ফাঁদে ফেলে বিয়ে, চেতনানাশক খাইয়ে যৌনপল্লিতে বিক্রি

0
111
প্রতীকী ছবি

প্রেমের ফাঁদে ফেলে এক তরুণীকে বিয়ে করেন চুয়াডাঙ্গার এক তরুণ। এরপর স্ত্রীকে ঢাকায় নেওয়ার পথে চেতনানাশক খাইয়ে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে বিক্রি করে দেন। বাসের মধ্যে চেতনানাশক খাইয়ে অজ্ঞান করা হয়। তাঁর যখন জ্ঞান ফেরে, দেখতে পান তিনি অন্ধকার একটি ঘরে বন্দী। আড়াই মাস পর কৌশলে যৌনপল্লি থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন ওই তরুণী।

একটি নালিশি অভিযোগের তদন্ত শেষে আদালতে জমা দেওয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) প্রতিবেদনে এসব তথ্য রয়েছে। গত ১৩ ফেব্রুয়ারি চুয়াডাঙ্গার আমলি আদালতে প্রতিবেদনটি জমা দেওয়া হয়েছে। নিখোঁজের এক মাস ১২ দিন পর আদালতে এই নালিশি দরখাস্ত করেছিলেন ভুক্তভোগী তরুণীর মা।

পিবিআইয়ের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অভিযোগ ওঠা তরুণ ও ভুক্তভোগী তরুণী একই সঙ্গে কাজ করতেন। সেখানেই তাঁদের পরিচয় হয়। ওই তরুণ তাঁর প্রথম বিয়ের কথা গোপন করে তরুণীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তবে ওই তরুণীর যে আগে বিয়ে হয়েছিল, তা তিনি জানতেন। গত বছরের মে মাসে বিয়ে করেন তাঁরা। বিয়ের পর ওই তরুণ শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। দেড় মাস পর তরুণী জানতে পারেন, তাঁর স্বামীর আগের স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যে ঝগড়া হয়।

ভুক্তভোগী তরুণীকে যিনি যৌনপল্লিতে বিক্রি করেছেন, তিনি পলাতক। এ কারণে যাঁদের কাছে ওই তরুণীকে বিক্রি করা হয়েছিল, তাঁদের শনাক্ত করা যায়নি। আর ভুক্তভোগী তরুণী কোথায় ছিলেন, কাদের কাছে ছিলেন, তার বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি। এ কারণে ভুক্তভোগী তরুণীর স্বামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।
সরদার বাবর আলী, পরিদর্শক, চুয়াডাঙ্গা জেলা পিবিআই

পিবিআইয়ের তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, এ অবস্থায় প্রতারণার ফাঁদ পাতেন ওই তরুণ। প্রথম স্ত্রী তালাক দেওয়ার কথা বলে ভুক্তভোগী তরুণীর কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নেন। এক মাস পর ওই যুবক জানান, প্রথম স্ত্রী মামলা করেছেন। মামলার নিষ্পত্তির জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন। এ জন্য তিনি ভুক্তভোগী নারীকে নিয়ে ঢাকায় এসে পোশাক কারখানায় কাজ নেবেন। গত বছরের আগস্টের শেষের দিকে তারা বাসে করে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন। বাসের মধ্যে চেতনানাশক খাইয়ে তরুণীকে যৌনপল্লিতে বিক্রি করে পালিয়ে যান ওই তরুণ।

পিবিআই জানায়, ভুক্তভোগী তরুণীকে গত ১ ফেব্রুয়ারি তাঁর বাড়ি থেকে উদ্ধার দেখিয়ে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি নেওয়া হয়। আর তাঁর ফিরে আসার খবর পেয়ে ওই তরুণ এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যান। ওই তরুণ মানব পাচার প্রতিরোধ ও দমন আইন-২০১২ অনুযায়ী অপরাধ করেছেন।

