বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে জমি বিবাদে এবার নোবেলজয়ী অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়ালেন পশ্চিম বাংলার বিশিষ্টরা। সাহিত্যিক অনিতা অগ্নিহোত্রী এবং অচিন চক্রবর্তীর নামে একটি বিবৃতি জারি করে বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টায় নন্দনের ৩ নম্বর প্রেক্ষাগৃহে বৈঠক ডাকা হয়েছে। বৈঠকে জমি বিতর্কে অমর্ত্য সেনকে হেনস্তা প্রসঙ্গে নিজেদের মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে ‘গত কয়েক সপ্তাহে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, অধ্যাপক অমর্ত্য সেনকে উচ্ছেদের নোটিশ দিয়েছে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ, হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে। আমরা মনে করি, অধ্যাপক সেনকে এই ধরনের নোটিশ দেওয়া লজ্জাজনক। এই ধরনের প্রচেষ্টাকে ধিক্কার জানানো উচিত।’
জমি বিতর্কে ১৯ এপ্রিল বিশ্বভারতীর শুনানিতে উপস্থিত না থাকার ফলে অমর্ত্য সেনের বিরুদ্ধে গত ২০ এপ্রিল কড়া পদক্ষেপের পথে হাঁটে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বিতর্কিত ১৩ ডেসিবেল জমির ছাড়ার চূড়ান্ত সময়সীমা বেঁধে দিয়ে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকে নোটিশ দেয় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। নোটিশ অনুযায়ী ১৫ দিনের ডেডলাইন অর্থাৎ আগামী ৬ মে’র মধ্যে প্রতীচী খালি করে দিতে হবে।
নোটিশে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, নির্ধারিত সময়ে প্রতীচী না ছাড়লে দখলদার উচ্ছেদ আইন ১৯৭১ ধারা ৫-এর উপধারা ১-এর অধীনে প্রয়োজনে বলপ্রয়োগ করে হলেও বিতর্কিত জমির দখল বুঝে নেবে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই মর্মে অমর্ত্য সেনের আইনজীবী গোরাচাঁদ চক্রবর্তীকে ইমেলে নোটিশ পাঠিয়েছেন বিশ্বভারতীর রেজিস্ট্রার। বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষের তরফে পাঠানো ওই নোটিশে সই করেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত কর্মসচিব অশোক মাহাতোর।
এই মুহূর্তে বিদেশে অবস্থান করছেন অমর্ত্য সেন। সেই কারণে জমি বিতর্কে শুনানিতে অংশগ্রহণের জন্য বিশ্বভারতীর কাছে তিন মাসের সময় চেয়েছিলেন তিনি। কিন্তুু বিশ্বভারতী সর্বোচ্চ সাত দিনের সময় দেয় তাঁকে। এর মধ্যে শুনানিতে উপস্থিত হতে না পারায় তার বিরুদ্ধে চরম পদক্ষেপ নিতে চলেছে বিশ্বভারতী। আর বিশ্বভারতীর এমন একরোখা মনোভাবের বিরুদ্ধেই রুখে দাঁড়াতে চাইছে সমাজের বিশিষ্টজনদের একাংশ।
এর আগে ১২০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তি জমি বিতর্কের জেরে তৈরি হওয়া পরিস্থিতির কথা উল্লেখ করেন এবং বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ বিশেষত উপাচার্যের ভূমিকার নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য হিসেবে মোদিকে চিঠি পাঠান তাঁরা।
কোন লাভের আশায় অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়াচ্ছেন
এদিকে আবার নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়ানোয় এবার বিশিষ্ট ব্যক্তিদের তীব্র আক্রমণ করেছে বিজেপি। বিজেপির আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য মঙ্গলবার টুইট করে বলেন, নিজেদের পরিচয়কে কাজে লাগিয়ে অন্যায়কে সমর্থনকারী এরা কারা? কোন লাভের আশায় সর্বোপরি কার নির্দেশে তাঁরা অমর্ত্য সেনের পাশে দাঁড়াচ্ছেন? শিক্ষাবিদ পবিত্র সরকার থেকে শুরু করে অভিনেতা পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিপ্লব চট্টোপাধ্যায়, চন্দন সেন, লেখক ভগীরথ মিশ্র, কবি মন্দাক্রান্তা সেন সকলের নাম উল্লেখ করেছেন টুইটে।
তিনি বলেছেন, বিদ্বজ্জনদের কলম, শিল্পীসত্ত্বা, মেধা সব কি রাজ্য সরকারের কাছে বিক্রি হয়ে গেছে। এরা নিজেদের অবস্থান থেকে জনমানসে যথেষ্ট প্রভাব ফেলতে সক্ষম। আর তাই যাতে ভুল প্রভাব না পড়ে সেজন্য এদের হাত থেকে মুক্তি দরকার। স্বাভাবিকভাবেই বিজেপি নেতার এই টুইটের পরে সমালোচনার ঝড় উঠেছে বিশিষ্ট মহলে।