জীবনের শেষ ৪০ মিনিট, কী হয়েছিল আহমেদ রুবেলের

0
74
আহমেদ রুবেল

গাজীপুরের ছায়াবীথি থেকে হাতে সময় নিয়েই বের হয়েছিলেন আহমেদ রুবেল। সন্ধ্যায় ঢাকার বসুন্ধরা সিটির স্টার সিনেপ্লেক্স তাঁর ‘পেয়ারার সুবাস’ সিনেমার প্রিমিয়ার শো ছিল।

গাড়ি চালাচ্ছিলেন আহমেদ রুবেল। পথে উত্তরা থেকে ‘পেয়ারার সুবাস’ নির্মাতা নূরুল আলম আতিককে গাড়িতে তুলে নেন; সঙ্গে সহকারী পরিচালক ছিলেন। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামার আগে সোয়া ৫টার দিকে বসুন্ধরা সিটিতে পৌঁছান তিনি।

 আহমেদ রুবেল
আহমেদ রুবেল

গাড়ি নিয়ে সোজা বসুন্ধরা সিটির বেজমেন্টে ঢুকলেন। গাড়ি রেখে বেজমেন্টের হাঁটা পথে হাঁটছিলেন; এর মধ্যে হুট করে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাত পান রুবেল। পাশে থাকা নির্মাতা আতিক, নিরাপত্তারক্ষী মাসাদুল হকসহ আরও কয়েকজন এগিয়ে আসেন।

মাসাদুল হক জানালেন, দেয়ালে লেগে তাঁর কপাল ফুলে যায়। ধরাধরি করে তাঁরা আহমেদ রুবেলকে পাশের চেয়ারে বসান। মাথায় পানি দেন।

‘আমরা ভেবেছিলাম, উনি মাথা ঘুরে পড়ে গেছেন। তাই মাথায় পানি দিচ্ছিলাম। তখন তাঁর জ্ঞান ছিল। বারবার ঢেঁকুর তুলছিলেন।’ বললেন মাসাদুল।

রুবেলকে বসুন্ধরা সিটির প্রথম তলায় জরুরি প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে নেওয়া দরকার। ওপর তলা থেকে হুইলচেয়ার আনতে বিলম্ব হচ্ছিল বলে আতিক, মাসাদুলরা কোলে করে রুবেলকে চিকিৎসাকেন্দ্রে নেন।

মাসাদুলের ভাষ্যে, তখনো রুবেলের জ্ঞান ছিল। প্রাথমিক চিকিৎসাকেন্দ্রে দায়িত্বরত চিকিৎসক রুবেলকে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। হুইলচেয়ারে বসিয়ে প্রথম তলা থেকে বসুন্ধরা সিটির নিচে নামানো হয় রুবেলকে।

রুবেলকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তোলা হয়। সিএনজিতে পরিচালক আতিকও ছিলেন। পাশের স্কয়ার হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয় রুবেলকে।
হাসপাতালটির এক চিকিৎসক নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, আহমেদ রুবেলকে বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

‘তাঁর পালস ছিল না। পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে আমরা নিশ্চিত হই, ডেড অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।’ বলেন সেই চিকিৎসক। বিকেল ৫টা ৫৮ মিনিটে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

বসুন্ধরা সিটি থেকে হাসপাতালে নেওয়ার সময়ের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে রুবেলের। চিকিৎসেকরা এখনো মৃত্যুর কারণ নিশ্চিত হতে পারেননি। তবে ধারণা করছেন, হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে রুবেলের মৃত্যু হয়েছে।

আহমেদ রুবেলের মরদেহ তখনো হাসপাতালের জরুরি বিভাগে রাখা ছিল। বোন, ভগ্নিপতিসহ পরিবারের সদস্যদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে পরিবেশ। আহমেদ রুবেলের বাবা আয়েশ উদ্দীনকে এখনো খবরটা দেওয়া হয়নি।

৮১ বছর বয়সী বাবা কীভাবে সন্তানের শোক সামলাবেন, তার কূলকিনারা মিলছে না। গাজীপুরের ছায়াবীথির বাড়িতেই রয়েছেন আয়েশ উদ্দিন। বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বের হয়েছিলেন রুবেল; সেই বিদায় যে চিরবিদায় হবে, তা কে জানত।

