নির্বাচন নিয়ে সরকার নয়, গণমাধ্যম চাপে আছে: পররাষ্ট্রমন্ত্রী

0
156
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

আগামী জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সরকার কোনো চাপে নেই বরং গণমাধ্যম চাপে আছে বলে মন্তব্য করেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের ইন্দোনেশিয়া সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।

নির্বাচন নিয়ে পশ্চিমাদের চাপ রয়েছে এবং দিল্লিতে অনুষ্ঠেয় জি-২০ বাংলাদেশ ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক নিয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সরকার প্রধানের বৈঠকগুলো শেষ মুহূর্তে ঠিক হয়। দুই প্রধানমন্ত্রীর অবশ্যই বৈঠকের সম্ভাবনা আছে। ভারতে আমরা গেলে সাক্ষাতের অবশ্যই সম্ভাবনা আছে এবং তারা (হাসিনা-মোদি) দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন।

পশ্চিমাদের চাপ প্রসঙ্গে আব্দুল মোমেন বলেন, আমরা খুব চাপটাপের মধ্যে নেই। আসলে এটা ঠিক না। মিডিয়া মনে হয় চাপে আছে। আমরা যেটাতে বিশ্বাস করি, আমরা একটা স্বচ্ছ নির্বাচন করতে চাই। আমরা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে চাই। শেখ হাসিনা সরকার বাংলাদেশে নির্বাচন ও গণতান্ত্রিক ধারাকে টেকসই করেছে। শেখ হাসিনা অবাধ, স্বচ্ছ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের বিষয়ে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এটাতে আমরা বিশ্বাস করি। সুতরাং আমরা কোনো চাপে নেই।

তিনি বলেন, আমরা নিজেদের তাগিদে স্বচ্ছ নির্বাচন করব। কারও চাপের মুখের পড়ে স্বচ্ছ নির্বাচনের কথা চিন্তা করি না। অন্য যারা আমাদের চাপ দেন তারা নিজেদের চেহারা দেখতে পারে, তাদের ওখানেও তো গন্ডগোল। তাদের ওখানে নির্বাচন নিয়ে সমস্যা।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলা নিয়ে তথ্যের ঘাটতির কারণে আন্তর্জাতিক ব্যক্তিত্বরা বিবৃতি দিয়েছেন বলে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, আমরা কোনো চাপ মনে করি না। আমরা মনে করি, এখানে তথ্যগত ঘাটতি আছে। বড় নেতাদের হয়তো কেউ বলেছে, বাংলাদেশ এ রকম নামি-দামি লোককে হয়রানি করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো তারা বিবৃতি দিয়েছেন। এখানে বোধ হয় তথ্যের ঘাটতি আছে, অজ্ঞতার কারণ আছে।

তিনি আরও বলেন, অনেকে মনে করছেন রাজনৈতিক কারণে কিংবা অন্য কোনো কারণে হয়রানি করা হচ্ছে। কিন্তু আমরা যত দূর জানি, মামলাগুলো সরকার করেনি। আমরা আশা করব যে যারা চিঠি লিখেছেন, তারা বিষয়টা আরও জানবেন এবং তারা যদি জানতে চান, তাহলে আমরা অবশ্যই তথ্যগুলো পৌঁছে দেব।

আগামী ১১ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্টের সংক্ষিপ্ত ঢাকা সফরে স্যাটেলাইট কারখানা স্থাপণ নিয়ে প্রশ্ন করলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রথম বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ফ্রান্সের সহায়তায় করেছি। আমরা আরও দুটি স্যাটেলাইট করতে চাই। ফ্রান্সের প্রযুক্তি ভালো। তারা স্যাটেলাইট কারখানা করার প্রস্তাব করেছে। আমরা এটা বিবেচনা করছি, চিন্তা-ভাবনা করছি। আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। আমরা যখন ফ্রান্সে গিয়েছিলাম গত বছর,  তখন তারা প্রস্তাবটা দিয়েছিল। আমরা এটা বিচার বিশ্লেষণ করে দেখছি। আমি মনে করছি, এটাকে আমরা স্বাগত জানাতে পারি।

বাংলাদেশ ফ্রান্স থেকে ১০টি এয়ার বাস কিনতে চায় জানিয়ে আব্দুল মোমেন বলেন, তারা কিছু বিমান বিক্রি করতে চায়। আমরা রাজি হয়েছি। আমরা ১০টা কিনব। এর মধ্যে দুটো হচ্ছে কার্গো বিমান। আমরা দুটো চাচ্ছি বোয়িং ও এয়ার। মাঝখানে ডলার সংকটের কারণে কেনার প্রক্রিয়া দেরি হয়েছে।

আসিয়ানের ৪৩তম শীর্ষ সম্মেলন এবং ১৮তম পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আগামী ৫ সেপ্টম্বর ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় যাচ্ছেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। রাষ্ট্রপ্রধানের সফরে ইন্দোনেশিয়ার সঙ্গে জ্বালানি এবং স্বাস্থ্য খাতে সহযোগিতা নিয়ে দুটি সমঝোতা স্মারক সইয়ের কথা রয়েছে। এছাড়া রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ইন্দোনেশিয়া সফরকালে দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদোর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন।

তিনি বলেন, পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে আলাপ-আলোচনার ছয়টি অগ্রাধিকার ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। যেগুলোর মধ্যে থাকবে-পরিবেশ ও জ্বালানি, শিক্ষা, অর্থ, বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা এবং মহামারী রোগ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং আসিয়ান সংযোগ। এসব অগ্রাধিকার ক্ষেত্রগুলোতে সহযোগিতা বিস্তারের জন্য কর্ম পরিকল্পনাও তৈরি করা হয়েছে। পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে অন্যান্য ক্ষেত্রে সহযোগিতার মধ্যে খাদ্য নিরাপত্তা, বাণিজ্য ও অর্থনীতি, সমুদ্র নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়েও আলোচনা করা হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.