বমির ওষুধ বলে খাওয়ানো হয় চেতনানাশক

তদন্ত শুরুর পর পিবিআই ভুক্তভোগী নারীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে। জবানবন্দিতে ওই নারী জানান, ঢাকায় যাওয়ার পথে দৌলতদিয়া ঘাটে এসে বাস যানজটে থেমে যায়। তখন ওই যুবক পানি ও বমির ট্যাবলেট আনার কথা বলে বাস থেকে নেমে যান। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বমির ট্যাবলেট বলে একটি ট্যাবলেট খেতে বলেন। ট্যাবলেট খেয়ে তিনি ঘুমিয়ে পড়েন। ঘুম ভাঙার পর তিনি ছোট্ট একটি অন্ধকার ঘরে বন্দী। কিছুক্ষণ পর এক নারী তাঁর কক্ষে এসে জানান, তিনি দৌলতদিয়া যৌনপল্লিতে আছেন।

ভুক্তভোগী তরুণীর ভাষ্য, তিনি যে ঘরে বন্দী ছিলেন, সেই ঘরের বাইরে ১১১ নম্বর লেখা ছিল। পরদিন সেখানকার ‘সরদার’ এসে তাঁকে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার জন্য চাপ দেন। এতে তিনি রাজি না হওয়ায় তাঁর ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। লাঠি দিয়ে মারধরের পাশাপাশি সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা দেওয়া হয় তাঁকে। একপর্যায়ে তাঁকে ইনজেকশন দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়।

ঠিকানা যখন দৌলতদিয়া যৌনপল্লী

ভুক্তভোগী তরুণীর ভাষ্য, তিনি যে ঘরে বন্দী ছিলেন, সেই ঘরের বাইরে ১১১ নম্বর লেখা ছিল। পরদিন সেখানকার ‘সরদার’ এসে তাঁকে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করার জন্য চাপ দেন। এতে তিনি রাজি না হওয়ায় তাঁর ওপর নেমে আসে অমানুষিক নির্যাতন। লাঠি দিয়ে মারধরের পাশাপাশি সিগারেটের আগুনে ছ্যাঁকা দেওয়া হয় তাঁকে। একপর্যায়ে তাঁকে ইনজেকশন দিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সম্পর্ক করতে বাধ্য করা হয়।

আড়াই মাস পর যৌনপল্লি থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হন জানিয়ে ওই তরুণী জবানবন্দিতে বলেন, গত ১৫ নভেম্বর পাঁচ নারীর সঙ্গে যৌনপল্লির বাইরে একটি রূপচর্চাকেন্দ্রে (পারলার) যাওয়ার সুযোগ পান তিনি। রূপচর্চাকেন্দ্রে দুজন প্রবেশ করার পর তিনি সেখান থেকে দৌড়ে পালিয়ে যান। রূপচর্চাকেন্দ্রের খরচ হিসেবে তাঁকে ২৫০ টাকা দেওয়া হয়েছিল। ওই টাকায় বাসে ভাড়া দিয়ে তিনি বাড়ি ফেরেন। লোকলজ্জায় বিষয়টি তিনি তখন চেপে যান।

নালিশি অভিযোগের তদন্ত করেছেন চুয়াডাঙ্গা জেলা পিবিআইয়ের পরিদর্শক সরদার বাবর আলী। তিনি বলেন, ভুক্তভোগী তরুণীকে যিনি যৌনপল্লিতে বিক্রি করেছেন, তিনি পলাতক। এ কারণে যাঁদের কাছে ওই তরুণীকে বিক্রি করা হয়েছিল, তাঁদের শনাক্ত করা যায়নি। আর ভুক্তভোগী তরুণী কোথায় ছিলেন, কাদের কাছে ছিলেন, তার বিস্তারিত তথ্য দিতে পারেননি। এ কারণে ভুক্তভোগী তরুণীর স্বামীকে অভিযুক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.