চীনের বিনিয়োগ ও পণ্য বিক্রি ঠেকাতে যা করছে ভারত

0
90
ভারত ও চীনের পতাকা

ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও ব্যক্তিগত কম্পিউটার আমদানির জন্য লাইসেন্স লাগবে বলে এক অবাক করা ঘোষণা জানিয়েছিল ভারত সরকার, তবে দুই দিন পর সেই জায়গা থেকে সরে এসেছে তারা। বলেছে, আগামী তিন মাস এসব আমদানিতে লাইসেন্স লাগবে না।

ভারত সরকারের পক্ষ থেকে এটা স্পষ্ট করা হয়নি যে এই লাইসেন্সের শর্ত মূলত চীনকে লক্ষ্য করে আরোপ করা হয়েছে। ভারত প্রতিবছর যে ১০ বিলিয়ন বা ১ হাজার কোটি ডলারের ব্যক্তিগত কম্পিউটার ও ট্যাবলেট আমদানি করে, তার অর্ধেকেরও বেশি আসে চীন থেকে।

২০২০ সালের মধ্যভাগে ভারত-চীন সীমান্তে সেনা সংঘর্ষের পর দুই দেশের সম্পর্কের ব্যাপক অবনতি হয়। সেই ঘটনায় ২৪ জন মানুষ নিহত হয়েছিলেন।

রয়টার্সের কাছে ভারতের বেশ কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, মূলত চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবিলায় এই শর্তারোপ করা হয়েছে।

৩ আগস্ট ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার জানায়, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট ও ব্যক্তিগত কম্পিউটার আমদানিতে লাইসেন্স প্রয়োজন হবে। অর্থাৎ এসব আমদানি করার আগে আমদানিকারকদের সরকারের কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। সরকার জানায়, দেশীয় উৎপাদন বৃদ্ধি এবং বিশ্বাসযোগ্য হার্ডওয়্যার ও আইটি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে এই লাইসেন্সের শর্তারোপ করা হয়।

তবে ব্যবসায়ী মহল থেকে বলা হয়, এতে প্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি তৈরি হওয়ার পাশাপাশি পণ্যের দাম বেড়ে যেতে পারে। এরপর ভারত সরকার তিন মাসের জন্য সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে। ২০২০ সালের সীমান্ত সংঘর্ষের পর ভারতে চীনের বেশ কিছু বিনিয়োগ প্রকল্প আটকে গেছে। এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক, কোন কোন বিনিয়োগ এখন পর্যন্ত আটকে গেছে

বিওয়াইডির বিনিয়োগ

ভারতে কারখানা করতে চেয়েছিল চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি কোম্পানি বিওয়াইডি। কিন্তু তাদের প্রস্তাব নিয়ে নয়াদিল্লির নিরীক্ষার মুখে পড়ায় বিওয়াইডি ভারতীয় অংশীদারকে বলেছে, এই বিনিয়োগ প্রকল্প তারা বাতিল করতে চায়। এ আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দুটি সূত্র রয়টার্সকে এ তথ্য জানিয়েছে।

চলতি বছরের এপ্রিলে বিওয়াইডি ও ভারতের মেঘা ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে ১০০ কোটি ডলার ব্যয়ে এ কারখানা নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিল।

গ্রেট ওয়াল মোটর্স

চীনের আরেক গাড়ি কোম্পানি গ্রেট ওয়াল মোটর্সও ভারতে ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চেয়েছিল। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমতি না পাওয়ার কারণে তারা সেই প্রকল্প বাতিল করে তখন কর্মরত সব কর্মীকে ছাঁটাই করে।

শাওমির সম্পদ জব্দ

ভারতের কেন্দ্রীয় আর্থিক অপরাধ তদন্তকারী সংস্থা গত বছর থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত স্মার্টফোন কোম্পানি শাওমির ৬৭ কোটি ডলারের সম্পদ জব্দ করেছে। এতে ভারতে কাজ করাই কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য।

ভারতীয় সংস্থার অভিযোগ, শাওমি রয়্যালটির নামে বিভিন্ন বিদেশি সংস্থায় অবৈধভাবে অর্থ পাঠায়। শাওমি অবশ্য তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

মোবাইল অ্যাপস নিষিদ্ধ

পশ্চিমা দেশগুলোর মতো ভারতও তথ্য এবং গোপনীয়তার কথা বলে ৩০০ চীনা মোবাইল অ্যাপস নিষিদ্ধ করেছে, যার মধ্যে আছে জনপ্রিয় ব্যাটেল–রয়্যাল ফরম্যাট গেম, যা তৈরি করছে ‘ক্র্যাফটন ইনকরপোরেশন’। এটি মূলত দক্ষিণ কোরিয়ার একটি কোম্পানি, যার পেছনে আছে চীনের টেনসেন্ট।

নতুন বিনিয়োগ খুঁটিয়ে দেখার আইন

২০২০ সালের সেনা সংঘর্ষের পর ভারত নিজ দেশে প্রতিবেশী দেশগুলোর বিনিয়োগ প্রস্তাব খুঁটিয়ে দেখার প্রক্রিয়া কঠোরতর করে। প্রস্তাবগুলো পাস করার আগে আরও খুঁটিনাটি দেখার শর্ত যুক্ত করে তারা। চীনা কোম্পানির বিনিয়োগ ও তাদের মাধ্যমে ভারতে কোম্পানি অধিগ্রহণ ঠেকাতেই এটা করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। এতে গত তিন বছরে শত শত কোটি ডলার মূল্যমানের অনেক বিনিয়োগ প্রস্তাব আটকে গেছে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.