ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ওয়্যার হাউস (গুদাম) থেকে প্রায় ৬০ কেজি মালপত্র অবৈধ উপায়ে বের করা হয়েছে। বিষয়টিকে ‘চুরি’ বলছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস। এ ‘চুরি’ করতে আমদানিকারকের সঙ্গে আট লাখ টাকার চুক্তি করেন একজন ‘কাস্টম সরকার’। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার মামলা হলে দুজনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস কর্তৃপক্ষ ও বিমানবন্দরের সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে ও মামলার এজাহার সূত্রে এসব কথা জানা গেছে। বিমান বলছে, এ ঘটনায় তাদের ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার রাজস্ব হারিয়েছে।
বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, বিমানবন্দরে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিংয়ের দায়িত্ব পালন করে বিমান। এর অংশ হিসেবে বিভিন্ন এয়ারলাইনস ও যাত্রীদের লাগেজসহ নানা সেবা দেওয়ার পাশাপাশি আমদানি-রপ্তানিতেও সেবা দেয় বিমান। আমদানির ক্ষেত্রে বিভিন্ন এয়ারলাইনসের মাধ্যমে আসা পণ্য কার্গো ভিলেজের গুদামে জমা রাখা হয়। সেখান থেকে কাস্টমস ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরওয়ার্ডিং (সিঅ্যান্ডএফ) এজেন্টের মাধ্যমে শুল্ক দিয়ে পণ্য খালাস করেন আমদানিকারক। গুদামে পণ্য রাখার জন্য নির্দিষ্ট হারে ভাড়া পায় বিমান।
বিমান সূত্রে জানা গেছে, গত ৪ এপ্রিল টার্কিশ এয়ারলাইনসের একটি ফ্লাইটে (টিকে-৭১২) ৬০ কেজি ওজনের একটি পেপার ক্যারেট (কাগজে মোড়ানো বাক্স) বিমানবন্দরে পৌঁছায়। ক্যারেটটির ভেতরে পাম্পের যন্ত্রাংশ ছিল। এটি আমদানি করেছিল এফএম ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ক্যারেটটি প্রধান ওয়্যার হাউস-১–এ রাখা হয়। ৩০ এপ্রিল বিমানের নিরাপত্তাকর্মী লক্ষ করেন, ক্যারেটটি খোলা ও মালামাল নেই। পরে ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে বিমানবন্দরে কর্মরত কাস্টম সরকার (সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের নিয়োগ দেওয়া কর্মী) ছামরুল ইসলামকে সন্দেহভাজন হিসেবে শনাক্ত করা হয়।
এ ঘটনায় বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের সহকারী ব্যবস্থাপক নিরাপত্তা (কার্গো আমদানি) মো. জামাল হোসেন বাদী হয়ে গত মঙ্গলবার বিমানবন্দর থানায় মামলা করেন। এতে ছামরুলসহ চারজন কাস্টম সরকারের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও কয়েকজন ব্যক্তিকে আসামি করা হয়। ছামরুল ও মোস্তাফিজুর রহমানকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্য দুই আসামি রানা ও রিন্টু পলাতক।
বিমানের একটি সূত্র জানায়, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছামরুল অবৈধ উপায়ে পণ্য সরিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করেন। তাঁর স্বীকারোক্তি মামলার এজাহারের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিমানের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘ছামরুল ও তাঁর সহযোগীরা যে কাজ করেছেন, সেটি চুরি। এর মাধ্যমে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার পাশাপাশি বিমানের গুদামভাড়া ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে যার পরিমাণ ৮ থেকে ১০ লাখ টাকা।’ ওই কর্মকর্তা জানান, ছামরুল আমদানিকারকের পূর্বপরিচিত। অবৈধ উপায়ে বিমানবন্দর থেকে খালাস করা পণ্যটি সরাসরি (ব্যাংকের মাধ্যমে নয়) আমদানি করা হয়েছিল। এতে শুল্কের পাশাপাশি কাস্টমসে জরিমানা দিতে হতো এবং পণ্য খালাস করতে তুলনামূলকভাবে বেশি সময় লাগত। তাই আমদানিকারকের পক্ষ থেকে ছামরুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে আট লাখ টাকার বিনিময়ে অবৈধ উপায়ে পণ্য খালাস করার চুক্তি করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এফএম ট্রেডার্সের সঙ্গে গতকাল শনিবার টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। তবে কেউ ফোন ধরেননি। পরে ই–মেইল করেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও শফিউল আজিম বলেন, ‘আট লাখ টাকা ঘুষ নিয়ে এই চুরির কাজ করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনায় এবারই প্রথম মামলা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের মূলোৎপাটন করা হবে।’