জামায়াতের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে নিষেধাজ্ঞার আবেদনের ওপর ১০ আগস্ট শুনানি হতে পারে

0
117
সুপ্রিম কোর্ট

রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন অবৈধ ঘোষিত হওয়া বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা থেকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে করা আবেদনের ওপর আগামী বৃহস্পতিবার শুনানি হতে পারে।

একই সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ সংগঠনটির কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে করা আদালত অবমাননার আবেদনের ওপর একই দিন আপিল বিভাগে শুনানি হতে পারে।

আজ বৃহস্পতিবার এ-সংক্রান্ত আবেদন দুটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ৫১ নম্বর ক্রমিকে ছিল। সকাল নয়টার দিকে প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতি এজলাসে আসন গ্রহণ করেন।

আদালতের কার্যক্রম শুরু হলে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী তানিয়া আমীর ও আহসানুল করিম আবেদন দুটির আদালতের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

একপর্যায়ে আইনজীবী তানিয়া আমীর বলেন, অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ চেয়ে আবেদন দুটি করা হয়েছে, যা কার্যতালিকার ৫১ নম্বরে ক্রমিকে আছে। জাতীয় গুরুত্ব আছে। দ্রুত শুনানি করা প্রয়োজন, যদি কার্যতালিকার শীর্ষে থাকে। তারা ধারাবাহিকভাবে অবমাননা করে যাচ্ছে। কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞাও চাওয়া হয়েছে।

আদালত বলেন, ‘দেখি কতটুকু (কার্যতালিকা) এগোনো যায়।’

পরে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আহসানুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, আগামী বৃহস্পতিবার বিষয়টি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ৩৫ নম্বর ক্রমিকের আগে থাকবে বলেছেন আপিল বিভাগ। সেদিন আবেদনের ওপর শুনানি হতে পারে।

গত জুন মাসে তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ কয়েকজন (রিটকারী) আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদন দুটি করেন।

আবেদন দুটি গত ২৬ জুন আপিল বিভাগের চেম্বার আদালতে উপস্থাপন করা হয়। সেদিন চেম্বার আদালত আবেদন দুটি আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য নির্ধারণ করেন। এর ধারাবাহিকতায় আজ আবেদন দুটি আপিল বিভাগের কার্যতালিকায় ওঠে।

রাজনৈতিক দল হিসেবে ২০০৮ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে নিবন্ধন দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই নিবন্ধনের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ২০০৯ সালে রিট আবেদন করেন তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ ২৫ জন।

রিটের চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালের ১ আগস্ট রায় দেন হাইকোর্টের তিন সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ। রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করার সনদ দেওয়া হয়। রায়ের বিরুদ্ধে একই বছরই লিভ টু আপিল করেন জামায়াতের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল।

২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নিবন্ধন বাতিল করে প্রজ্ঞাপন জারি করে নির্বাচন কমিশন।

‘এক দশক পর সমাবেশের অনুমতি পেল জামায়াত’ ও ‘নিবন্ধন ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জামায়াতে ইসলামীর, এক দশক পর ঢাকায় সমাবেশ’—এমন শিরোনামে বিভিন্ন গণমাধ্যমে গত ১০ জুন প্রতিবেদন ছাপা হয়। এসব প্রতিবেদন যুক্ত করে মিছিল, সভা, সমাবেশসহ রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থেকে জামায়াতকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে সৈয়দ রেজাউল হক চাঁদপুরীসহ অন্যরা (রিটকারী) আবেদন করেন। আর জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি জেনারেলসহ আটজনের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে আরেকটি আবেদন করেন সৈয়দ রেজাউলসহ তিনজন।

আবেদনে বলা হয়, জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এই রায় আপিল বিভাগে স্থগিত হয়নি। জামায়াত রাজনৈতিক দল হিসেবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারে না। তারা নির্বাচনের অযোগ্য। অযোগ্য ও নিষিদ্ধ সংগঠন কোনো নির্বাচনে অংশ নিতে পারে না। কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে পারে না। দলটির বৈধতা না থাকায় রাজনৈতিক দাবি হিসেবে তারা ভোট চাইতে পারে না। রাস্তার আন্দোলনে এ ধরনের রাজনৈতিক দাবি আইন ও সংবিধানে অনুমোদিত নয়। জামায়াতে ইসলামীর নামে বা ব্যানারে যেকোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের অনুমতি আদালত অবমাননার শামিল।

আপিলকারী (জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল) নিজে বা অন্য কোনো ব্যক্তি বা এজেন্টের মাধ্যমে বৈধ রাজনৈতিক দল হিসেবে জানান দেয়, এমন কোনো রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড (জামায়াতের লেটারহেড, নাম, ব্যানার, প্রতীক ব্যবহার) পরিচালনা ও রাজনৈতিক সভা-সমাবেশ-র‍্যালি-মিছিল করা থেকে বিরত রাখতে নিষেধাজ্ঞা চাওয়া হয়েছে আবেদনে।

আপিল বিচারাধীন অবস্থায় নিবন্ধন বাতিলের ১০ বছর পর দলটির রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড ঘিরে করা আদালত অবমাননার অভিযোগে জামায়াতের আমির, সেক্রেটারি জেনারেল, নায়েবে আমিরসহ কেন্দ্রীয় নেতাদের বিরুদ্ধে আবেদন করা হয়।

জামায়াতের নেতাদের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে করা আবেদনে আবেদনকারী হিসেবে পক্ষভুক্ত হতে ৪২ জন বিশিষ্ট নাগরিক গত ২৭ জুলাই আপিল বিভাগে একটি আবেদন করেন। পক্ষভুক্ত হতে আবেদনকারীদের মধ্যে রয়েছেন সারওয়ার আলী, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, রামেন্দু মজুমদার, রফিকুন নবী, শাহরিয়ার কবির, নাসির উদ্দীন ইউসুফ, মুনতাসীর মামুন, মুহম্মদ জাফর ইকবাল, শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী ও হারুন হাবীব।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.