জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার নিয়ে নৃত্য পরিচালকদের অসন্তোষ

প্রজ্ঞাপনে থাকলেও ঘোষণায় নেই নাম

0
105

সম্প্রতি জাতীয় চলচ্চিত্র ২০২২ ঘোষণা করা হয়েছে। যেখানে ২৭ বিভাগে ৩৩ শিল্পী, কলাকুশলী, প্রতিষ্ঠান ও চলচ্চিত্রের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ প্রজ্ঞাপনে নাম থাকলেও ঘোষণায় নেই নৃত্য পরিচালকদের নাম। যা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নৃত্য পরিচালকরা। তবে জুরি বোর্ডের সদস্যরা বলেছেন, নম্বরের দিক দিয়ে তারা পাসই করতে পারেনি।

নৃত্য পরিচালকদের অভিযোগ, গেল দুই বছর প্রজ্ঞাপনে থাকলেও পুরস্কারে ছিল না কোন নৃত্য পরিচালকের নাম। পুরস্কার দেওয়ার মতো নাকি কোন গানের কোরিওগ্রাফি খুঁজে পায়নি জুরি বোর্ডের সদস্যরা। অথচ করোনা পর ২০২২ সাল ছিল বাংলা চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়ানোর বছর। ২০২২ সালে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে প্রায় অর্ধশত সিনেমা। যার মধ্যে দু’চারটি সিনেমা বাদে সবগুলোতেই ছিল গান।

নৃত্য পরিচালক ইউসুফ খাননৃত্য পরিচালক ইউসুফ খান।

বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে নৃত্য পরিচালক ইউসুফ খান বলেন, ‘যেকোনে সিনেমায় গান অনেক গুরুত্ব বহন করে। অনেক সময় গানের কারণে সিনেমা হিট হয়। যার অসখ্য প্রমাণ আমাদের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রিতে আছে। গানের কথা-সুর ও কণ্ঠের সঙ্গে মিলেয়ে পূর্ণাঙ্গ রূপ দেই আমরাই। প্রজ্ঞাপনে আমাদের এই ক্যাটাগরিতে কোনো সম্মাননা দেওয়া হলো না। এর চেয়ে দুঃখজনক কি আর হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২০২২ সালে বিগ বাজেটের অনেকগুলো সিনেমা মুক্তি পেয়েছে। একেক ছবিতে কমপক্ষে ৩-৪টি করে গান আছে। এতোগুলো গান জমা পড়লো কিন্তু একটি গানের কোরিওগ্রাফিকে সম্মাননা জানানো হলো না। আমরা কি এক নম্বর পাওয়াও যোগ্য না? যিনি এক নম্বর পাবেন তাকেই তো পুরস্কারটা দেওয়া উচিত। আমরা শুনেছি যারা জুড়ি বোর্ডে ছিলেন তারা নাকি নৃত্যভিত্তিক একটি গানও খুঁজে পাননি। তাহলে আমরা এতদিন কীভাবে ইন্ডাস্ট্রিতে টিকে আছি? এভাবে আমাদের অবহেলা করা হলে আমরা আরও পিছিয়ে যাবো। যারা এই মাধ্যমে কাজ করতে চান তারা নিরুৎসাহিত হবেন।’

নৃত্য পরিচালক হাবিব রহমান জানালেন, ‘২৮টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার দেওয়া হবে বলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। তার মধ্যে ১৫ নম্বর সিরিয়ালে ছিল নৃত্য পরিচালক বিভাগ। পুরস্কার ঘোষণার দেখা গেল নৃত্য পরিচালক ক্যাটাগরি বাদ দিয়ে ২৭টি বিভাগে পুরস্কার ঘোষণা করা হল। পরে শুনলাম বিচারকদের বিবেচনায় আসেনি নৃত্য পরিচালেকের বিষয়টি।’

