দুবাইয়ে পলাতক আরাভ খানের ১০ বছরের কারাদণ্ড

0
101
দুবাইয়ের সর্বোচ্চ ভবন বুর্জ খলিফা।

ঢাকায় পুলিশ হত্যা মামলার আসামি রবিউল ইসলাম ওরফে আরাভ খান। বাংলাদেশের নথিপত্রে তাঁর নাম রবিউল ইসলাম, ভারতের নথিপত্রে আরাভ খান। তাঁর ব্যবসায়িক ঠিকানা আরাভ জুয়েলার্স, নিউ গোল্ড সুক, দুবাই। আরাভ খানের অপরাধ, তিনি পুলিশ হত্যা মামলার আসামি। এর ফলে আরাভ খান এখন দেশের বহুল আলোচিত বিষয়ে পরিণত হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, পুলিশ প্রধানসহ দেশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি তাঁকে নিয়ে কথা বলেছেন। গোয়েন্দা পুলিশ তাঁর বিষয়ে জোরেশোরে কাজ শুরু করছে।

এসবই শুরু হয়েছে ক্রিকেট তারকা সাকিব আল হাসান এবং কয়েকজন বিনোদন ও ইউটিউব তারকার আরাভ জুয়েলার্সের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে দুবাইয়ে যাওয়ার পর থেকে। ফলে আরাভ খানের মতো দুবাইও এখন আলোচনায়।

আরাভ খানের পেছনে কারা?

গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে পেশাগত কাজে সংযুক্ত আরব আমিরাতে (ইউএই) গেলে আরাভ খান প্রথম সম্পর্কে জানতে পারি। দেশটিতে প্রায় ২০ বছর ধরে অবস্থান করছেন, এমন একজন পূর্বপরিচিত ব্যক্তি তাঁর মোবাইল থেকে ছবি দেখিয়ে জিজ্ঞেস করেন চেনেন কি না। সঙ্গে তিনি কিছু তথ্য দিয়ে বলেন, বাংলাদেশ থেকে এর আগে অনেকেই দুবাইয়ে এসেছেন। তবে আরাভ খানের মতো এত অর্থ নিয়ে কেউ আসেননি। অল্প দিনেই বুর্জ খলিফায় ফ্ল্যাট কেনা, একাধিক বাড়ি কেনা, স্বর্ণের দোকানসহ নানা কিছু করেছেন। দেশের অনেকেই তাঁর হাতের মুঠোয়। এ জন্য দেশ-বিদেশের তারকা খেলোয়াড়, চলচিত্র তারকারা তাঁর স্বর্ণের দোকান নিয়ে ভিডিও বার্তা দিচ্ছেন।

অর্থ পাচার ও দুর্নীতি: বর্তমান সংকট কাটাতে যা করতেই হবে

কে এই আরাভ খান

এসব তথ্য পেয়ে আমি তাঁর সম্পর্কে জানতে আরও কিছুটা উৎসাহী হই। আরও কিছু খোঁজখবর নেওয়ার চেষ্টা করি। তাঁর সোনার দোকানের উদ্বোধন, এসব অর্থের উৎস নিয়ে প্রশ্ন এবং সাকিব আল হাসানসহ তারকারা সেই অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে প্রথম আলো অনলাইনে ১১ মার্চ একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর ১৫ মার্চ একাধিক গণমাধ্যমে খবর বের হয়, সাকিব আল হাসান যাঁর ডাকে দুবাই যাচ্ছেন, সেই আরাভ খান পুলিশ হত্যা মামলায় অভিযুক্ত। তিনি ভুয়া নাম ও পরিচয় ব্যবহার করে ভারতীয় পাসপোর্ট গ্রহণ করেছেন। পাশাপাশি অবৈধ উপায়ে অর্থ নিয়ে দেশটিতে বিনিয়োগ করেছেন।

তবে দুবাইয়ে বসবাসরত বাংলাদেশিরা তাঁকে দেশি ভাই হিসেবেই চেনেন, যদিও তিনি সেখানে গেছেন ভারতীয় নাগরিকত্ব ও পাসপোর্ট নিয়ে। একজন বাংলাদেশি হিসেবে তিনি দুবাইয়ে বাংলাদেশের শিল্পী সমিতির অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতা করারও সুযোগ পেয়েছেন। এমন ছবিও আছে, যাতে দেখা যায় দুবাইয়ে বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল বি এম জামাল হোসেন তাঁকে ক্রেস্টও তুলে দিচ্ছেন।

