জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টারপ্ল্যানের বাইরে ভবন নির্মাণ বন্ধ এবং গাছপালা কেটে ভবন নির্মাণ না করার আহ্বান জানিয়ে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। আজ বুধবার বেলা দুইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারসংলগ্ন সড়কে এ কর্মসূচি পালিত হয়।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘সুন্দরবন’ এলাকায় ইনস্টিটিউট অব বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের (আইবিএ) নতুন ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ভবন নির্মাণ করতে পাঁচ শতাধিক গাছ কাটতে হবে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। এ অবস্থায় গাছ না কেটে বিকল্প স্থানে ভবন নির্মাণের দাবি তুলছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।
আজ দুপুরে অনুষ্ঠিত এই মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরাও অংশ নেন। জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেট অর্গানাইজেশনের সহসাধারণ সম্পাদক তাপসী প্রাপ্তির সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বক্তারা গাছপালা কেটে নতুন ভবন নির্মাণের পরিকল্পনার সমালোচনা করেন।
মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবাদী সংগঠন ডিপ ইকোলজি অ্যান্ড রেস্কিউ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা ও দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিভাগের ভবনের জন্য সুন্দরবন নামক জায়গাটি বেছে নেওয়া হয়েছে। অথচ এই জায়গা নির্ধারণের বিষয়ে প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো অংশীজনের সঙ্গে কথা বলেনি। এর আগেও একই বিভাগের ভবনের জন্য আরেকটি জায়গা নির্ধারণ করে গাছ কাটা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এসব বিষয়ে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনার ব্যাপারে উদাসীন।
ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের সাংগঠনিক সম্পাদক আলিফ মাহমুদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার বাজেট পেয়ে গাছ কাটার জন্য উঠে–পড়ে লেগেছে। হল নির্মাণের সময় থেকে গাছ কাটার এই মহড়া শুরু হয়েছে। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে তখন জায়গা পাল্টে অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের টারজান পয়েন্টেও কিছুদিন আগে শতাধিক গাছ কাটা হয়েছে। অথচ এই প্রশাসন পাঁচ বছরেও বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য কোনো মাস্টারপ্ল্যান দিতে পারেনি।
সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক কনোজ কান্তি রায় বলেন, ‘আমরা চাই, সব বিভাগই যেন ভবন পায়। তবে সেটা মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের মাধ্যমে হতে হবে। পরিবেশের সঙ্গে এই গাদ্দারি চলবে না। সবুজ বনায়ন ধ্বংসের এই মহড়া বন্ধ করতে হবে। আমাদের আজকের মানববন্ধন আমাদের তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া। ভবিষ্যতে যদি এই ধারা অব্যাহত রাখা হয়, তাহলে আমরা আমাদের জায়গা থেকে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলব।’
জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি সৌমিক বাগচি বলেন, ‘একের পর এক অপূর্ণাঙ্গ ভবনে ক্যাম্পাস ভরে আছে। গতকালও একটি বিভাগের ভবন নির্মাণের জন্য গাছসমৃদ্ধ জায়গা বেছে নেওয়া হয়েছে। অথচ গত মিটিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নতিস্বীকার করে যে এখনো মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়ন হয়নি। যদি এভাবে গাছ কাটা হয়, তাহলে আমরাও আর বসে থাকব না। গাছ কাটার এই মহাযজ্ঞ বন্ধ করতে হবে।’