দগ্ধ লতিফা বেগম উপজেলার রসুলুল্লাহবাদ ইউনিয়নের উত্তর দাররা গ্রামের মো. জাকারিয়ার স্ত্রী এবং একই উপজেলার কালঘড়া গ্রামের হেলাল সরকারের মেয়ে। অভিযুক্ত মো. জালাল উত্তর দাররা গ্রামের জিন্নত আলী ব্যাপারীর ছেলে।
আজ সোমবার বিকেলে নবীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, অভিযুক্ত জালাল একজন মাদকাসক্ত। তাঁকে আটকের চেষ্টা চলছে। এ ঘটনায় দগ্ধ লতিফা বেগমের পরিবার থেকে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়নি।
প্রতিবেশীরা ও ওই পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, ১৯৯৬ সালে জাকারিয়ার সঙ্গে বিয়ে হয় লতিফার। তাঁদের দুটি ছেলেসন্তান রয়েছে। বড় ছেলে মো. ইয়াছিন (২৪) দুবাইপ্রবাসী। ছোট ছেলে ফাহিম এ বছর উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। জাকারিয়া নিজেও দুবাইয়ে ছিলেন। দেড় বছর আগে তিনি স্থায়ীভাবে দেশে চলে আসেন।
লতিফা বেগমের দেবর মো. জালাল চার-পাঁচ বছর ধরে মাদকাসক্ত। পরিবারের লোকজন তাঁকে একাধিকবার পুনর্বাসনকেন্দ্রে চিকিৎসাও করিয়েছেন। কিন্তু পুনর্বাসনকেন্দ্র থেকে বেরিয়ে আবারও মাদক সেবন শুরু করেন তিনি।
মদকদ্রব্য কেনার টাকার জন্য নিজের স্ত্রী, বোন ও ভাবি লতিফাকে একাধিকবার মারধর করেছেন জালাল। কয়েকদিন আগে লতিফা তাঁর মাদক সেবন অব্যাহত রাখার বিষয়টি পরিবারের সদস্যদের জানান। এতে জালাল ক্ষুব্ধ হন। গতকাল দুপুরে এক প্রতিবেশীর ঘরে বসে পিঠা তৈরি করছিলেন লতিফা। এ সময় হঠাৎ করে জালাল এসে তাঁকে বেধড়ক মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে তাঁর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এতে তাঁর সারা শরীর দগ্ধ হয়।
পরিবারের লোকজন লতিফা বেগমকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় রসুল্লাহবাদ পঙ্গু হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানকার চিকিৎসক লতিফাকে ঢাকায় নেওয়ার পরামর্শ দেন। পরিবারের লোকজন গতকাল সন্ধ্যায় তাঁকে রাজধানীর শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে নিয়ে যান।
চিকিৎসকের বরাত দিয়ে দগ্ধ লতিফা বেগমের স্বামী মো. জাকারিয়া জানিয়েছেন, লতিফার শরীরের ৫৪ শতাংশ আগুনে পুড়ে গেছে। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাঁকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়। বর্তমানে তাঁর অবস্থা সংকটাপন্ন।
মো. জাকারিয়া বলেন, ‘আমার ভাই তিন বছর ধরে মাদকসেবী। সে আগেও আমার বোন ও আমার স্ত্রীকে মারধর করেছে। গতকাল ঘটনার সময় আমি জমিতে ঘাস কাটছিলাম। ঘটনা শুনে দ্রুত বাড়িতে গিয়ে স্ত্রীকে কাতরাতে দেখি। আমার ভাই তখন পাশে দাঁড়িয়ে ছিল। স্থানীয় ব্যক্তিদের সহায়তায় স্ত্রীকে উদ্ধার করে উপজেলার একটি হাসপাতালে ও পরে ঢাকায় নিয়ে আসি।’
লতিফা বেগমের ভাতিজা তৈবুর রহমান বলেন, ‘এক বছর আগে আমার ফুফুকে মারধর করেছিল তাঁর দেবর জালাল। তখন থানায় মামলাও হয়েছে।’