একটি দেশে অপুষ্টির মাত্রা, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের উচ্চতা অনুযায়ী কম ওজন, পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের বয়স অনুযায়ী কম উচ্চতা এবং শিশুমৃত্যুর হার হিসাব করে ক্ষুধার মাত্রা নির্ধারণ করা হয়। বৈশ্বিক, আঞ্চলিক বা জাতীয়—যেকোনো পর্যায়ে ক্ষুধার মাত্রা নির্ণয় করতে এই সূচকগুলো ব্যবহার করা হয়।
বিশ্ব ক্ষুধা সূচকে কারও স্কোর শূন্য হলে বুঝতে হবে, সেখানে ক্ষুধা নেই। আর স্কোর ১০০ হওয়ার অর্থ, সেখানে ক্ষুধার মাত্রা সর্বোচ্চ। ক্ষুধা সূচক ১০ থেকে ১৯ দশমিক ৯-এর মধ্যে থাকলে ওই দেশ ‘মাঝারি মাত্রার’ ক্ষুধা আক্রান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে। এ বছর বাংলাদেশের স্কোর ১৯ দশমিক ৬। বাংলাদেশ ক্ষুধা মেটানোর ক্ষেত্রে ধারাবাহিকভাবে উন্নতি করছে।
২০২১ সালে ক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ১৯ দশমিক ১। গত বছর ১১৭টি দেশের মধ্যে ৭৬তম হয়েছিল বাংলাদেশ। সে হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান খারাপ হয়েছে বলেই মনে হয়। বিষয়টি নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজকদের প্রশ্ন করেন গণমাধ্যমকর্মীরা। এর কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি তাঁরা।
আয়োজকেরা বলেন, আগের একটি বছরকে ভিত্তি বছর (রেফারেন্স ইয়ার) ধরে ওই বছরের সঙ্গে সর্বশেষ ক্ষুধা সূচকের তুলনা করা হয়। এবারের প্রতিবেদনের ভিত্তি বছর ২০১৪ সাল। অর্থাৎ, ২০১৪ সালের সূচকের তুলনায় ক্ষুধা সূচকে কতটা অগ্রগতি হয়েছে, তা বিবেচনা করতে হবে। ২০১৪ সালে বাংলাদেশের স্কোর ছিল ২৬ দশমিক ৩, যা ক্ষুধার ‘গুরুতর’ মাত্রাকে নির্দেশ করে। সে হিসেবে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের অগ্রগতি হয়েছে। তাহলে গত বছরের তুলনায় এবার স্কোর বেশি কেন—সেটির কোনো ব্যাখ্যা তাঁরা দিতে পারেননি।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশে কৃষিজমি কমেছে। এরপরও দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। খাদ্যনিরাপত্তাকে গুরুত্ব দিয়ে উৎপাদন বাড়াতে জোর দেওয়া হয়েছে। তবে এখনো সবার জন্য পুষ্টি নিশ্চিত করা যায়নি। এখন দরকার পুষ্টি নিশ্চিত করা।
কনসার্ন ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের এ দেশীয় পরিচালক মনীশ কুমার আগরওয়াল বলেন, বাংলাদেশ খাদ্যনিরাপত্তাসহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে যথেষ্ট উন্নতি করেছে। কিন্তু কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েই গেছে। ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির কারণে মৌলিক খাবারের সংস্থানও অনেক দরিদ্র পরিবারের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (বিএনএনসি) মহাপরিচালক হাসান শাহরিয়ার কবির, কৃষি গবেষণা পরিষদ বাংলাদেশের নির্বাহী সভাপতি শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার, ওয়েল্ট হাঙ্গার হিলফ বাংলাদেশের হেড অব মিশন ফাতিমা আজিজোভা ও হেলভেটাস বাংলাদেশের ভারপ্রাপ্ত এ দেশীয় পরিচালক শামীম আহমেদ প্রমুখ বক্তৃতা করেন।
চলতি বছর ক্ষুধা সূচকে এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের ওপরে আছে শ্রীলঙ্কা ও নেপাল। ১৩ দশমিক ৬ স্কোর নিয়ে শ্রীলঙ্কার অবস্থান ৬৪তম। এরপর ১৯ দশমিক ১ স্কোর নিয়ে ৮১তম নেপাল। দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দুই দেশ ভারত ও পাকিস্তান ক্ষুধা মেটানোর সক্ষমতায় বাংলাদেশের তুলনায় পিছিয়ে। দেশ দুটির অবস্থান যথাক্রমে ১০৭ ও ৯৯তম। দেশ দুটি ‘মারাত্মক ক্ষুধায়’ (স্কোর ২০ থেকে ৩৪ দশমিক ৯) আক্রান্ত দেশের তালিকায় রয়েছে।
ক্ষুধা সূচক অনুযায়ী, বিশ্বের অন্তত নয়টি দেশে ক্ষুধার মাত্রা ‘উদ্বেগজনক’ (স্কোর ৩৫ থেকে ৪৯ দশমিক ৯) পর্যায়ে পৌঁছেছে। এসব দেশ হচ্ছে মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, চাদ, গণপ্রজাতন্ত্রী কঙ্গো, মাদাগাস্কার, ইয়েমেন, বুরুন্ডি, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান ও সিরিয়া। এ ছাড়া আরও ৩৫টি দেশে ‘গুরুতর ক্ষুধা’ (স্কোর ২০ থেকে ৩৪ দশমিক ৯) পরিস্থিতি আছে।
৫-এর নিচে স্কোর পেয়ে শীর্ষ ১৭ দেশের তালিকায় আছে বেলারুশ, হার্জেগোভিনা, চিলি, চীন, ক্রোয়েশিয়া, এস্তোনিয়া, হাঙ্গেরি, কুয়েত, লাটভিয়া, লিথুয়ানিয়া, মন্টিনিগ্রো, নর্থ মেসিডোনিয়া, রোমানিয়া, সার্বিয়া, স্লোভাকিয়া, তুরস্ক ও উরুগুয়ে। অর্থাৎ বিশ্বের এসব দেশে ক্ষুধা কম। সূচকে একেবারে তলানিতে অবস্থান করছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইয়েমেন। ৪৫ দশমিক ১ স্কোর নিয়ে দেশটি ১২১তম অবস্থানে আছে।