পদযাত্রায় নিহত সজীবের মা-বাবার কান্না থামছেই না

0
112

লক্ষ্মীপুরে বিএনপির পথযাত্রায় যোগ দিতে এসে হামলায় নিহত মো. সজীবের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। কয়েকদিন পর তাঁর বিদেশে যাওয়ার কথা ছিল। তাঁর স্বপ্ন আর পূরণ হলো না। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে তাঁর মৃত্যু হয়। ছাত্রলীগ তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করেছে বলে দাবি করেছে বিএনপি। সজীবের বাড়ি জেলার সদর উপজেলার চন্দ্রগঞ্জ ইউনিয়নের ধন্যপুর গ্রামে।

সজীবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তাঁকে হারিয়ে তাঁর মা নাজমা বেগম, বাবা আবু তাহের ও বোন কাজল আক্তার আহাজারি করছেন। কিছুতেই থামছে না তাদের কান্না। তাঁর মৃত্যুতে প্রতিবেশী এবং স্বজনের মধ্যেও শোক নেমে এসেছে। সজীব ছিলেন পরিবারের ছোট ছেলে। তাঁর মা-বাবাকে সান্ত্বনা দিতে ছুটে এসেছেন চরশাহী ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক সাফায়ত হোসেন স্বপন ও সাংগঠনিক সম্পাদক নাছির উদ্দীন।

সজীবের মা কাঁদতে কাঁদতে বারবার বলেন, ‘বাবা তুই কই? বাবারে তুই বুঝি আমার জন্য আর ওষুধ কিনে আনবি না, মা তোকে বুকে ধরে রাখতে চায়। তুই তো আমার সবচেয়ে আদরের।’ সজীবের বাবা আবু তাহের বলেন, তাঁর ছেলে পেশায় টাইলস মিস্ত্রি। তাঁর তিন ছেলে। বড় ছেলে সৌদি আরব প্রবাসী। কয়েকদিন পর সজীবেরও সৌদি যাওয়ার কথা ছিল। জানা গেছে, মঙ্গলবার বিকেলে বিএনপির পদযাত্রা চলাকালে শহরের সামাদ মোড়ে একদল দুর্বৃত্ত কৃষক দল কর্মী সজীবকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। তিনি এ সময় দৌড়ে কলেজ সড়কের মদিনউল্যা হাউজিংয়ের পাশের ফিরোজা টাওয়ারের একটি ভবনের নিচে আশ্রয় নেন। সেখানে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে তাঁর মৃত্যু হয়। স্থানীয় এবং তাঁর স্বজনরা জানান, সজীব এখনও বিয়ে করেননি। এলাকায় তাঁর কোনো শত্রুও নেই। গতকাল বুধবার জোহরের নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।

সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক জয়নাল আবেদীন জানান, সজীব নামে এক যুবককে হাসপাতালে আনা হয়। অধিক রক্তক্ষরণে আগেই তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর পিঠে ও বুকে চারটি ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে।

বিএনপির অভিযোগ, ছাত্রলীগের ক্যাডাররা তাঁকে কুপিয়ে হত্যা করেছে। সজীবের পকেটে কৃষক দলের ব্যাজ এবং ক্যাপ পাওয়া গেছে। পরিবারের পক্ষ থেকেও নিশ্চিত করা হয়েছে, সজীব বিএনপির পদযাত্রায় অংশ নিতে জেলা শহরে এসেছিলেন।

হত্যাকাণ্ড অরাজনৈতিক, দাবি পুলিশের

পুলিশ সুপার মাহফুজ্জামান আশরাফের দাবি, সজীব হত্যাকাণ্ড অরাজনৈতিক। পুলিশ বা কারও গুলিতে নয়, ধারালো অস্ত্র বা ছোরার আঘাতে সজীবের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল নিজ কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

পুলিশ সুপার বলেন, মরদেহ উদ্ধারের স্থান থেকে সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সজীব আহত অবস্থায় ফিরোজা ভবনের একটি বাসায় ঢুকে পড়ে। মৃত্যুর আগে সেখানকার এক ব্যক্তির সঙ্গে সজীবের কথা হয়েছে। সজীব ওই ব্যক্তিকে বলেছেন, সে বিএনপির কর্মসূচিতে আসেননি। চার-পাঁচজন লোক তাঁকে কুপিয়েছে। তাঁর কাছে তারা টাকা পান। এর পর সজীব আর কোনো কথা বলতে পারেননি।

পুলিশ সুপার আরও বলেন, ঘটনাস্থলে থাকা ব্যক্তিরা ৯৯৯-এ কল করে সজীবের চিকিৎসার জন্য পুলিশের সহযোগিতা চেয়েছেন। কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স চালককেও কল করেছেন। কিন্তু বিএনপির সঙ্গে সংঘর্ষের কারণে অ্যাম্বুলেন্স চালকরা যেতে পারেননি। পুলিশ যাওয়ার আগেই প্রচুর রক্তক্ষরণে সজীব মারা যান। বিএনপির হামলায় আমাদের ২৫-৩০ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.