কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ডুবন্ত ট্রলার থেকে ১০ জনের অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের ঘটনার প্রায় দুই মাস হতে যাচ্ছে। কিন্তু এখনো এই হত্যাকাণ্ডের কারণ বা এর সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
এ ঘটনায় গ্রেপ্তার আসামিদের বক্তব্য অনুযায়ী, সাগরে অন্য মাছ ধরার ট্রলারে ডাকাতি করতে গিয়ে পিটুনিতে ওই ১০ জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু পুলিশ বলছে, জবানবন্দির তথ্য আরও যাচাই-বাছাইয়ের দরকার আছে। নিহত ব্যক্তিদের জলদস্যু বলার সময় এখনো হয়নি।
মামলায় সাতজন আসামি গ্রেপ্তার হলেও আত্মগোপনে আছেন এজাহারভুক্ত আরও দুজন। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে গ্রেপ্তার আসামিরা বলেন, নিহত ১০ জন ট্রলারে করে সাগরে অন্য মাছ ধরার ট্রলারে লুটপাট চালাতে গিয়ে পিটুনির শিকার হন। মারধরে তাঁদের মৃত্যু হয়। পরে তাঁদের বরফ রাখার কুঠিরে আটকে লাশ গুমের জন্য ট্রলারটি ডুবিয়ে দেওয়া হয়।
গত ৪ মে আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে গ্রেপ্তার এক আসামি গিয়াস উদ্দিন মুনির বলেন, ট্রলারে ডাকাতির ঘটনায় মহেশখালী পৌরসভার কাউন্সিল খায়ের হোসেন ও সোনাদিয়ার জলদস্যু মো. সুমন জড়িত ছিলেন। ৭ মে পুলিশ মহেশখালীর গোরকঘাটা থেকে খায়ের হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তিনিও আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন।
এ বিষয়ে কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, তদন্ত অনেক দূর এগিয়েছে। তদন্ত সহায়ক কমিটিও আছে। তবে ডাকাতি করতে গিয়ে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে কি না, তা এই মুহূর্তে নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কারা এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, তার অনুসন্ধানও চলছে। আদালতের জবানবন্দিতে যাঁদের নাম এসেছে, তাঁদের বিষয়েও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
গত ২৩ এপ্রিল শহরের নাজিরারটেক সাগর উপকূলে ডুবন্ত একটি ট্রলার থেকে ১০ জনের অর্ধগলিত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস। এ ঘটনায় ২৫ এপ্রিল কক্সবাজার সদর মডেল থানায় ট্রলারটির নিহত মালিক মহেশখালীর হোয়ানক ইউনিয়নের সামশুল আলমের স্ত্রী রোকিয়া আকতার মো. কামাল হোসেন ওরফে বাইট্যা কামাল, করিম সিকদার, আনোয়ার হোসেন ও বাবুল মাঝিসহ অজ্ঞাতনামা আরও ৫০ থেকে ৬০ জনকে আসামি করে মামলা করেন।
ঘটনার পর পুলিশ ও র্যাবের অভিযানে কামাল হোসেন ও করিম সিকদারসহ সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁদের মধ্যে করিম সিকদার ছাড়া বাকি ছয়জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন বলে জানায় পুলিশ।
পুলিশের দেওয়া তথ্য মতে, কামাল হোসেন (৩৯) ও করিম সিকদারকে (২৯) মহেশখালীর মাতারবাড়ী থেকে এবং অপর পাঁচজন আসামি—ফজল কাদের ওরফে ফজল মাঝি ( ২৯) ও মো. আবু তৈয়বকে (৩৫) চট্টগ্রামের বাঁশখালী থেকে, দেলোয়ার হোসেনকে (৩৮) মাতারবাড়ী, গিয়াস উদ্দিন মুনিরকে (৩২) চকরিয়ার বদরখালী ও কাউন্সিলর খাইর হোসেনকে (৪২) মহেশখালী থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। সবাই এখন কক্সবাজার জেলা কারাগারে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, আত্মগোপনে থাকা মামলার ২ ও ৩ নম্বর আসামি আনোয়ার হোসেন ও বাবুল মাঝি এবং সোনাদিয়ার জলদস্যু সম্রাট মো. সুমনকে গ্রেপ্তার করা হলে হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যেত।
কক্সবাজার সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বলেন, কেন এই হত্যাকাণ্ড এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা জড়িত, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। জবানবন্দিতে নিহত ব্যক্তিদের বিষয়ে নানা তথ্য পাওয়া গেলেও তাঁরা যে জলদস্যু, তা নিশ্চিত করে বলতে আরও কিছুটা সময় লাগবে। মামলার অন্যান্য আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।