জব্দ রুশ সম্পদ নিয়ে ব্রিটেনে নতুন আইন, লক্ষ্য ইউক্রেনের ক্ষতিপূরণ

0
166
ইউক্রেনের সুমি অঞ্চলে রুশ বাহিনীর বিধ্বস্ত ট্যাংক

যুক্তরাজ্য এমন একটি নতুন আইন করতে চলেছে, যার আওতায় দেশটির মন্ত্রীরা ইউক্রেনের ক্ষতিপূরণের জন্য অর্থ না দেওয়া পর্যন্ত রাশিয়ার ওপর চলমান নিষেধাজ্ঞা বজায় রাখতে পারবেন। ফলে এটি এমন একটি পদক্ষেপ হতে যাচ্ছে, যার মাধ্যমে জব্দ করা রাশিয়ার সম্পদ ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যবহারের লক্ষ্যে দান করা যাবে।

দ্য গার্ডিয়ানের সংবাদে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ সরকার রাশিয়ার যে সম্পদ জব্দ করেছে, তা কার্যত বাজেয়াপ্ত করার বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারে এই আইন। তবে অন্যান্য পশ্চিমা দেশ এ ধরনের পদক্ষেপ এখন পর্যন্ত নাকচ করে এসেছে। কারণ, এতে যে নজির স্থাপিত হবে, তাতে অন্যান্য দেশে পশ্চিমাদের যে সম্পদ আছে, সেটা তারা জব্দ করার সুযোগ পাবে।

তবে যুক্তরাজ্য সরকারের মতে, নতুন আইন রাশিয়ার সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার অধিকার দিচ্ছে না এবং অপরাধের প্রমাণ থাকলেই কেবল এই সম্পদ ব্যবহার করা যাবে। শিগগিরই লন্ডনে ইউক্রেন পুনরুদ্ধার সম্মেলন হতে যাচ্ছে, তার আগেই এই আইনের বিষয়টি সামনে এল। তবে ইউক্রেনের বিষয়ে আরও সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণের যে দাবি উঠেছে, তাকে সামলানোর একটি চেষ্টা হিসেবে সমালোচকেরা এই পদক্ষেপকে দেখবেন বলে গার্ডিয়ানের খবরে বলা হয়েছে।

সংবাদে বলা হয়েছে, এ আইন নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য বদলে দিতে পারে, অর্থাৎ রাশিয়া যত দিন ক্ষতিপূরণ দিতে রাজি না হয়, তত দিন নিষেধাজ্ঞা বলবৎ রাখা যাবে। ফলে নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য আর নিছক ইউক্রেনের ভৌগোলিক অখণ্ডতা রক্ষার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে না। এখন এই উদ্দেশেই নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য সরকারই প্রথম এমন একটি আইন করতে যাচ্ছে, যদিও এটি করতে তারা হয়তো সময় নেবে।

নতুন ব্যবস্থায় আরও যা থাকতে পারে তা হলো, যুক্তরাজ্যে কোনো ব্যক্তির কী পরিমাণ সম্পদ আছে, তার বিবরণী দিতে হবে। সেটা করতে না পারলে তাঁর সম্পদ বাজেয়াপ্ত পর্যন্ত হতে পারে।

আইনে আরও যা যা থাকতে পারে, তা হলো, যুক্তরাজ্যে কোনো ব্যক্তির কাছে রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ থাকলে তার বিবরণী দিতে হবে। এতে যুক্তরাজ্য সরকারের পক্ষে জানা সম্ভব হবে, যুক্তরাজ্যে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঠিক কত সম্পদ আছে। তবে এসব সম্পদের তথ্য জনসমক্ষে প্রকাশ করা হবে না।

আইনের যেসব বিষয় আরও থাকতে পারে তার মধ্যে একটি এ রকম—নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা স্বেচ্ছায় ইউক্রেনের পুনরুদ্ধার কার্যক্রমের জন্য তাদের সম্পদ স্থানান্তর এবং সে দেশের কাছে হস্তান্তর করতে পারেন।

যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলি বলেন, ‘ইউক্রেন যখন রাশিয়ার হামলা থেকে নিজেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে, তখন পুতিনের যুদ্ধের নারকীয় ধ্বংসযজ্ঞ পরিষ্কারভাবে বোঝা যাচ্ছে। পুনর্গঠনে ইউক্রেনের বিপুল অর্থ প্রয়োজন। রাশিয়ার আগ্রাসন থেকে পুনর্গঠনে যত দিন লাগে, আমরা তত দিন ইউক্রেনের পাশে থাকব। সেই সঙ্গে ইউক্রেনকে সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে ওঠার ভিত্তি তৈরিতে সহায়তা করব।’

যুক্তরাজ্যের অর্থমন্ত্রী জেরেমি হান্ট বলেছেন, ‘পুতিন ইউক্রেনে যে ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছেন, তার আর্থিক দায় রাশিয়াকে নিতে হবে। রাশিয়ার অর্থ যেন ইউক্রেনের জনগণের হাতে পৌঁছায়, তা নিশ্চিত করতে যুক্তরাজ্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে প্রস্তুত, সেই পথ তারা তৈরি করে দেবে।’

তবে যুক্তরাজ্য সরকারের কর্তাব্যক্তিরা দ্য গার্ডিয়ানকে বলেছেন, রাশিয়ার সম্পদ ইউক্রেনের জনগণের কল্যাণে কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সে লক্ষ্যে এই আইনের বিষয়টি চূড়ান্ত কথা নয়, বরং অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা করে কাঠামো তৈরির ইচ্ছা আছে তাদের। কাউকে জোর করে ইউক্রেনে অর্থ স্থানান্তরে বাধ্য করা হবে না, আবার কেউ দান করলে যে নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে চলে যাবে, তা–ও নয়।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.