রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য বহনকারী রাশিয়ার পতাকাবাহী জাহাজ উরসা মেজর বঙ্গোপসাগর ছাড়ার প্রস্তুতি নিয়েছে। সোমবার বিকেলে জাহাজটি বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমা ছেড়ে আটলান্টিক মহাসাগরের কৃষ্ণসাগরে রাশিয়ার নভোরোসিস্ক সমুদ্রবন্দরে যাওয়ার গন্তব্য ঠিক করেছে। এপ্রিলের ১৪ তারিখ জাহাজটির সেখানে পৌঁছানোর কথা রয়েছে। তাৎক্ষণিক জাহাজের অবস্থান শনাক্ত সংক্রান্ত গ্লোবাল শিপ ট্র্যাকিং ইন্টেলিজেন্স মেরিন ট্রাফিক ওয়েবসাইট থেকে ২০ মার্চ রাতে এ তথ্য জানা গেছে।
জাহাজ বদলে পণ্য পৌঁছে দিতে রাজি রাশিয়া
উরসা মেজর রূপপুরের পণ্য নিয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর মোংলায় পৌঁছানোর কথা ছিল। তবে ২০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানায়, ওই জাহাজটি আসলে ‘উরসা মেজর’ নয়। এটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা ‘স্পার্টা-৩’। রং ও নাম বদলে তাদের নিষেধাজ্ঞার তালিকায় থাকা জাহাজটি রূপপুরের পণ্য নিয়ে বাংলাদেশে আসছে। যাচাই করে বাংলাদেশ বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে জাহাজটিকে বন্দরে ভিড়তে নিষেধ করে দেয়। ততদিনে বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে ফেলেছে উরসা মেজর।
বাংলাদেশে পণ্য খালাস করতে না পেরে ভারতের বঙ্গোপসাগরসংলগ্ন বন্দরে খালাসের চেষ্টা চালায় জাহাজটি। সেখানেও ব্যর্থ হয়। এরপর বেশ কিছু দিন ভারতের বন্দরে অবস্থান করে। সেখানে পণ্য খালাস না করতে পারলেও জাহাজটির নাবিকদের প্রয়োজনীয় রসদ এবং জাহাজের বাঙ্কারিং সুবিধা দেয় ভারত।
বঙ্গোপসাগরে ৫৫ দিন ধরে ভাসছে নিষিদ্ধ রুশ জাহাজ
ভারতের বন্দর থেকে পরে জাহাজটি আবারও বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ জলসীমায় প্রবেশ করে। এরপর গত ১৫ জানুয়ারি চীনের সায়েনথো বন্দরে গন্তব্য সুনির্দিষ্ট করেছিল উরসা মেজর। তবে তা পরিবর্তন করে জাহাজটি। এরপর থেকেই রুশ এ জাহাজটি বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের জলসীমায় অবস্থান করে আসছিল।
গত ১৬ ফেব্রুয়ারি থেকে মাঝ সমুদ্রেই রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য খালাস শুরু করে উরসা মেজর। পণ্য খালাসের পর গত ২১ ফেব্রুয়ারি জাহাজ বন্দরে ভিড়তে না দেওয়ার প্রতিবাদে মস্কোতে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত কামরুল আহসানকে তলব করে রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। রাষ্ট্রদূতকে তলব করে মস্কো ক্ষোভ প্রকাশের পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কে বিরূপ প্রভাব পড়ার হুঁশিয়ারি দেয়। কিন্তু জাহাজটি বাংলাদেশে অবস্থান করতে থাকে।
এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, জাহাজটি কোথায় অবস্থান করছে এ নিয়ে আমাদের কোনো মাথাব্যথা নেই। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের পণ্য পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল এজেন্টের। এজেন্টের সঙ্গে জাহাজের চুক্তি। এখানে সরকার কোনোভাবেই সম্পৃক্ত নয়। বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার, নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা কোনো জাহাজকে ভিড়তে দেওয়া হবে না। এর বাইরে জাহাজটি কোথায় অবস্থান করবে এটি তাদের সিদ্ধান্ত।
ইউক্রেন সংকট শুরুর পর রাশিয়ার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ওপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা দেয় যুক্তরাষ্ট্র।