তবে বাস্তবতা হলো, পুলিশ হত্যা মামলার আসামি হওয়া ছাড়া আরাভ খানের আর যেসব অপরাধের অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, সেই সব অপরাধে অভিযুক্ত অনেক বাংলাদেশিই হেঁটে চলে বেড়াচ্ছেন দুবাইয়ে। বলা হয়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অপরাধীদের অন্যতম গন্তব্যস্থল সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক শহর দুবাই। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশিরাও পিছিয়ে নেই।

ভারতে গিয়ে রবিউল ইসলাম যেমন আরাভ খান বনে গেছেন, এর আগে আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারও বনে গিয়েছিলেন শিবশঙ্কর হালদার। এ পরিচয়ে পশ্চিমবঙ্গ থেকে রেশন কার্ড, ভারতীয় ভোটার আইডি কার্ড, আঁধার কার্ড সংগ্রহ করেছিলেন। দেশটিতে গড়েছিলেন সম্পদ। এখন ভারতে আটক পি কে হালদার। তবে আরাভ খান বহাল তবিয়তে আছেন দুবাইয়ে।

অর্থ পাচার ঠেকাতে আগে হুন্ডি বন্ধ করতে হবে

দুবাইয়ের হোটেল বুর্জ আল আরব।
দুবাইয়ের হোটেল বুর্জ আল আরব।

কেন আকর্ষণের কেন্দ্রে দুবাই

ইউএইর দুবাই, শারজাহ, আজমান, আবুধাবির আবাসন ব্যবসা কয়েক দশক ধরেই জমজমাট। দুবাইয়ে গিয়ে জানা গেল, দেশটিতে বিনিয়োগ করলে টাকার রং সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন করে না। কোন উপায়ে সেই টাকা অর্জন করা হয়েছে, সেই টাকার মালিক কোনো অপরাধী কি না, সেই প্রশ্নও ওঠে না। ফলে সারা বিশ্বের মানুষই দেশটিতে বিনিয়োগ করছে। আর দেশটি বিনিয়োগ করার মতো পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। সবার জন্য ব্যবসা করার সুযোগও খুলে দিয়েছে। দুবাইয়ে গড়ে উঠছে একের পর এক বড় অট্টালিকা। যা বিভিন্ন ক্ষেত্রে রেকর্ড গড়েছে। আর ইউরোপ-আমেরিকার মানের আবহ তৈরি করেছে। ফলে আনন্দ বিনোদনের পাশাপাশি বিনিয়োগ পরিবেশ—সবই দিচ্ছে দেশটি।

বিত্তবান বিদেশিদের আরও আকৃষ্ট করতে ২০১৯ সালে গোল্ডেন ভিসা চালু করে ইউএই। ২০ লাখ ডলারের সমপরিমাণ অর্থসম্পদের মালিকানা থাকলেই এ ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। বিদেশিদের বাড়ি কেনার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধও শিথিল করা হচ্ছে। লেনদেনের ৭০ শতাংশ করা যাচ্ছে নগদ অর্থে। এ সুযোগ দেওয়ার পরই দুবাইয়ে বাংলাদেশিসহ অনেক দেশের নাগরিকদের সম্পদ কেনার পরিমাণ হু হু করে বাড়তে থাকে। ফলে দুবাই এখন বহুজাতিক ও বহু সাংস্কৃতিক নগর হয়ে উঠছে।
ফুটবলার ডেভিড বেকহাম, বলিউড তারকা শাহরুখ ও শীর্ষ ধনীদের মধ্যে মুকেশ আম্বানি—কে নেই দেশটিতে সম্পদ কেনার তালিকায়। বিভিন্ন গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, আরব আমিরাতে বিনিয়োগের শীর্ষে রয়েছেন রাশিয়া, চীন, ভারত ও বাংলাদেশিরা। কোন দেশের কত নাগরিক সম্পদ কিনছেন, একসময় তা প্রকাশ করা হতো। এখন আর হয় না। ফলে গোপনই থাকছে কারা দেশটিতে বিনিয়োগ করছেন। এটাও অন্যতম কারণ সেখানে বিনিয়োগ করার। আরাভ খানের মতো অল্প কিছু মানুষই আছেন, যাঁরা ঢাকঢোল পিটিয়ে ব্যবসাকেন্দ্র চালু করেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.