নৃত্য পরিচালক হাবিব রহমান।

তিনি আরও বলেন, অনেক নৃত্য পরিচালকের গান জমা পড়েছে। আমার এককভাবে ৬টি ছবির ২০টি গান জমা দেওয়া ছিল। তার মধ্যে শাকিব খান ও পূজা চেরি অভিনীত ‘গলুই’ ছবির ৫টি গান করেছি। এই ৫টি গান পাঁচ ধরনের। এছাড়া অপু বিশ্বাস ও বাপ্পী চৌধুরীর ‘শ্বশুর বাড়ি জিন্দাবাদ’, মাহিয়া মাহি ও আদর আজাদের ‘যাও পাখি বল তারে’, মোশাররফ করিম-পরীমণি-রোশানের ‘মুখোশ’, নিপুণ-ইমন-সালওয়া ‘বীরত্ব’, অনন্ত জলিল-বর্ষার ‘দিন দ্য ডে’। ৬টি বাণিজ্যিক ছবিতে কোন গানই বিবেচনায় আসেনি এটা মেনে নিতো পারি না। যেহেতু নৃত্য পরিচালক ক্যাটাগরি আছে। সে অনুযায়ী আমাদের পুরস্কারটা দিলে কি হতো না? দুইবার পুরস্কারটা বাতিলের সিদ্ধান্ত মানে আমাদের সঙ্গে অন্যায় কর হল।

এ বিষয়ে জাতে চাইলে চলচ্চিত্র পরিচালক শাহ মো. কিরণ বলেন, ‘সিনেমায় গান খুব বড় বিষয়। সেই গানের পূর্ণাঙ্গ প্রাণ দেন নৃত্য পরিচালকরা। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের প্রজ্ঞাপনে নৃত্য পরিচালক ক্যাটাগরি থাকলেও নাম ঘোষণায় কেন তাদের পুরস্কার দেওয়া হল না তা আমার বোধগম্য নয়। তবে এভাবে তাদের অবহেলা করলে দিনশেষে ক্ষতিটা সিনেমার ওপরই পড়বে। নতুন যারা আসতে চায় তারা এই পেশা থেকে মুখ ফিয়ে নেবে। কর্তৃপক্ষকে আমি বলব, এটা যদি পুনর্বিবেচনার সুযোগ থাকে তাহলে তারা যেন সেটা করেন।’

যাচাই-বাছাই আর মূল্যায়নের জন্য প্রতি বছরই সাংস্কৃতিক অঙ্গনের প্রতিনিধিদের নিয়ে গঠন করা হয় জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জুরি বোর্ড। ২০২২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য ২৭ এপ্রিল প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় ১৩ সদস্যের জুরি বোর্ড। সেই বোর্ডের একজন সদস্য ছিলেন নায়ক রিয়াজ।


২০২২ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে জুরি বোর্ডের সদস্য ছিলেন রিয়াজ আহমেদ। ছবি: সংগৃহীত

বিষয়টি নিয়ে তিনি বলেন, ‘জুড়ি বোর্ডের সদস্য আমি তো একা ছিলাম না। যারা ছিলেন তারা প্রত্যেকেই সূক্ষ্মভাবে দেখে নম্বর প্রদান করেছেন। একাটা স্ট্যান্ডার্ড নম্বরের উপর ভিত্তি করেও পুরস্কারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়। এবার যে গানগুলো জমা পড়েছে সেগুলোর মধ্যে থেকে আমরা স্ট্যান্ডার্ড মানের নৃত্য পরিচালক খুঁজছিলাম। কিন্তু পাইনি। জমাকৃত গানগুলো সেই নম্বরের ধারের কাছেও ছিলো না। পুরস্কারের উপযোগী যে গানগুলো পাওয়া গেছে তা ভিনদেশী নৃত্য পরিচালকের করা। তাই হয়ত এই ক্যাটাগরি বাদ দেওয়া হয়েছে।’

জুড়ি বোর্ডের আরেক সদস্য নির্মাতা মুশফিকুর রহমান গুলজার বলেন, ‘পুরস্কারের জন্য নির্ধারিত নীতিমালা থাকে। ১০ নম্বরের উপর ভিত্তি করে আমরা নম্বর দিয়ে থাকি। বিচারকের নম্বর যোগ করে ৫ নম্বর পেলে আমরা পাশ হিসেবে গণ্য করি। কিন্তু এবার নৃত্য পরিচালক ক্যাটাগরিতে যেগুলো গান জামা পড়েছিলো সেগুলো পাশ মার্কের ধারের কাছেও যেতে পারিনি। ফলে এটা বাদ পড়েছে।’

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.