গণতন্ত্রের গুণগত মান নিশ্চিত করা গুরুত্বপূর্ণ

0
114
মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের আন্ডার সেক্রেটারি উজরা জেয়ার সফরের মধ্য দিয়ে যে বার্তা ওয়াশিংটন দিয়েছে, সেটা নতুন নয়। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এই বার্তা ধারাবাহিকভাবে দিয়ে আসছে। যুক্তরাষ্ট্র বারবার এই বার্তা দিয়ে বোঝাতে চাইছে, বাংলাদেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে একটি পর্যায়ে উন্নীত হয়ে এগিয়ে চলেছে, তখন আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গণতন্ত্রের গুণগত মান নিশ্চিত করাটাও গুরুত্বপূর্ণ।

নাগরিকেরা যাতে অবাধে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার চর্চা করতে পারেন, সেটা নিশ্চিত করাটা জরুরি। মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি উল্লেখ করেছেন, নির্বাচনের প্রস্তুতিকালীন যে সময়টাতে আমরা প্রবেশ করেছি, সেখানে নির্বাচনের পরিবেশ যাতে সুষ্ঠু থাকে, সবাই যেন স্বাধীনভাবে মত প্রকাশ করতে পারে।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের মধ্যে যে মতপার্থক্য আছে, তা দূর করার জন্য কোনো আলোচনা হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছে।

সংলাপে যুক্তরাষ্ট্র কোনোভাবে যুক্ত নয়, এটা উল্লেখ করলেও এর মধ্যে এমন ইঙ্গিতও রয়েছে যে নির্বাচনের ক্ষেত্রে কোনো সহায়ক ভূমিকা পালনের প্রশ্ন এলে তারা বিষয়টিকে ইতিবাচকভাবে বিবেচনায় নেবে।

এখানে মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশের নির্বাচন শুধু আমাদের জন্যই নয়, পুরো অঞ্চলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলের স্থিতিশীলতার স্বার্থে এই নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ সরকার ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়ে আসছে। বাংলাদেশের এই ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করে আসছে যুক্তরাষ্ট্র।

অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তার সঙ্গে সরকারের বার্তার মধ্যে একধরনের সাযুজ্য আমরা দেখতে পাচ্ছি। এর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনগণের আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে এই বার্তা সামঞ্জস্যপূর্ণ। দেশের জনগণ একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে আগ্রহী। জনগণের প্রত্যাশা হচ্ছে নির্বাচনের প্রক্রিয়াটা এমন হবে, যেখানে তাঁরা অবাধে তাঁদের মতামতের প্রতিফলন ঘটাতে সক্ষম হবেন। তাঁদের পছন্দের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারিত হবে।

আরেকটি বিষয় উল্লেখ করা দরকার, সেটি হলো আমাদের রপ্তানির বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্র। ফলে দেশের রপ্তানি বাজারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে শ্রমিকের অধিকার এবং তাঁদের সুরক্ষার বিষয়টিও যে গুরুত্বপূর্ণ, সেটি তিনি (উজরা জেয়া) স্পষ্ট করেই বলে গেছেন। কাজেই এ বিষয়গুলোকে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নেওয়াই সমীচীন হবে।

মার্কিন আন্ডার সেক্রেটারি নাগরিক সমাজের গুরুত্ব, শ্রমিকের অধিকার এবং মতপ্রকাশের স্বাধীনতার যে প্রসঙ্গগুলো আলোচনায় এনেছেন, তা গণতন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। বিশেষ করে নির্বাচনকালীন পরিস্থিতিতে গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতার ওপর বিশেষভাবে তিনি জোর দিয়েছেন।

  • মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, প্রেসিডেন্ট, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.