দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টটরেট (ইডি)। আজ বৃহস্পতিবার রাতে দিল্লিতে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গিয়ে তাঁর মোবাইল জব্দ করে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডির কর্মকর্তারা। ঘণ্টা দুয়েক পরে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তারের কথা জানান তারা।
দিল্লি হাইকোর্ট আজ আবগারি মামলায় দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে গ্রেপ্তার থেকে সুরক্ষা দিতে অস্বীকার করার কয়েক ঘণ্টা পরে ইডির একটি দল তাঁর বাসভবনে ঢোকে। সেখানে অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং) প্রতিরোধ আইনে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন ইডির কর্মকর্তারা।
এনডিটিভি বলেছে, ইডি দলে ১২ কর্মকর্তা রয়েছেন। তাঁদের কাছে কেজরিওয়ালের বাসভবনে তল্লাশির হুকুম (সার্চ ওয়ারেন্ট) রয়েছে। তাঁরা আম আদমি পার্টির প্রধান ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের মুঠোফোন জব্দ করেছেন। বাসভবনের অভ্যন্তরে কেজরিওয়ালকে জিজ্ঞাসাবাদও করছেন ইডি কর্মকর্তারা। বাসভবনের বাইরে দিল্লি পুলিশ, র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্সের সদস্যের পাশাপাশি সিআরপিএফের সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। বাড়িতে বাইরের কাউকে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।
দিল্লির মন্ত্রী সৌরভ ভরদ্বাজ বলেন, ‘পুলিশ যেভাবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে গেছে এবং কাউকে ঢুকতে দিচ্ছে না, তাতে মনে হচ্ছে, সেখানে বড় ধরনের অভিযান চালাচ্ছে।’
এই মামলায় ইডির নয়টি সমন এড়িয়ে গেছেন আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান। গত সোমবার ইডির করা দিল্লি জল বোর্ডে কথিত অনিয়মের সঙ্গে যুক্ত অর্থ পাচার মামলার পৃথক আরেকটি সমনেও তিনি হাজির হননি।
আবগারি মামলায় তেলেঙ্গানার বিআরএস নেতা কে কবিতাকে গ্রেপ্তারের এক সপ্তাহের মধ্যে ইডির পক্ষ থেকে কেজরিওয়ালকে গ্রেপ্তার করা হল। কবিতাকে গ্রেপ্তারের পর প্রথমবারের মতো এ মামলায় কেজরিওয়ালকে ষড়যন্ত্রকারী হিসেবে নাম যুক্ত করা হয়।
গত বছরের অক্টোবরে ইডি কেজরিওয়ালকে প্রথম সমন জারি করে ২ নভেম্বর হাজির হতে নির্দেশ দেয়। তখন থেকেই ধারণা করা হচ্ছিল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীকে ইডি গ্রেপ্তার করতে পারে।
গত ফেব্রুয়ারি মাসে এ মামলায় দিল্লির উপমুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসোদিয়াকে গ্রেপ্তার করে ইডি। আম আদমি পার্টির রাজ্যসভার সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিংকে গত অক্টোবরে হেফাজতে নেওয়া হয়।
কেজরিওয়াল একাধিকবার দাবি করেছেন, বিজেপি সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন সংস্থা ইডি তাঁকে গ্রেপ্তার করে আম আদমি পার্টিকে দমাতে চায়। আরও বেশ কয়েকটি বিরোধী দলও বিজেপির বিরুদ্ধে ইডিকে নিজ স্বার্থে কাজে লাগানোর বলে অভিযোগ তুলেছে। তাদের দাবি, নেতাদের বিরুদ্ধে এই সংস্থাকে ব্যবহার করছে বিজেপি। আগামী ১০ এপ্রিল লোকসভা নির্বাচন। এর আগেই নেতাদের গ্রেপ্তারে এ ধরনের কাজ করা হচ্ছে।
কেজরিওয়াল কিছুদিন ধরেই বলে আসছিলেন, লোকসভা ভোটের আগে বিজেপি সরকার তাঁকে গ্রেপ্তার করবে। আবগারি মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটকে (ইডি) দিয়ে বারবার তাঁকে সমন করা হচ্ছে।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে দিল্লি হাইকোর্ট কেজরিওয়ালকে মদ বিক্রির নীতি মামলায় সুরক্ষা দিতে অপারগতা জানায়। এ আবেদনের জবাবে ইডিকে জবাব দিতে বলে। এর পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করে আগামী ২২ এপ্রিল।
গত রোববার ইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে কেজরিওয়ালকে কথিত মদনীতি জালিয়াতির একজন ষড়যন্ত্রকারী বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, ইডির তদন্তে দেখা গেছে কে কবিতার সঙ্গে অন্যদের নিয়ে আপের নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল ও মনীশ সিসোদিয়া দিল্লির আবগারি নীতি প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে সুবিধা পাওয়ার জন্য ষড়যন্ত্র করেছেন। এ সুবিধা পেতে কবিতা আপের নেতাদের ১০০ কোটি রুপি দিয়েছেন।