প্রবাসী আয় আসার গতি শ্লথ, প্রথম ২২ দিনে এসেছে ১০৫ কোটি ডলার

0
69
ডলার

দেশে প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্স আসার গতি চলতি সেপ্টেম্বর মাসেও শ্লথ। এ মাসের প্রথম ২২ দিনে ব্যাংক মাধ্যমে ১০৫ কোটি ৪৯ লাখ মার্কিন ডলারের রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে এই তথ্য উঠে এসেছে।

গত আগস্ট মাসে দেশে প্রবাসী আয় এসেছিল প্রায় ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২১ দশমিক ৫৬ শতাংশ কম। গত বছরের আগস্টে প্রবাসী আয় আসে ২০৪ কোটি ডলার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, চলিত বছরের জুন থেকে টানা তিন মাস প্রবাসী আয় কমছে। জুনে ২২০, জুলাইয়ে ১৯৭ এবং আগস্টে ১৬০ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছে। চলতি মাসে এখন পর্যন্ত যে প্রবণতা, তাতে গত মাসের চেয়েও প্রবাসী আয় আসা কিছুটা কম হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। গত বছরের সেপ্টেম্বরে দেশে ১৫৪ কোটি ডলারের প্রবাসী আয় এসেছিল।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনে রাষ্ট্রায়ত্ত চার ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ৯ কোটি ১১ লাখ ডলার। এই চার ব্যাংকের মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী আয় এনেছে অগ্রণী, ৩ কোটি ৬১ লাখ ডলার। বিশেষায়িত ব্যাংকের মধ্যে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক এনেছে ২ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের প্রবাসী আয়।
অন্যদিকে চলতি মাসের প্রথম ২২ দিনে বেসরকারি ব্যাংকগুলো প্রবাসী আয় এনেছে ৯২ কোটি ৯৮ লাখ ডলারের। বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে বেশি ২৬ কোটি ৭৩ লাখ ডলারের প্রবাসী আয় এনেছে। অন্যদিকে বিদেশি ব্যাংকগুলোর মাধ্যমে প্রবাসী আয় আসার পরিমাণ খুবই কম, মাত্র ৪১ লাখ ডলার।

প্রবাসী আয় কমে যাওয়ায় নতুন করে চিন্তায় পড়েছেন ব্যাংকাররা। কারণ, ডলার-সংকট নিয়ে এমনিতেই চাপে আছে বাংলাদেশ ব্যাংক, প্রতিনিয়ত কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ রিজার্ভ রাখার শর্ত দিয়েছিল। বর্তমানে তার চেয়ে কম রিজার্ভ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা মনে করেন, বর্তমানে যে পদ্ধতিতে ডলারের দাম বাড়তে না দিয়ে স্থানীয় মুদ্রা টাকাকে শক্তিশালী করে রাখা হয়েছে, তাতে প্রবাসী আয় কমে যাচ্ছে। এই নীতি কোনোভাবেই কার্যকর হচ্ছে না। শীর্ষ কর্মকর্তারা বিষয়টি মানতে চাইছেন না, ফলে রিজার্ভেরও পতন ঠেকানো যাচ্ছে না।

চলতি সেপ্টেম্বরের প্রথম ২০ দিনে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ১৬২ কোটি মার্কিন ডলার কমেছিল। তারপরের সাত দিনে রিজার্ভ কমছে আরও ৩০ কোটি ডলার। এর ফলে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাবপদ্ধতি বিপিএম ৬ অনুযায়ী রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ১১৫ কোটি ৪৭ লাখ ডলার। গত ৩১ আগস্ট রিজার্ভ ছিল ২ হাজার ৩০৬ কোটি ৯৫ লাখ ডলার।

গত বছরের সেপ্টেম্বর থেকে বৈদেশিক মুদ্রা লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত ব্যাংকগুলোর সংগঠন বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) ও ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) মিলে রপ্তানি, প্রবাসী আয়সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ডলারের দাম নির্ধারণ করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরামর্শে সংগঠন দুটি প্রায় প্রতি মাসে ডলারের দাম নতুন করে নির্ধারণ করছে। তবে কাজটি করার ক্ষেত্রে বাজারের চাহিদা ও জোগান কতটা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

গত সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, পণ্য বা সেবা খাতের রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয়ের ডলার কেনায় দাম হবে ১১০ টাকা। আর আমদানিকারকদের জন্য ডলারের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১১০ টাকা ৫০ পয়সা।

এদিকে খোলাবাজারে নগদ ডলার এখন বিক্রি হচ্ছে ১১৭ থেকে ১১৮ টাকায়। ফলে ডলারের দামের ক্ষেত্রে ব্যাংক ও খোলাবাজারের মধ্যে বড় ব্যবধানে তৈরি হয়েছে।

খাত-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন, ডলারের দামে এমন ব্যবধান থাকলে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আসা আরও কমতে পারে। এর বিপরীতে হুন্ডির প্রতি আগ্রহ বাড়বে প্রবাসীদের। কারণ, ডলারের দাম যেখানে বেশি পাওয়া যাবে, প্রবাসীরা সেদিকেই ঝুঁকবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.