বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত স্মরণসভায় বক্তারা বলেন, আমলাতন্ত্রের সঙ্গে দ্বন্দ্বে পরিকল্পনা কমিশনের দায়িত্ব ছাড়েন নুরুল ইসলাম।
স্বাধীনতার পর পরিকল্পনা কমিশনে প্রয়াত অধ্যাপক নুরুল ইসলামসহ কয়েকজনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কিন্তু শুরু থেকেই আমলাতন্ত্রের সঙ্গে তাঁদের দ্বন্দ্ব তৈরি হয়।
ফলে সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় তাঁদের গুরুত্বও কমে যায়। এ কারণে হতাশ হয়ে একে একে তাঁরা দায়িত্ব থেকে সরে যান। তবে নিজ নিজ অবস্থান থেকে তাঁরা দেশের জন্য কাজ করেছেন। নুরুল ইসলাম সব সময় যেকোনো বিষয়ে প্রশ্ন করতেন, জানতে চাইতেন।
অধ্যাপক নুরুল ইসলাম স্মরণে বাঙলার পাঠশালা আয়োজিত এক স্মরণসভায় প্রধানমন্ত্রীর অর্থনীতিবিষয়ক উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলমসহ বক্তারা এসব কথা বলেন।
বাংলাদেশের প্রথম পরিকল্পনা কমিশনের ডেপুটি চেয়ারম্যান খ্যাতনামা অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক নুরুল ইসলাম যুক্তরাষ্ট্রে গত ৮ মে ৯৪ বছর বয়সে মারা যান। অধ্যাপক নুরুল ইসলামের স্মরণে গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আর সি মজুমদার মিলনায়তনে এ স্মরণসভার আয়োজন করে বাঙলার পাঠশালা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা মসিউর রহমান ও বিশেষ অতিথি ছিলেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম।
আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ইকোনমিক রিসার্চ গ্রুপের (ইআরজি) নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির, দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অতনু রব্বানী, ব্র্যাকের জেন্ডার, জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী, ইন্টারন্যাশনাল ফুড পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (ইফপ্রি) বাংলাদেশের ডেপুটি কান্ট্রি ম্যানেজার মেহরাব বখতিয়ার, সমাজ, অর্থনীতি ও রাষ্ট্রবিষয়ক ত্রৈমাসিক প্রতিচিন্তার সহকারী সম্পাদক খলিলউল্লাহ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বাঙলার পাঠশালার সভাপতি আহমেদ জাভেদ।
বঙ্গবন্ধু একটি স্থিতিশীল ও শক্তিশালী আমলাতন্ত্র পাননি বলে অনুষ্ঠানে মন্তব্য করেন পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর অর্থনীতির ব্যাপক পুনর্বিন্যাসের পরিকল্পনার জন্য বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক নুরুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, রেহমান সোবহান ও মোশাররফ হোসেনের মতো অর্থনীতিবিদের ওপর আস্থা রাখেন। কিন্তু দ্রুতই আমলাতন্ত্রের সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের নেতৃত্বের একটা দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছিল। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম তাঁর বইয়েও বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন।
পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী শামসুল আলম বলেন, প্রথম দিকে বঙ্গবন্ধু অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে ডাকতেন ও কথা বলতেন। এক–দুই বছর পর থেকে তিনি উপলব্ধি করতে শুরু করেন যে তিনি আসলে গুরুত্ব পাচ্ছেন না। একই অভিযোগ ছিল অধ্যাপক মোশাররফ হোসেন ও আনিসুর রহমানেরও। এসব নিয়ে নুরুল ইসলামসহ অন্যরা হতাশ ছিলেন এবং একে একে তাঁরা দায়িত্ব থেকে সরে যান।
আমলাতন্ত্রের সঙ্গে পরিকল্পনা কমিশনের দ্বন্দ্ব নিয়ে কথা বলেন মসিউর রহমানও। তিনি বলেন, ১৯৭১ সালের আগে থেকেই আমলাদের একটা প্রভাব ছিল। সেখানে হঠাৎ করে আরেকজন প্রতিদ্বন্দ্বী (পরিকল্পনা কমিশন) এসে উপস্থিত হলে এই দ্বন্দ্ব প্রকাশ পায়। মসিউর রহমান বলেন, রাজনৈতিক দিক পরিবর্তনের সঙ্গে নুরুল ইসলামসহ অন্যদের যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে, সেটা বুঝে তাঁরা সরে যান। তবে তাঁরা সবাই কিন্তু নিজ নিজ অবস্থান থেকে দেশের জন্য কাজ করে গেছেন।
ইআরজির নির্বাহী পরিচালক সাজ্জাদ জহির বলেন, অধ্যাপক নুরুল ইসলাম প্রশ্ন করতেন, জানতে চাইতেন। অন্যদের কাজের জন্য তাগাদা দিতেন। সেই ভূমিকায় এখন আর কাউকে তেমন দেখা যায় না।
দৈনিক ইত্তেফাক সম্পাদক তাসমিমা হোসেন বলেন, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে এত কাছাকাছি থেকে অধ্যাপক নুরুল ইসলাম কীভাবে কাজ করেছিলেন তা সবার, বিশেষ করে বর্তমান রাজনীতিবিদদের জানা উচিত। তাহলে আমরা রাজনীতিবিদদের নিয়ে মাঝেমধ্যে যে হতাশ হই, সেটা হতাম না। অধ্যাপক নুরুল ইসলাম একটা জাতির জন্মকে কাছ থেকে দেখেছেন। দেশের প্রতি ভালোবাসা তাঁর লেখনীর মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক অতনু রব্বানী বলেন, স্বাধীনতার পূর্বে একটা জাতি তৈরির জন্য অধ্যাপক নুরুল ইসলামের মতো অর্থনীতিবিদেরা তাঁদের চিন্তা ও দক্ষতাকে কাজে লাগিয়েছিলেন।
অধ্যাপক নুরুল ইসলামকে রাজনীতিতে আগ্রহী একজন অর্থনীতিবিদ বলে মন্তব্য করেন ব্র্যাকের জেন্ডার, জাস্টিস অ্যান্ড ডাইভারসিটি বিভাগের পরিচালক নবনীতা চৌধুরী।