উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আহাদী হোসেন বলেন, ২০২১ সালের মার্চে প্রকল্পের ৫৪০টি ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়। এরপর তাঁরা ঘর বরাদ্দ দিতে ভূমিহীনদের তালিকা করা শুরু করেন। কিন্তু প্রকল্পটি চরাঞ্চলে হওয়ায় ঘর ও জমি বরাদ্দ নিতে মানুষের চাহিদা কম। যাতায়াতের সড়ক না থাকায় মানুষ সেখানে যেতে চান না। চরের বিভিন্ন সড়ক থেকে প্রকল্প এলাকাটি বিচ্ছিন্ন। সেখানে সড়ক নির্মাণের জন্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি প্রস্তুত করা হচ্ছে।
পিআইও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নড়িয়ার নওপাড়া ইউনিয়নটি পদ্মার দুর্গম চরে অবস্থিত। চরের চারপাশ পদ্মা নদীবেষ্টিত। নৌপথই এলাকাবাসীর যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম। চরের পানসাড়া এলাকাটিতে জনবসতি কম। সেখানে আবাদি ও অনাবাদি ফসলি জমি বেশি। ওই ফসলি জমির মাঠের মধ্যে খাসজমি ভরাট করে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্প-২–এর কাজ শুরু করে উপজেলা প্রশাসন।
সূত্র জানায়, পানসাড়া, পানসাড়া-২ ও পানসাড়া-৩ নামে তিনটি আশ্রয়ণ প্রকল্প নির্মাণ করা হয়। তিনটি প্রকল্পের জন্য ২৮ একর নিচু জমি ভরাট করা হয়েছে। জমি ভরাট করতে ৮৪২ টন গম বরাদ্দ দেয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। নড়িয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় প্রতি টন গম ২০ হাজার টাকা দরে ১ কোটি ৬৮ লাখ ৪০ হাজার টাকা বিক্রি করে মাটি ভরাটের কাজ সম্পন্ন করে। এরপর ওই জায়গায় ঘর নির্মাণ করা হয়। টিনের চাল ও ইটের দেয়াল দিয়ে ১০৮টি ব্যারাক নির্মাণ করা হয়। প্রতিটি ব্যারাকে পাঁচটি করে ঘর আছে। সঙ্গে সামনে ও পেছনে বারান্দা, গভীর নলকূপ, শৌচাগার, গোসলখানা আছে। প্রতিটি ভূমিহীন পরিবারকে ৬ শতাংশ জমি ও একটি ঘর দলিল করে দেওয়ার কথা।
কয়রায় আশ্রয়ণ প্রকল্প এমন বেহাল কেন
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, প্রকল্পের নির্মাণকাজ শেষ করে ২০২১ সালের মার্চে ঘরগুলো উপজেলা প্রশাসনকে বুঝিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। তখন স্থানীয় প্রশাসন পানসাড়া প্রকল্পে ৭৫টি ভূমিহীন পরিবারকে ৬ শতাংশ করে জমি ও ঘর বরাদ্দ দিয়েছিল। কিন্তু অনেক পরিবার ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে বসবাস শুরু করেনি। এর মধ্যে ৩০টি পরিবার গবাদিপশু লালনপালন ও কৃষিজমির ফসল রাখার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পে আছে। বাকি ৫১০টি ঘর ফাঁকা পড়ে আছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নওপাড়া খেয়াঘাট থেকে পানসাড়া আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ ও ৩-এর দূরত্ব দুই কিলোমিটার। কিন্তু প্রকল্প এলাকায় যাওয়ার কোনো সড়ক নেই। চরের বালু ও ফসলি জমির ওপর দিয়ে আশ্রয়ণ প্রকল্পে যেতে হয়। আশ্রয়ণের ঘরে কেউ না থাকায় অনেক ঘর ভেঙে গেছে। ঘরের সামনে জন্মেছে ঘাস। ঝড়ে উড়ে গেছে কয়েকটি ঘরের চালা। নলকূপের পানি ওঠানোর মাথা নেই একটিতেও। আর প্রকল্প-৩–এর পাশেই পানসাড়া প্রকল্প। সেখানে ঘর আছে ১৫০টি। সেখানে বসবাস করছে ৩০টি পরিবার।
নওপাড়ার বাসিন্দা আবুল কালাম পদ্মা নদীতে মাছ ধরেন। বাড়ি থেকে নদীতে মাছ ধরার জায়গা দূরে হওয়ায় তিনি মাঝেমধ্যে পানসাড়া-২ আশ্রয়ণ প্রকল্পের একটি ঘরে থাকেন। আবুল কালাম বলেন, আশ্রয়ণ প্রকল্পটা চরের মাঝে। কেউ সেখানে থাকতে চায় না। কারণ, আশপাশে মানুষের ঘরবাড়ি নেই। যাতায়াতের কোনো রাস্তা নেই। বর্ষাকালে পানি-কাদায় এখানে চলাচল করা অসম্ভব হয়ে পড়ে।
নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাকির হোসেন মুন্সি বলেন, প্রকল্পের ঘরগুলো শরীয়তপুরের শেষ সীমানায় দুর্গম চরে নির্মাণ করা হয়েছে। এলাকাটির একদিকে মুন্সিগঞ্জের চর, অন্যদিকে চাঁদপুরের চর। যোগাযোগব্যবস্থা দুর্গম হওয়ায় সেখানে মানুষ বসবাস করতে ভয় পায়। বর্ষায় পানিতে তলিয়ে থাকে। নদীভাঙনের আতঙ্কও আছে। এসব কারণে কেউ ওই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ঘর ও জমি নিতে আগ্রহী হন না। এমন জায়গায় প্রকল্প করা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে তিনি মন্তব্য করেন।