‘পেয়ারার সুবাস’ সিনেমার পোস্টার। ছবি : ফেসবুক থেকে

দুই ভাই ও চার বোনের মধ্যে এক ভাই হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। আহমেদ রুবেলও মারা গেলেন। চার বোনের মধ্যে দুই বোন ঢাকায় থাকেন, দুই বোন থাকেন যুক্তরাষ্ট্রে। আহমেদ রুবেলের স্ত্রীর নাম মনোয়ারা বেগম। রুবেল–মনোয়ারা দম্পতির কোনো সন্তান নেই।

পরিচালক আতিক বললেন, ‘তিনি এভাবে চলে যাবেন, ভাবতেও পারিনি।’ কথা বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন এই পরিচালক।

আহমেদ রুবেলের এমন আকস্মিক মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয়ে পড়েছেন তাঁর দীর্ঘদিনের সহকর্মীরা। তাঁকে শেষবারের মতো দেখতে হাসপাতালে ভিড় করেন সহকর্মীরা। নির্মাতা প্রসূন রহমান, মাতিয়া বানু শুকু, অভিনেত্রী জাকিয়া বারী মমসহ অনেকেই হাসপাতালে এসেছিলেন।

সামাজিক মাধ্যমে নাসির উদ্দিন ইউসুফ, শিমুল ইউসুফ, চঞ্চল চৌধুরী, নির্মাতা রেদওয়ান রনি, প্রযোজক শাহরিয়ার শাকিল, অভিনয়শিল্পী মেহজাবীন চৌধুরী, শাহেদ আলী, ভাবনা, সোহেল মন্ডল, নাজিফা তুষিসহ আরও অনেকে শোক জানিয়েছেন।

আহমেদ রুবেলের মরদেহ আগামীকাল বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় থেকে সাড়ে ১২টা শিল্পকলা একাডেমি প্রাঙ্গনে রাখা হবে। আসরের পর গাজীপুর কবরস্থানে সমাহিত করা হবে তাঁকে।

আহমেদ রাজিব রুবেল ওরফে আহমেদ রুবেল ১৯৬৮ সালের ৩ মে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের রাজারামপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ছোটবেলা থেকেই বেড়ে উঠেছেন ঢাকা শহরে, বর্তমানে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার গাজীপুরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলেন।

সেলিম আল দীনের ‘ঢাকা থিয়েটার’ থেকে আহমেদ রুবেলের অভিনয়ের হাতেখড়ি। আহমেদ রুবেল অভিনীত প্রথম নাটক গিয়াসউদ্দিন সেলিমের স্বপ্নযাত্রা। বনপাংশুল, যৈবতী কন্যার মন, হাতহদাই, মার্চেন্ট অফ ভেনিস নাটকে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেন।

এরপর তিনি হুমায়ূন আহমেদের ঈদনাটক পোকা–তে অভিনয় করেন, যেখানে তাঁর অভিনীত ‘ঘোড়া মজিদ’ চরিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে। ২০০৫ সাল থেকে টেলিভিশন নাটকে নিয়মিত অভিনয় করতেন। তাঁর অভিনীত উল্লেখযোগ্য নাটক– ‘অতিথি’, ‘নীল তোয়ালে’, ‘বিশেষ ঘোষণা’, ‘প্রতিদান’, ‘নবাব গুন্ডা’, ‘এফএনএফ’।

আহমেদ রুবেল ১৯৯৩ সালে আখেরী হামলা সিনেমার মাধ্যমে রুপালি পর্দায় (চলচ্চিত্রে) পা রাখেন। পরে তিনি অভিনয় করেছেন চন্দ্রকথা, ব্যাচেলর, শ্যামল ছায়া, গেরিলা ইত্যাদি সিনেমায়।

২০১৪ সালে ভারতের নির্মাতা সঞ্জয় নাগ পরিচালিত সিনেমা পারাপার–এর প্রধান চরিত্রে অভিনয় করেন।

ঢাকা

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.