বন্ডে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কর মওকুফ সুবিধা দিতে পারে সরকার। ফলে সাধারণ মানুষও বন্ডে বিনিয়োগ করবেন বলে আইএমএফকে জানায় বিএসইসি।
দেশে সঞ্চয়পত্রের তুলনায় বন্ডে সুদের হার কম। তাহলে সর্বজনীন পেনশন তহবিলের অর্থ বন্ডে বিনিয়োগ কীভাবে লাভজনক হবে, আর সর্বজনীন পেনশনের সম্ভাবনা কেমন এবং তা থেকে শেয়ারবাজারই–বা উপকৃত হবে কীভাবে।
পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সঙ্গে বৈঠককালে আইএমএফের সফররত চার সদস্যের প্রতিনিধিদল এসব বিষয় জানতে চেয়েছে। গতকাল সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিএসইসির কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে সংস্থাটির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলাম, চার কমিশনার শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ, মিজানুর রহমান, আবদুল হালিম ও রুমানা ইসলামসহ কয়েকজন নির্বাহী পরিচালক অংশ নেন।
জবাবে বিএসইসি বলেছে, বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে সর্বজনীন পেনশনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। আর এটি সফল হলে তা পুঁজিবাজারের জন্যও সহায়ক হবে। কারণ, পেনশনের অর্থ সরকারি বিভিন্ন বন্ড ও সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ হবে। বর্তমানে শেয়ারবাজারে সরকারি ট্রেজারি বন্ড কেনাবেচা হচ্ছে। পেনশন যখন এসব বন্ডে বিনিয়োগ আসা শুরু করবে, তখন বাজারে নতুন মাত্রা যোগ হবে।
নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে শেয়ারবাজারে তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি। এ ছাড়া সর্বজনীন পেনশন দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সহায়ক হবে বলে আইএমএফকে জানিয়েছি।
মিজানুর রহমান, কমিশনার, বিএসইসি
আইএমএফের পক্ষ থেকে যখন প্রশ্ন করা হয়, সঞ্চয়পত্রের তুলনায় বন্ডের সুদের হার কম হওয়ায় কীভাবে তা সম্ভব হবে? জবাবে বিএসইসি জানায়, বন্ডে বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে কর মওকুফ সুবিধা দিতে পারে সরকার। ফলে সাধারণ মানুষও বন্ডে বিনিয়োগে এগিয়ে আসবেন।
আইএমএফ পুঁজিবাজারের বর্তমান তারল্য পরিস্থিতি নিয়েও জানতে চেয়েছে। বিএসইসি বলেছে, দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে বাজারে তারল্য প্রবাহে কিছুটা টান লেগেছে। এ কারণে ৩ হাজার কোটি টাকার লেনদেন এখন ৫০০ কোটি টাকার আশপাশে রয়েছে। নির্বাচনের পর তারল্য পরিস্থিতির উন্নতির আশা করছে তারা।
বৈঠক সূত্রমতে, আলোচনায় শেয়ারবাজারে নতুন ও সরকারি কোম্পানির তালিকাভুক্তির অগ্রগতির বিষয়টিও ওঠে। বিএসইসি তখন জানায়, সরকারি বেশ কিছু কোম্পানি শেয়ারবাজারে আসতে পারে। সেই প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। এ সময় আইএমএফের সদস্যরা জানতে চান, সরকারি যেসব কোম্পানির মুনাফা ও ব্যবসা ভালো নয়, সেগুলো বাজারে এলে তাতে কার কী লাভ হবে? জবাবে বিএসইসির পক্ষ থেকে বলা হয়, শেয়ারবাজারে কোনো কোম্পানি তালিকাভুক্ত হলে তাতে ওই কোম্পানির সুশাসন ও নিয়মকানুন পরিপালনের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হয়।
পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও গ্রিন বন্ডের বিষয়ে বিএসইসির উদ্যোগ সম্পর্কেও জানতে চায় আইএমএফ। জবাবে বিএসইসি জানায়, গ্রিন বন্ডের পাশাপাশি নারীদের জন্য অরেঞ্জ বন্ড চালুর বিষয়টিও সক্রিয় বিবেচনায় রয়েছে। এ ছাড়া দেশে প্রথমবারের মতো কমোডিটি এক্সচেঞ্জ চালুর উদ্যোগও অনেক এগিয়েছে। সপ্তাহখানেকের মধ্যে এ নিয়ে গেজেট প্রকাশিত হবে। আগামী বছর কমোডিটি এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম শুরু করা যাবে।
বৈঠক সম্পর্কে বিএসইসির কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, দেশের চলতি হিসাব ও লেনদেনের ভারসাম্যে (ব্যালান্স অব পেমেন্ট) চাপ তৈরি হওয়ায় আর্থিক খাতের তারল্যেও চাপ পড়েছে। এর প্রভাব পড়েছে শেয়ারবাজারের লেনদেনেও। তিনি বলেন, ‘আমরা আইএমএফকে জানিয়েছি, নির্বাচন–পরবর্তী সময়ে শেয়ারবাজারে তারল্য পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে আশা করছি। এ ছাড়া সর্বজনীন পেনশন দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারের উন্নয়নে সহায়ক হবে বলেও আইএমএফকে জানিয়েছি।’
পিপিপি কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বৈঠক
আইএমএফ গতকাল সরকারি-বেসরকারি অংশীদারি (পিপিপি) কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও বৈঠক করে জানতে চেয়েছে, তারা কোন পদ্ধতিতে কাজ করে এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সঙ্গে সম্পর্ক আছে কি না। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, প্রচ্ছন্ন দায়, প্রকল্প বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়েও জানতে চেয়েছে আইএমএফ। খরচ মেটাতে সরকার যেমন বাজেটের ২৫ শতাংশই দেশি-বিদেশি উৎস থেকে ঋণ নেয়, সরকারি আর্থিক ও অ-আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকেও নিজেদের চলার জন্য ঋণ নিতে হয়।
পিপিপি কর্তৃপক্ষ জানায়, তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি নিয়ে আইএমএফের ভালো কোনো পদ্ধতি (টুলস) থাকলে তা অনুসরণ করতে তারা রাজি আছে।
যোগাযোগ করলে পিপিপি কর্তৃপক্ষের মহাপরিচালক মো. আবুল বাসার বলেন, ‘তাদের ধারণা ছিল আমরা পরিকল্পনা কমিশনের আওতায় প্রকল্প বাস্তবায়ন করি। বলেছি, তা করি না। আমরা কাজ করি মূলত সরকার ও বেসরকারি অংশীদারদের রক্ষাকবচ হিসেবে। অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি থেকে এগুলো অনুমোদন পায়।’