বিয়ের মেহেদিরাঙা হাতে ক্যানোলা, এখনো স্বামীর মৃত্যুর খবর জানেন না সোনিয়া

0
119
চুয়াডাঙ্গার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন সোনিয়া

আজ শুক্রবার সকালে জানাজা শেষে শামীমের লাশ নিজ গ্রামে দাফন করা হয়েছে। আহত সোনিয়ার অবস্থা গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসকেরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। তবে অর্থের অভাবে স্বজনেরা এখনো তাঁকে রাজশাহী নিয়ে যেতে পারছেন না। বর্তমানে সোনিয়া চুয়াডাঙ্গার নিউ ইউনাইটেড ক্লিনিকে চিকিৎসাধীন।

আজ শুক্রবার সকালে হাসপাতালে গিয়ে কথা হয় সোনিয়ার খালা ফেরদৌসী বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনায় সোনিয়ার দুই পা ও ডান হাত ভেঙে গেছে। প্রচণ্ড ব্যথার কারণে তাঁকে ওষুধ দিয়ে বেশির ভাগ সময় ঘুম পাড়িয়ে রাখা হচ্ছে। তবে ঘুম ভাঙলেই যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন আর স্বামী শামীমের বিষয়ে জানতে চাচ্ছেন। চিকিৎসকের পরামর্শে শামীম মারা যাওয়ার বিষয়টি সোনিয়াকে এখনো জানানো হয়নি। বাড়িতে সোনিয়ার মা চম্পা বেগম এখন পাগলপ্রায়।

ওই দুর্ঘটনায় সোনিয়ার খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী শেফালি খাতুনও আহত হয়েছেন

ওই দুর্ঘটনায় সোনিয়ার খালাতো ভাইয়ের স্ত্রী শেফালি খাতুনও আহত হয়েছেন

সদর হাসপাতালের সার্জারি (মহিলা) বিভাগে গিয়ে চিকিৎসাধীন শেফালি খাতুনের সঙ্গে কথা হয়। তিন মাস বয়সী মেয়ে রজনীকে কোলে নিয়ে শয্যায় বসেছিলেন এই নারী। গতকাল রাতের দুর্ঘটনার কথা মনে করতেই মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে বারবার ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছেন তিনি। শয্যার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা বাবা ইমাম আলী ও মা জোছনা খাতুন তাঁকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।

গতকাল রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে শেফালি খাতুন বলেন, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি শামীমের বাড়ির লোকজন সোনিয়াকে দেখতে আসেন। পরে দুই পক্ষের সম্মতিতে ওই দিনই দুজনের বিয়ে হয়। বিয়ের পর সোনিয়া শ্বশুরবাড়িতে যান। এলাকার প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী, পরদিন ২৫ ফেব্রুয়ারি আবার নববধূকে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে আসেন শামীম। আজ শুক্রবার সোনিয়াকে নিয়ে নিজ বাড়িতে ফেরার কথা ছিল শামীমের। কিন্তু তার আগেই তো না ফেরার দেশে চলে গেলেন শামীম।

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল রাতে সোনিয়ার এক আত্মীয়ের বাড়িতে তাঁদের দাওয়াত ছিল। সেখানে যাওয়ার আগে মিষ্টি কিনতে সোনিয়া ও শেফালিকে নিয়ে শামীম মোটরসাইকেলে হিজলগাড়ি বাজারে যাচ্ছিলেন। কিন্তু বাজারে পৌঁছানোর আগেই কেরু কোম্পানির খামারের কাছে পৌঁছালে একটি কুকুরের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তিনজনই মোটরসাইকেল থেকে রাস্তার ওপরে ছিটকে পড়েন। এতে ঘটনাস্থলে শামীম নিহত হন। স্থানীয় লোকজন তিনজনকেই উদ্ধার করে সদর হাসপাতালে নিলে জরুরি বিভাগের চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান শামীমকে মৃত ঘোষণা করেন।

বাবা-মায়ের একমাত্র ছেলে ছিলেন শামীম। শামীমের দুই বোনের বিয়ে হয়েছে। অনেক অল্প বয়সে শামীম তাঁর বাবা শফিউদ্দিনকে হারান। অনেক সংগ্রাম করে তাঁর মা তিন সন্তানকে বড় করেছেন। শামীম হিজলগাড়ি বাজারে একটি বিস্কুট কারখানার কর্মচারী ছিলেন। এদিকে দুই বোনের মধ্যে সোনিয়া বড়। ছোট বোন ফাতেমা হিজলগাড়ি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী। সোনিয়া একই বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণিতে পড়েন। সোনিয়ার বাবার সঙ্গে তাঁর মায়ের যোগাযোগ নেই। সোনিয়ার মা চম্পা খাতুন কৃষিকাজ করেন। অনেক সংগ্রাম করে দুই মেয়েকে পড়াশোনা করাচ্ছেন তিনি। বাড়িতে কোনো পুরুষ সদস্য না থাকায় সোনিয়ার স্বামী শামীমকে ঘিরে ছিল অনেক আশা-ভরসা। কিন্তু একটি দুর্ঘটনা দুটি পরিবারকেই অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দিল।

সোনিয়ার খালাতো ভাই আশাবুল হক বলেন, সোনিয়ার চিকিৎসার জন্য ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকার প্রয়োজন। কিন্তু দুই পরিবারের কারও পক্ষেই এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়। এ জন্য রাজশাহীতে নেওয়াও সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় বলদিয়া গ্রাম ও হিজলগাড়ি বাজারের লোকজনের কাছ থেকে সাহায্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

শাহ আলম

চুয়াডাঙ্গা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.