তিস্তার পাশে আরও দুটি খাল খনন করছে ভারত, বাংলাদেশের পানি প্রবাহ কমার আশঙ্কা

0
133
তিস্তা ব্যারেজ

দুটি নতুন ক্যানেলের মাধ্যমে তিস্তায় আবারও পানি প্রত্যাহার করতে যাচ্ছে ভারত। স্থানীয় কৃষি কাজে সহায়তার জন্য শনিবার থেকে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্পের অধীনে আরও অতিরিক্ত দুটি খাল খননের কাজ শুরু করেছে ভারত। এই খাল খননের জন্য শুক্রবার প্রায় ১ হাজার একর জমি অধিগ্রহণ করে রাজ্যটির সেচ বিভাগ। এর ফলে রাজ্যটির কোচবিহার এবং জলপাইগুড়ি জেলার লক্ষাধিক হেক্টর কৃষি জমিকে সেচের আওতায় আনতে সাহায্য করবে বলে জানা গেছে। ধারণা করা হচ্ছে- তিস্তায় পানি স্বল্পতার দাবিতে সরব থাকা মমতা সরকারের এই খাল খননের সিদ্ধান্তে আবারও পানিতে পড়তে চলেছে বাংলাদেশ সরকারের তিস্তার পানি চুক্তি। যার ফলে শুকনো মৌসুমে বাংলাদেশের পানি প্রবাহ আরও কমার আশঙ্কা করা হচ্ছে।

দেশের উত্তরাঞ্চলে পানি সংকট নিরসনে প্রায় এক দশকের বেশি সময় ধরে তিস্তার পানি দাবি করছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরে এই চুক্তির বাস্তবায়নের কথা থাকলেও, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি সফরসঙ্গী না হওয়া এবং রাজ্যের স্বার্থ দেখিয়ে সরে আসার কারণেই এই চুক্তি বাস্তবের মুখ দেখেনি।

শুক্রবার, জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসকের দপ্তরে রাজ্যের সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিকের উপস্থিতিতে প্রায় ১ হাজার একর জমি সেচ দপ্তরকে হস্তান্তর করা হয়। এই জমি তিস্তার বাম তীরে দুটি খাল তৈরি করতে প্রশাসনকে সহায়তা করবে।

তবে কেবলমাত্র তিস্তা নয়, ভুটান হয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জলঢাকা নদীর পানিও সেচের কাজে জন্য ভারত প্রত্যাহার করবে বলে জানা গেছে।

সেচ দপ্তর থেকে জানা গেছে, এই প্রকল্পের অধীন তিস্তা ও জলঢাকা থেকে পানি সরবরাহ করার জন্য গজলডোবা ব্যারেজ থেকে কোচবিহার জেলার চ্যাংরাবান্ধা পর্যন্ত ৩২ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি খাল খনন করা হবে। ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের অন্য আরেকটি খাল তিস্তার বাম তীরে নির্মিত হবে। খালগুলি খনন করা হলে সেখানকার প্রায় এক লাখ কৃষক এই সেচের সুবিধা পাবেন বলে মনে করছে সেচ দপ্তর।

উত্তরবঙ্গের ৯.২২ লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে সেচের সুবিধা দেওয়ার জন্য ১৯৭৫ সালে তিস্তা ব্যারেজ প্রকল্প চালু করা হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য ছিল, খালের মাধ্যমে তিস্তার উভয় পাড়েই সেচের জন্য এই নদীর পানি পাঠানোর। শুধু তাই নয়, উদ্দেশ্য ছিল ওই অঞ্চলে প্রবাহমান অন্য নদীর পানিও যাতে এই সেচ কাজে ব্যবহার করা যায়। যদিও কয়েক দশক ধরেই ক্ষতির মুখে পড়েছে এই প্রকল্পটি, মাত্র ১.০৪ লাখ হেক্টর কৃষি জমিতে সেচের কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এই পানি।

এ বিষয়ে শনিবার সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘খাল খননের জন্য জলপাইগুড়ি জেলা প্রশাসন আমাদেরকে ১ হাজার একর জায়গা হস্তান্তর করেছে। ২০০৯ সালে কেন্দ্রীয় সরকার এটিকে একটি জাতীয় প্রকল্প হিসাবে ঘোষণা করলেও এর জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল প্রদান করেনি। তবে কেন্দ্রীয় সরকারের তরফ থেকে অর্থ না পেলেও পর্যায়ক্রমে আমরা এই প্রকল্পের কাজ শেষ করার চেষ্টা করব।’ এ সময় বিজেপিকে নিশানা করে পার্থ ভৌমিক বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের বিজেপির যে বিধায়করা আছেন, তারা নিজের এলাকার মানুষদের যদি বাঁচাতে চান, তবে কেন্দ্রের অনুদান আনুন। আপনাকে যারা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করেছেন তাদের প্রতি আপনার দায়বদ্ধতা আছে।’

সেচ দপ্তর সূত্রের খবর, জলপাইগুড়ি জেলার ধুপগুড়ি ব্লকে তিস্তার অন্য একটি খালেরও সংস্কার কাজ করা হবে। সেটি ফের সম্পূর্ণ চালু হল ৩২ হাজার কৃষি জমিতে সেচের কাজের সুবিধা পাবে।

এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের এক রাজনীতিবিদ জানান, ‘তার সরকার এখন যেহেতু সেচ প্রকল্পে সম্প্রসারণের চিন্তাভাবনা নিয়েছে, স্বভাবতই এই ঘটনায় স্পষ্ট যে- তিস্তা থেকে আরও বেশি পরিমাণ পানি নতুন খালের মাধ্যমে প্রবাহিত হবে। এর অর্থ শুকনো মৌসুমে তিস্তা থেকে বাংলাদেশে আরও কম পানি প্রবাহিত হবে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.