দ্বন্দ্বের জেরে সম্মেলন হচ্ছে না

0
246
টাঙ্গাইল জেলার মানচিত্র

টাঙ্গাইলের মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলন হয়েছিল ২০১৩ সালে। এরপর কেটে গেছে ১০ বছর। এর মধ্যে কয়েকবার সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সম্মেলন হয়নি।

মধুপুর ও ধনবাড়ী উপজেলা নিয়ে গঠিত টাঙ্গাইল-১ সংসদীয় আসন। ২০০১ সাল থেকে এ আসনের সংসদ সদস্য কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক। কৃষিমন্ত্রীর অনুসারী নেতা–কর্মীদের সঙ্গে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীদের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্য রূপ নিয়েছে। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে। ফলে দলের উপজেলা শাখার সম্মেলন আবার থমকে গেছে।

স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, ২০১৩ সালের জুন মাসে অনুষ্ঠিত মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে খন্দকার শফিউদ্দিন মনি সভাপতি ও ছরোয়ার আলম খান ওরফে আবু খাঁ সাধারণ সম্পাদক পদে আবারও দায়িত্ব পান। এই দুজন ১৯৯৬ সাল থেকে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন।

জেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানান, জেলার ১২টি উপজেলার মধ্যে ১১টিতে নিয়মিত সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। ব্যতিক্রম শুধু মধুপুর উপজেলা। এ প্রসঙ্গে মধুপুরের কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা জানান, এটি কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের নির্বাচনী এলাকা। তবে তিনি সব সময় দলের সব দায়িত্ব দিয়ে রাখতেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খানকে। ছরোয়ার আলম সম্মেলন করার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন না। তাই দীর্ঘদিন এ উপজেলায় সম্মেলন হয়নি।

স্থানীয় নেতারা জানান, কয়েক মাস আগে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সে লক্ষ্যকে সামনে রেখে বিভিন্ন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। চারটি ইউনিয়নের সম্মেলন সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু এর মধ্যে ছরোয়ার আলম খান আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন বলে ঘোষণা দেন। তিনি একটি বেসরকারি টেলিভিশনে কৃষিমন্ত্রী সম্পর্কে নেতিবাচক মন্তব্য করেন। এ নিয়ে জেলা আওয়ামী লীগ তাঁকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। এর পর থেকে কৃষিমন্ত্রীর অনুসারীদের সঙ্গে ছরোয়ার আলমের অনুসারীদের তীব্র দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এই দ্বন্দ্বের মধ্যে ছরোয়ার আলমের পক্ষে অবস্থান নেন খন্দকার শফিউদ্দিন মনি।

গত ২৩ জুন আওয়ামী লীগের দুই পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ, পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হন। এর পর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে মুখ দেখাদেখি বন্ধ। সম্মেলন নিয়ে দলের মধ্যে এখন কোনো আলোচনা নেই।

কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাকের অনুসারী অংশের নেতা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ইয়াকুব আলী জানান, দলের উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ছরোয়ার আলম খান দলকে কুক্ষিগত করে রেখেছিলেন। তাই বারবার তাগিদ দেওয়ার পরও তিনি সম্মেলনের উদ্যোগ নেননি। ছরোয়ার আলম ও তাঁর অনুসারীদের স্বেচ্ছাচারিতার কারণে দীর্ঘদিন সম্মেলন হয় না।

এ ব্যাপারে জানতে ছরোয়ার আলম খানের সঙ্গে বারবার মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে খন্দকার শফিউদ্দিন মনি বলেন, ‘আমরা সব সময় সম্মেলন করতে চেয়েছি, সব সময় প্রস্তুত ছিলাম। কিন্তু হঠাৎ এসেই অনেকে নেতা হতে চান। তাই নানা জটিলতায় দীর্ঘদিন সম্মেলন হয়নি। এবার সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত থমকে যায়।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.