এবারের নির্বাচনে অর্ধেকের বেশি আসনে তেমন প্রতিদ্বন্দ্বিতাই নেই। আইন প্রয়োগে খুব কঠোর অবস্থানেও নেই নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবুও আইন মানতে অনীহা দেখাচ্ছেন প্রার্থীরা। সারাদেশে দুইশর বেশি প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। তাদের কারণ দর্শানোর নোটিশও দেওয়া হয়েছে।
ইসির আইন শাখার তথ্যানুযায়ী, এরই মধ্যে ২১১ প্রার্থীর বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে। পাশাপাশি বর্তমান সংসদের তিন আইনপ্রণেতাসহ অন্তত ১৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। অভিযোগ প্রমাণ হলে ছয় মাসের জেল এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড হতে পারে তাদের।
তাদের তিনজনই বর্তমান সংসদের সরকারদলীয় এমপি এবং এবারও আওয়ামী লীগের প্রার্থী। তারা হলেন বরগুনা-১ আসনে ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু, ঝিনাইদহ-১ আসনের আবদুল হাই এবং চট্টগ্রাম-১৬ আসনের মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী।
ইসি সূত্র জানায়, এ নির্বাচনের জন্য বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি এ পর্যন্ত ২১১টি আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় সংশ্লিষ্টদের কারণ দর্শানোর জন্য নোটিশ করে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভবিষ্যতে এ ধরনের কাজ না করার জন্য প্রার্থীদের সতর্ক করে দেওয়া হয়।
বরগুনা-১ আসনের প্রার্থী ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভু ও তাঁর সমর্থক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর কবির, একই দলের সদর উপজেলা শাখার সভাপতি ছিদ্দিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক শাহ মোহাম্মদ ওয়ালিউল্লাহ ওলি, আমতলী পৌরসভার মেয়র মতিয়ার রহমান, তালতলী উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ কাদেরসহ আরও কয়েকজনের আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায় নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি অর্থদণ্ডের সুপারিশ করে। একই সঙ্গে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে মামলা করার জন্য সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি।
একইভাবে ঝিনাইদহ-১ আসনের প্রার্থী আবদুল হাই ও তাঁর সমর্থক শৈলকুপা উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল হাকিমের বিরুদ্ধে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের গুরুতর অভিযোগে জুডিশিয়াল আদালতে মামলা করতে সংশ্লিষ্ট নির্বাচন কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি। অভিযোগ উঠেছে, গত ১০ ডিসেম্বর শৈলকুপা থানার ১৪ নম্বর দুধসর ইউনিয়নের ভাটই বাজারে আবদুল হাই ও তাঁর অনুসারীরা দেশি অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে মহাসড়কে মহড়া দেন। এতে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
এ ছাড়া চট্টগ্রাম-১৬ আসনের প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান গত ৩০ নভেম্বর শোডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দিতে গিয়ে বেসরকারি টেলিভিশনের সাংবাদিকদের গালাগাল ও মারধর করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন বলে অভিযোগ। এ ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করতে নির্দেশ দিয়েছে ইসি।
এদিকে, গাজীপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মেহের আফরোজ চুমকির এপিএস মাজেদুল ইসলাম সেলিম ১০-১২ জনকে সঙ্গে নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী আখতারউজ্জামানের সমর্থক আবদুর রহিম শিকদারের ওপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে চড়াও হন এবং মারধর করেন। আখতারউজ্জামানের পক্ষে কাজ করলে আবদুর রহিমকে মেরে ফেলার হুমকি দেন।
এ বিষয়ে নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অভিযোগের আংশিক সত্যতা মিলেছে।
খুলনা-৩ আসনে ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী এস এম কামালের সমর্থক জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আজগর বিশ্বাস তারার বিরুদ্ধে আচরণ বিধিমালা লঙ্ঘনের ঘটনায় মামলা করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশনা দিয়েছে ইসি।
এর আগে ইসির নির্দেশনায় দায়ের করা মামলায় নরসিংদী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি আহসানুল ইসলাম রিমন ২০ দিন কারাভোগের পর গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট থেকে জামিন পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনার কয়েকজন মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও সংসদ সদস্যকেও শোকজ করা হয়েছে। তারপরও বিধি লঙ্ঘন ঠেকাতে না পারায় ইসি মামলা করতে বাধ্য হচ্ছে।
এদিকে নির্বাচন কমিশনার রাশেদা সুলতানা বৃহস্পতিবার নাটোরে মতবিনিময় সভায় বলেছেন, আচরণবিধি ভঙ্গ করলে আইনে প্রার্থিতা বাতিলের বিধান রয়েছে।