গ্রাহকের সাড়ে তিন কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা দুই এনজিও

0
137

মাত্র ৬১ হাজার টাকা বিনিয়োগে প্রতি মাসে ২৫ হাজার টাকা করে লাভ মিলবে, কিংবা জাতীয় পরিচপত্রের ফটোকপি, রঙিন চার কপি ছবি দিয়ে সঞ্চয় জমা করলে এক সপ্তাহে মিলবে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ। এমন প্রলোভন দেখিয়ে রংপুরের পীরগাছা ও তারাগঞ্জ উপজেলার ৯ শতাধিক গ্রাহকের প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা হয়েছে মাল্টিন্যাশনাল ক্রেডিট এমএলএম কোম্পানি ‘এমটিএফই’ ও ‘অগ্রণী ই-কর্মাস লিমিটেড’ নামের দুই বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। নিঃস্ব গ্রাহকরা প্রতারকদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছেন।

জানা যায়, গরু-ছাগল, শখের মোটরসাইকেল বিক্রি করে, জমি বন্ধক কিংবা ব্যাংক ঋণ নিয়ে এমটিএফইতে বিনিয়োগ করেছিলেন পীরগাছার চার শতাধিক নারী-পুরুষ। এখন সুদ-আসল কোনোটাই ফেরত না পেয়ে নিঃস্ব তারা। এর  নেপথ্যে ইন্ধন যুগিয়েছে ‘প্রগতি’ নামের একটি গ্রামীণ সমিতি।

স্থানীয়রা জানান, গ্রামের মানুষ এমটিএফই সম্পর্কে কিছুই জানত না। প্রগতি সমিতির কর্মীরা তাদের প্রলোভন দিয়ে একেকজনের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ২০ হাজার টাকা, ঊর্ধ্বে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকাও নিয়েছেন। বর্তমানে অফিসে তালা ঝুলিয়ে তারাও পলাতক।

পীরগাছার তাম্বুলপুর ইউনিয়নের নেক মামুদ এলাকার হোসনে আরা ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে এমটিএফইতে ৬১ হাজার টাকা বিনিয়োগ করে সর্বস্বান্ত হয়েছেন। ভ্যানচালক সুরুজ জামান ২৫ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করেন। এখন সুদ-আসল কোনোটাই না পাওয়ায় অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। এভাবেই প্রতারণার ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়েছেন আনোয়ারুল ইসলাম, নজরুল ইসলাম, রতন মিয়া, স্বপন মিয়া, শেফালী বেগমসহ পীরগাছার বিভিন্ন এলাকার চার শতাধিক নারী-পুরুষ। তারা জানান, ডলারের প্রলোভন দেখিয়ে প্রগতি সমিতির আমিনুল ইসলাম, সুজা মিয়া, হজরত আলী, সিরাজুলসহ কয়েকজন ফুসলিয়ে ইন্টারনেটে (অনলাইনে) টাকা বিনিয়োগ করিয়েছেন।

এমটিএফইতে লক্ষাধিক টাকা জমা করে প্রতারণার শিকার এক স্কুলশিক্ষক বলেন, কোনো কাজ না করে ঘরে বসেই প্রতি মাসে লাখ লাখ টাকা আয় করা যাবে অ্যাপের মাধ্যমে। অ্যাকাউন্ট খোলার পর থেকে শুরু হবে টাকা পাওয়া। এমন লোভনীয় কথার ফাঁদে ফেলে ৩ কোটি টাকা নিয়ে তারা উধাও।

প্রগতি সমিতির সদস্য অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলাম বলেন, তাঁর মাধ্যমে কোনো লেনদেন হয়নি। মূল ব্যক্তি তিনজন সিইও আমিনুল, কামিং সিইও সুজা আর হযরত আলী। পীরগাছায় অফিস খুলে চলছিল এই প্রতারণার কাজ। গত ১৮ আগস্ট থেকে উধাও হয় অ্যাপটি। তবে পীরগাছা থানার ওসি মাসুমুর রহমান জানান, প্রতারণার শিকার কেউ এখনও অভিযোগ করেননি।

অন্যদিকে সঞ্চয়ের টাকা জমা রাখলে এক সপ্তাহের মধ্যে ৫০ হাজার থেকে ৩ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ দেওয়ার লোভ দেখিয়ে তারাগঞ্জে পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা নিয়ে চম্পট দিয়েছে অগ্রণী। দেড় মাস আগে উপজেলা পরিষদের পাশে ব্র্যাক মোড় এলাকায় কার্যালয় খোলে তারা। পাঁচটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে সমিতি গঠন করে সদস্য ও ঋণ ফরম বিতরণ করা হয়। পাঁচ হাজার টাকা জমা দিলে ৫০ হাজার, ১০ হাজার টাকায় ১ লাখ টাকা ঋণের লোভ দেখানো হয়। ৩০ হাজার টাকা সঞ্চয়ের উদ্দেশে ১০০ টাকা হারে কিস্তি আদায় শুরু হয়। ৩০ হাজার জমালে ৩ লাখ টাকা ঋণের প্রলোভনও দেয় তারা। গত ১৪ আগস্ট ঋণ বিতরণ শুরু করার কথা ছিল। কিন্তু গ্রাহকরা গিয়ে দেখেন কার্যালয়ে তালা ঝুলছে।

ছুট মেনানগর গ্রামের আব্দুর রহমান, ওকড়াবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী দুলু মিয়া, আনছারুল ইসলামসহ অনেকে জানান, অগ্রণীর ম্যানেজার দিনাজপুরের বাসিন্দা ওমর ফারুক। ঋণের আশায় সঞ্চয় জমা করে এখন নিঃস্ব তারা। চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামের কৃষক আসাবুদ্দিন ওই এনজিওতে ১ লাখ টাকা ঋণের আবেদন করেন। দুই ভাই মিলে ২০ হাজার টাকা সঞ্চয়ও জমা করেছিলেন। ঋণ দূরের কথা, সঞ্চয়ও গেল বলে অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন তিনি।

ইকরচালী ইউনিয়নের ইউপি সদস্য জিয়া রহমান জানান, বিভিন্ন গ্রামের পাঁচ শতাধিক গ্রাহকের অর্ধকোটি টাকা সঞ্চয় নিয়ে পালিয়েছে এনজিওটি। তারাগঞ্জ থানার ওসি মোস্তাফিজার রহমান জানান, প্রতারণার শিকার কয়েকজন অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। ইউএনও রাসেল মিয়া বলেন, মানুষকে সচেতন হতে হবে। কোনো কিছু করার আগে খোঁজখবর নেওয়া উচিত।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.