নতুন কারখানার পরিকল্পনা হয়, বাস্তবায়ন হয় না

0
141

খালিশপুরে ১৯৫৭ সালে ভৈরব নদের তীরে যাত্রা শুরু হয়েছিল খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিলের। লোকসানের কারণে ২০০২ সালের ৩০ নভেম্বর মিলটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পাশেই ১৯৬৫ সালে স্থাপিত খুলনা হার্ডবোর্ড মিলটিও বন্ধ করে দেওয়া হয় ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর। এই দুই কারখানার জমিতে অনেক দিন ধরে অন্য শিল্পকারখানা স্থাপনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে আসছে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি)। অর্থ জোগাড়ে নিউজপ্রিন্ট মিলের ৫০ একর জমি নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির (এনডব্লিউপিসিএল) কাছে বিক্রিও করে তারা। এতে নতুন শিল্পকারখানা হবে ভেবে কর্মসংস্থানের জন্য আশাবাদী হয়ে উঠেছিলেন বন্ধ দুই মিলের শ্রমিকসহ স্থানীয় লোকজন। কিন্তু তাদের আশায় গুড়েবালি। যে উদ্দেশ্যে বিসিআইসির জমি বিক্রি, সেই হার্ডবোর্ড ও নিউজপ্রিন্টের মিলের বাকি জমিতে অন্য কোনো কারখানা হয়নি। বিভিন্ন সময় কাগজকল, সার কারখানা, এসিড কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানানো হলেও তা এখনও আলোর মুখ দেখেনি। কেন এসব কারখানার পরিকল্পনা করেও হলো না, তা নিয়ে একেক সময় একেক বক্তব্য দিয়েছে বিসিআইসি। এমন অবস্থায় বন্ধ মিল দুটির জমিতে এবার নতুন করে ওষুধের কাঁচামাল বা কাগজকল নির্মাণের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছে তারা। তবে এ পরিকল্পনা আদৌ বাস্তবায়ন হবে কিনা, তা নিয়ে সন্দিহান স্থানীয়রা।

নিউজপ্রিন্ট মিল সিবিএর সাবেক সভাপতি নিজামউর রহমান লালু বলেন, নতুন কাগজকল নির্মাণের কথা বলে জমি বিক্রি হলো; কিন্তু এর কোনো খবর নেই। বিসিআইসি মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছে।

বিসিআইসি সূত্র জানায়, নিউজপ্রিন্ট মিলের মোট জমির পরিমাণ ৮৭.৬১ একর। এর মধ্যে ৩৭ একরে মূল কারখানা অবস্থিত। বাকি ৫০ একর জায়গায় কর্মকর্তাদের আবাসিক এলাকা, কর্মচারী ও শ্রমিকদের কোয়ার্টার, হাসপাতালসহ অন্যান্য স্থাপনা ছিল। ২০১৮ সালে মিলের মূল অংশ বাদে বাকি ৫০ একর জমি এনডব্লিউপিসিএলের কাছে বিক্রি করে দেওয়া হয়। গাছপালা, স্থাপনাসহ এই জমির মূল্য নির্ধারণ হয় ৫৮৬ কোটি টাকা। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ২৫৪ কোটি টাকা পরিশোধ করে এনডব্লিউপিসিএল।

নিউজপ্রিন্ট মিলের পাশেই রয়েছে বিসিআইসি নিয়ন্ত্রিত বন্ধ খুলনা হার্ডবোর্ড মিল। এর জমির পরিমাণ ৯.৯৬ একর। সেই জমিটিও দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে পরিত্যক্ত অবস্থায়। তাই উভয় মিলের মোট ৪৭.৬১ একর জমিতে নতুন কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করে চলেছে বিসিআইসি। কিন্তু কোনো পরিকল্পনাই বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ নিউজপ্রিন্ট ও হার্ডবোর্ড মিলের পাশে থাকা চারটি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলও ২০২০ সালে ১ জুলাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় দুটি পাটকল আগামী মাসে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
বিসিআইসি ও নিউজপ্রিন্ট মিল কর্তৃপক্ষ জানায়, বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় চালুর জন্য কারখানাটি ২০০৫ সালে প্রাইভেটাইজেশন কমিশনে তালিকাভুক্ত হয়। এর পর মিলটি বিক্রির জন্য দুই দফা দরপত্র আহ্বান করা হলেও সাড়া মেলেনি। এমন অবস্থায় ২০০৯ সালে মিলের জমিতে বিকল্প কারখানা স্থাপনের জন্য কারিগরি সমীক্ষা চালায় বিসিআইসি। এতে বলা হয়, ৪২২ কোটি টাকা ব্যয়ে মিলে নতুন কাগজকল স্থাপনা করা যেতে পারে। পরে সেই পরিকল্পনা আর আলোর মুখ দেখেনি। ২০১৪ সালে ফের মিলের জমিতে নতুন তিনটি কাগজকল নির্মাণের প্রস্তাব আসে। সে সময় অর্থ সংস্থানের জন্য এনডব্লিউপিসিএলের কাছে মিলের ৫০ একর জমি বিক্রি করে দেওয়া হয়। কথা ছিল, সেই টাকা দিয়ে কাগজকল হবে। কিন্তু ২০১৮ সালে জমি বিক্রির পর সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে বিসিআইসি। বলা হয়, যেহেতু কর্ণফুলী পেপার মিলসহ দেশের অন্য কাগজকলগুলোর অবস্থা ভালো নয়, তাই খুলনায় আরেকটি কাগজকল হলে তা লাভজনক হবে না।

২০১৯ সালের ৭ ডিসেম্বর বন্ধ মিল পরিদর্শনে এসে এই জমিতে একটি টিএসপি সার কারখানা নির্মাণের কথা জানান শিল্প প্রতিমন্ত্রী। কিন্তু পরের বছরই সিদ্ধান্ত বাতিল করা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, নৌপথে সার তৈরির কাঁচামাল আনার মতো নাব্য ভৈরব নদীতে নেই। ২০২১ সালের জানুয়ারিতে মিলের জমিতে কার্বন, এসিড ও কাগজকল নির্মাণের নতুন পরিকল্পনা নেওয়া হয়। সেটিও আলোর মুখ দেখেনি। সর্বশেষ ২০২২ সালে নিউজপ্রিন্ট ও হার্ডবোর্ড মিলের ৪৭.৬১ একর জমিতে কী ধরনের কারখানা স্থাপনা করা যেতে পারে, তা নিয়ে নতুন আরেকটি সমীক্ষা চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। গত ১৩ জুলাই সেই সমীক্ষার খসড়া জমা পড়েছে। সেখানে ওষুধ তৈরির কাঁচামাল, কাগজকল অথবা অন্য একটি কারখানা স্থাপন করা যেতে পারে বলে মতামত দেওয়া হয়েছে।

নিউজপ্রিন্ট ও হার্ডবোর্ড মিলের বর্তমান এমডি আবু সাঈদ বলেন, খসড়া প্রতিবেদনটি যাচাই-বাছাইয়ের জন্য গঠিত কমিটি প্রস্তাব দেখে বিবেচনার জন্য বিসিআইসির সভায় উত্থাপন করবে। সেখানে আলোচনার পর পরামর্শক নিয়োগ দেওয়া হবে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আরও সময় প্রয়োজন। বিসিআইসির পরিকল্পনা বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কাজী আশরাফুল ইসলাম বলেন, সমীক্ষা প্রতিবেদন ইতিবাচক বলে জানতে পেরেছি। আশা করছি, এবার ভালো কিছু হবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.