স্টার কাবাবে নেহারি আর পরোটা খেলাম। স্টারের বিখ্যাত দুধ–চা খেয়ে যাত্রা শুরু করলাম কেরানীগঞ্জের উদ্দেশে। যখন পৌঁছালাম, তখনো বৃষ্টি শুরু হয়নি। ফটোশুটের জন্য তৈরি হতে আমরা স্থানীয় একটি বাড়িতে উঠলাম। নদী থেকে ধরা কয়েক রকম মাছ, চাল, ডাল, সবজি কিনে দেওয়া হলো। এগুলো দিয়েই এই বাড়িতে আমাদের দুপুরের খাবার রান্না করা হবে। কেমন জানি একটা বনভোজন বনভোজন মনে হচ্ছিল সেদিন।
নৌকা খুঁজে পেতেই অনেকটা সময় চলে গেল। এতগুলো লোককে একসঙ্গে নদীতে নিয়ে যাওয়ার মতো বড় নৌকা পাওয়া গেল না। শেষে ছোট দুটি নৌকাতেই যাওয়ার ব্যবস্থা হলো। ততক্ষণে শুরু হয়ে গেল বৃষ্টি। আমরা শুট করেছিলাম ধলেশ্বরী নদীতে। আমার সঙ্গে আরও ছিলেন প্রিয়ন্তী উর্বি। বৃষ্টিতে আমি আর উর্বী নৌকায় মাঝনদীতে নানান পোজ দিচ্ছি, ফটোগ্রাফার কবির (হোসেন) ভাই ছবি তুলছেন। সঙ্গে ছিলেন সেলিম রেজা এবং নৌকার দুজন মাঝি। আমরা দুই মডেল এক নৌকায়, আর কবির হোসেন আর সেলিম রেজা এক নৌকায়। বিপাশা (রায়) আপু দাঁড়িয়ে বৃষ্টিতে ভিজছেন আর নানা রকম নির্দেশনা দিচ্ছেন।
প্রথম কনসেপ্ট ছিল, মাথায় কলাপাতা ধরে আমরা বৃষ্টিবিলাস করছি। একই সঙ্গে আনন্দ আর ভয়—দুই অনুভূতিই মনে খেলে যাচ্ছিল। কারণ, বৃষ্টির তীব্রতার সঙ্গে নদীতে পাল্লা দিয়ে ঢেউ শুরু হলো; আর এদিকে এমন মোহনীয় পরিবেশে বৃষ্টির শুট—সব মিলিয়ে কেমন যেন অনুভূতি হচ্ছিল। মাঝনদীতে শুট শেষ হলে আমরা ওপারে গেলাম। ওপারে গিয়ে ছবি তোলা শেষ করে ফিরে আসার সময় ঢেউ আরও প্রবল হয়ে উঠল। এই পরিস্থিতিতেই উর্বী বলছিলেন, ‘নেমেই এক কাপ গরম চা খাব। ওয়েদার ডিমান্ড।’ যা–ই হোক, শেষ পর্যন্ত সাবধানে পাড়ে এসে পৌঁছাতে পেরেছিলাম আমরা।
পরে আমার একা শুট ছিল। বিষয়টা ছিল বৃষ্টিতে নৌকায় ভিজছি। লাইট সহকারী সেলিম রেজা একটা ইট এনে দিয়েছিলেন, নৌকায় শোয়ার জন্য। কচুরিপানা আর প্রবল স্রোতে নৌকা ভালোই দুলছিল। প্রবল বৃষ্টিতে ভারসাম্য বজায় রাখা একটু কঠিনই ছিল। তবে একটু ঝুঁকি নিয়ে শুটটা হলেও দারুণ সব ছবি হলো সেদিন।
বর্ষা, বৃষ্টি, ধলেশ্বরী—সব মিলিয়ে সত্যিই মনে রাখার মতো একটা দিন। শহুরে জীবনে এভাবে বৃষ্টি উপভোগের সুযোগ তো মেলে না। তাই বর্ষা এলেই সেই শুটের কথা মনে পড়ে। ছবিগুলো ছাপা হওয়ার পর বেশ সাড়া পড়েছিল, যে ছবির প্রশংসা এখনো শুনি। এখনো আমার বিশেষ কাজের কথা এলে সেই শুটের কথা মানুষ মনে করেন।
ছবিগুলো নকশায় প্রকাশিত হওয়ার পর একজন চিত্রশিল্পী সেগুলোরই একটিকে বিশাল সাইজে এঁকে আমাকে উপহার পাঠিয়েছিলেন। এটাও আমার জীবনে এক উল্লেখযোগ্য ঘটনা হয়ে থাকবে।