পােশাকের অপ্রচলিত বাজারে আস্থা বাড়ছে রপ্তানিকারকদের

0
94

তৈরি পোশাকের নতুন বা অপ্রচলিত বাজার হিসেবে পরিচিত দেশগুলোতে রপ্তানির গতি বেশ ধারাবাহিক। স্থানীয় কিংবা বৈশ্বিক– সব প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যেও রপ্তানি বাড়ছে এসব দেশে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক অর্থাৎ গত জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত এসব দেশে রপ্তানি বেড়েছে অন্যান্য বাজারের তুলনায় বেশি হারে। পোশাকের মোট রপ্তানিতে অপ্রচলিত বাজারের হিস্যাও বাড়ছে। এসব দেশের প্রতি আস্থা ক্রমেই বাড়ছে রপ্তানিকারকদের। প্রচলিত বাজারের প্রতি অতিনির্ভরতার ঝুঁকি এড়াতে অপ্রচলিত বাজার সম্প্রসারণে নানা উদ্যোগও আছে উদ্যোক্তাদের। এসব বাজারে রপ্তানিতে ৪ শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিয়ে উৎসাহিত করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে।

বাংলাদেশের পোশাকের প্রচলিত ও প্রধান বাজার হচ্ছে ২৭ জাতির জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ), যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা। এসব দেশ দিয়েই রপ্তানি শুরু হয় পোশাকের। এখনও এসব বাজারেই রপ্তানির পরিমাণ বেশি। এর বাইরের বাকি দেশগুলোকে অপ্রচিলত বাজার হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে ১৮ দেশে বেশি পরিমাণে রপ্তানি হয়ে থাকে। এর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া, চীন, রাশিয়া, আরব আমিরাত, কোরিয়া ও ভারতে রপ্তানি সবেচেয়ে বেশি। তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএ এবং রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি) সূত্রে জানা গেছে, গত তিন মাসে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে। রপ্তানি হয়েছে ২২৪ কোটি ২৪ লাখ ডলারের পোশাক। যেখানে একক দেশ হিসেবে প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি বেড়েছে মাত্র ২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২০৭ কোটি ডলারের কিছু কম। অন্যদিকে জোটগত প্রধান বাজার ইইউতে রপ্তানি বেড়েছে ১১ দশমিক ৪৭ শতাংশ। অপ্রচলিত বাজারের মধ্যে সবচেয়ে বড় জাপান। গত প্রান্তিকে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে ৩৯ শতাংশেরও বেশি। রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৪৫ কোটি ডলারের। তবে জাপানের চেয়েও বেশি হারে রপ্তানি বেড়েছে অপ্রচলিত শ্রেণির দ্বিতীয় প্রধান বাজার অস্ট্রেলিয়ায়। রপ্তানি বেড়েছে ৫৪ শতাংশ হারে। মোট ৩৪ কোটি ৪৭ লাখ ডলারের পোশাক গেছে দেশটিতে। ভারত অপ্রচলিত শ্রেণির তৃতীয় প্রধান বাজার। গত প্রান্তিকে অবশ্য প্রতিবেশী দেশটিতে রপ্তানি কমেছে ৮ শতাংশের মতো। ২৮ কোটি ডলারের কিছু বেশি মূল্যের পোশাক গেছে ভারতে। জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান সমকালকে বলেন, প্রচলিত বাজারের ওপর অতিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে চান তারা। এ উদ্দেশ্যে অপ্রচলিত বাজারে রপ্তানি বাড়াতে ওইসব দেশের কূটনীতিক এবং ব্যবসায়ীদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছেন তারা। যেসব দেশকে বেশি সম্ভাবনাময় মনে হয়, সেসব দেশে একাধিকবার সফর করেছেন তিনি নিজে। এ ধরনের সব বাজারে স্থানীয় মেলা এবং প্রদর্শনীতে নিয়মিত অংশ নেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে বিজিএমইএর সদস্যদের। এ ছাড়া বাজার গবেষণা এবং নেটওয়ার্কিং কার্যক্রম জোরদার করা হচ্ছে। কোন বাজারে কী ধরনের পোশাকের চাহিদা বেশি, কোন মৌসুমে কী ধরনের পোশাকের কদর থাকে– এসব বিষয়ে গবেষণা করা হচ্ছে। রপ্তানি বাড়ার ফলে পোশাক রপ্তানিতে অপ্রচলিত বাজারের হিস্যাও বেড়েছে। কমেছে প্রচলিত বাজারের হিস্যা। গত প্রান্তিক পর্যন্ত প্রচলিত বাজারের হিস্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯ দশমিক ৩২ শতাংশ, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১৭ দশমিক ৪৮ শতাংশ। অন্যদিকে জোটগত প্রধান বাজার ইইউর হিস্যা ৪৮ দশমিক শূন্য ৮ থেকে ৪৭ দশমিক ৪০ শতাংশে নেমে এসেছে। আর একক প্রধান বাজার যুক্তরাষ্ট্রের হিস্যা ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ থেকে কমে এখন ১৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। কানাডায় এ হার এখন ৩ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ। গত অর্থবছরের একই প্রান্তিকে যা ছিল ৩ দশমিক ২৬ শতাংশ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.