তামিমের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হাথুরু, কড়া প্রতিক্রিয়া পাপনের

0
116
তামিমের বক্তব্য ভালোভাবে নেয়নি বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট

ড্রেসিংরুম থেকে বেরিয়ে দুই ভাই দুলকি চালে হেঁটে সংবাদ সম্মেলন কক্ষে এলেন। ম্যানেজার নাফিস ইকবাল খানকে সতেজ দেখালেও তামিম ইকবাল ছিলেন বিবর্ণ। দেখে মনে হচ্ছিল, ক্লান্ত শরীরটাকে ইচ্ছার বিরুদ্ধে বয়ে বেড়াচ্ছেন। একজন ‘আনফিট’ ক্রিকেটারের ক্ষেত্রে এ রকমটা হতেই পারে। কোমরের ব্যথা গত ২৫ দিন ধরে যেভাবে ভোগাচ্ছে, তাতে তামিমের মুখের চিরচেনা হাসিটাও উড়ে গেছে।

বাঁহাতি এ ওপেনারের যেখানে বিশ্রামে থাকার কথা, সেখানে জোর করে অনুশীলনে থাকা কষ্টের। গত কিছুদিন ধরে তিনি তা করে গেছেন আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য। পুরোপুরি ফিট না হয়েও আজকের ম্যাচ খেলারও সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন। গতকাল চট্টগ্রামে ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে জানান, ‘আমি অবশ্যই কালকের (আজকের) জন্য প্রস্তুত। শরীর আগের চেয়ে ভালো। তবে এটা বলব না, শতভাগ ঠিক আছি। কালকে (আজ) খেলার পর আরও ভালো বুঝতে পারব, কী অবস্থা। তবে এখন পর্যন্ত হলো, আমি কালকে খেলছি।’

তামিমের এমন বক্তব্য ভালোভাবে নেয়নি বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। একরকম রেগেই আছেন বাংলাদেশের কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। এর আগেও বাংলাদেশের কোচ থাকাকালীন সময়ে পুরোপুরি ফিট না হলে তিনি কাউকে খেলাতেন না। কারণ, ছোটখাটো সমস্যাও অনেক সময় মাঠে গিয়ে বড় হয়ে যায়।

তামিমের ওপর রাগলেও প্রথম ওয়ানডে থেকে তামিমকে বাদ দিচ্ছেন না হাথুরু। সেটা তামিম অধিনায়ক বলেই হয়তো। হাথুরুসিংহে এ ব্যাপারে একক সিদ্ধান্ত না নিয়ে কথা বলেছেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসানের সঙ্গে।

বাস্তবতা হচ্ছে, পুরোপুরি ফিট না হয়ে তামিমের ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত হিতে বিপরীত হতে পারে। ব্যাটিং করার সময় কোমরের ব্যথাটা বেড়ে গেলে ম্যাচের মাঝপথে মাঠও ছাড়তে হতে পারে। তখন দলের জন্যও ক্ষতির কারণ হয়ে উঠবেন তিনি। তাই নৈতিকতার দিক থেকে একজন আনফিট ক্রিকেটারের ম্যাচ খেলার সিদ্ধান্ত প্রশ্নের জন্ম দেয়।

তামিমের এমন বক্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় সংবাদমাধ্যমকে বিসিবি সভাপতি জানান, ‘এটি তো আর পাড়ামহল্লার ম্যাচ নয়। আন্তর্জাতিক একটা ম্যাচ। এমন সিরিজের আগের দিন অধিনায়ক বলছে সে ফিট না। কিন্তু খেলবে, খেলে নিজের ফিটনেস বোঝার চেষ্টা করবে। এটা তো পেশাদার কোনো আচরণ হতে পারে না।’

পাপন বলছিলেন, ‘তামিমের এমন কথা আমার মেজাজ খারাপ করে দিয়েছে। কোচ আমাকে ফোন দিয়ে চিল্লাচিল্লি করেছে। আমি তো জানি না যে তামিম এসব কথা বলেছে। আমাকে কোচ এসব বলেছে।’

সব মিলিয়ে তামিমের এমন কথায় বিরক্তি ফুটে উঠেছে বিসিবি সভাপতির। পাপনের কথায়, ‘তামিম ফিট নাকি ফিট না, এটা নাকি খেলে দেখবে সে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ কি এমন মনোভাব নিয়ে কেউ খেলতে নামে? এটা হয় নাকি। এমন করেই যাচ্ছে ও। এর আগের ম্যাচেও তো তাই করেছে।’

আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টের আগেই তামিমের কোমরের পুরোনো ব্যথা মাথাচাড়া দেয়। রেকর্ড রানে জয়ের টেস্ট ম্যাচটি খেলাও হয়নি তার। যদিও ম্যাচ শেষ হওয়ার আগেই নেট সেশন করতে নেমে পড়েন। ঈদের আগে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে ব্যাটিং সেশন করেছেন বিরতি দিয়ে। কিছু শট খেলতে পারছিলেন না, কিছু শট খেলে কোমরে হাত দিয়ে বসে পড়তে দেখা গেছে।

চট্টগ্রামে চার দিনের অনুশীলনে নিজেকে উজাড় করে দিতে পারেননি একদিনও। সোমবার ২৫ মিনিটের মতো নেটে ছিলেন। গতকাল তো অনুশীলনই করেননি।

কুঁচকির চোটের কারণে গত ডিসেম্বরে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলা হয়নি তামিমের। লিটন কুমার দাসের নেতৃত্বে যে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতেছিল বাংলাদেশ। ইংল্যান্ড সিরিজ দিয়ে দলে ফেরা তামিম ছন্দে ছিলেন না। ইংল্যান্ডের মাটিতে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে এক ম্যাচ পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংস খেলে আত্মবিশ্বাস ফেরান। আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিতেই হয়তো আফগানদের বিপক্ষে তিন ম্যাচের সিরিজটি খেলতে চাচ্ছেন তিনি। কারণ, এশিয়া কাপের আগে এটিই শেষ সিরিজ। এ জন্যই কি ম্যাচ খেলতে এতটা মরিয়া তিনি?

যদিও তামিম বলছেন, দলের ক্ষতি হয় এমন কিছু করবেন না তিনি, ‘আমার মনে হয়, আমারও দেখতে হবে যে, আমি কতটা মানিয়ে নিতে পারছি বা পারছি না। তবে আমি এ রকম কোনো কাজ করব না, যেটায় দল ভুগবে। কারণ আমি সব সময় বলি, যে কোনো ব্যক্তির চেয়ে দল আগে। আমার এখন মনে হচ্ছে, আমি কালকের (আজ) জন্য প্রস্তুত। ম্যাচ চলাকালে যদি আমার মনে হয়, আমি ঠিক প্রস্তুত নই বা এটি ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাহলে আমি ও চিকিৎসক দল মিলে সিদ্ধান্ত নেব। আপাতত আমি আগামীকালের (আজ) ম্যাচের জন্য ফিট। দেখা যাক, কালকে কী হয়!’ কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহেও হয়তো তামিমের চাওয়া পূরণ করতে কিছুটা বাধ্য হবেনই।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.