অর্থ পাচারকারীদের তথ্য নেই, হাত গুটিয়ে বসে দুদক

হকিকত জাহান হকি

0
90
দুর্নীতি দমন কমিশন

বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা ও তথ্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কবে পাবে, কবে পাচারকারীদের আইনের আওতায় আনা যাবে, তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। এখন পর্যন্ত দেশি-বিদেশি কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে অর্থ পাচারকারীদের তথ্য চেয়ে পায়নি সংস্থাটি। ফলে তথ্যের অভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে দুদককে।

দুদক সূত্র জানায়, ২০২১ সালের জানুয়ারিতে বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছিল কমিশন। কারণ ওই সময় মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ পর্যায় থেকে অর্থ পাচার নিয়ে বক্তব্য দেওয়া হয়েছিল। তাদের কাছে অর্থ পাচারকারীদের নাম ও তথ্য রয়েছে বলেও বক্তব্যে উল্লেখ করা হয়। এর পর দুই বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ পাচারকারীদের তালিকা পায়নি দুদক। তালিকা আছে কিনা, বিদেশ থেকে তালিকা সংগ্রহ করা হয়েছে কিনা বা এর জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে চিঠি দেওয়া হয়েছে কিনা– এসবের কিছুই এই দীর্ঘ সময়েও জানায়নি মন্ত্রণালয়।

জানা গেছে, দুদক কানাডা, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, দুবাই, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুরসহ বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচারকারী বাংলাদেশিদের তালিকা ও তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) মাধ্যমে এই তথ্য চাওয়া হয়। অর্থ পাচারকারীদের নাম ও তথ্য চেয়ে বিভিন্ন দেশে শতাধিক মিউচুয়াল লিগ্যাল অ্যাসিস্ট্যান্স রিকোয়েস্টও (এমএলএআর) পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া মেলেনি।

সম্প্রতি ৫৪৯ বাংলাদেশির বিরুদ্ধে দুবাইয়ে ৩১৫ মিলিয়ন ডলারে মোট ৯৭২টি আবাসনের মালিক হওয়ার অভিযোগ এসেছে দুদকে। ফলে ওই দেশ থেকে এসব তথ্য সংগ্রহ করে সরবরাহ করতে দুদক আবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিএফআইইউকে চিঠি দিয়েছে। দুদক কমিশনার (অনুসন্ধান) ড. মোজাম্মেল হক খান বলেন, ‘অর্থ পাচারকারীদের তালিকা চেয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের বিএফআইইউ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে। তাদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। অর্থ পাচার নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। তাদের কাছে কার্যকর সহায়তাও চাওয়া হয়েছে। অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে দুদকের কার্যক্রম অব্যাহত আছে, থাকবে। উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

তবে প্রক্রিয়াগত দুর্বলতা ও যথাযথ ফলোআপ না থাকার কারণে দুদক অর্থ পাচারকারীদের তথ্য আনতে পারছে না বলে মনে করেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘দুদকের এ ক্ষেত্রে নিজস্ব সক্ষমতা না থাকলে কোনো বিশেষজ্ঞ বা প্রতিষ্ঠানের সহায়তা নিতে পারে। তারাই তথ্য আনার ক্ষেত্রে ওসব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ করবে। দুদক আন্তর্জাতিক চুক্তি আইন অনুযায়ী বিভিন্ন দেশের কাছে তথ্য চেয়েছে। ওইসব দেশ তথ্য না দিয়ে আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন করছে।’

দুদক সূত্র বলছে, নানা কারণে বিভিন্ন দেশ থেকে অর্থ পাচারকারীদের তথ্য পাওয়া যাচ্ছে না। বিদেশে এমএলএআর পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এক সময় দুদকের সঙ্গে ‘অক্টোখান’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি ছিল। তখন নির্দিষ্ট ঘটনায় পাচারকারীদের তথ্য ও অর্থ দুটোই দেশে এসেছে। এখন আবার পাচারকারীদের চিহ্নিত করে পাচার অর্থ ফেরত আনতে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নেওয়া জরুরি।

বাংলাদেশের কিছু নাগরিক বিভিন্ন দেশে অর্থ পাচার করে প্রচুর সম্পদ গড়ে তুলছেন বলে অনেক আগে থেকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে খবর এসেছে। বিদেশে তাদের নামে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট, বাড়ি, মার্কেট, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এমনকি কিছু পাচারকারী বিভিন্ন দেশে নাগরিকত্বও গ্রহণ করেছেন। আন্তর্জাতিকভাবে আলোচিত পানামা পেপার্স, প্যারাডাইস পেপার্স কেলেঙ্কারি, কানাডার বেগমপাড়া, মালয়েশিয়ায় সেকেন্ড হোমসহ নানা ঘটনায় কিছু অর্থ পাচারকারীর নামও উঠে এসেছে। কিন্তু দেশি-বিদেশি প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার কাছে চেয়েও তাদের তালিকা এবং তথ্য-প্রমাণ না পাওয়ায় আইনি পদক্ষেপ নেওয়া যাচ্ছে না।

বিদেশে অর্থ পাচারকারীদের বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ ও তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে দুদক ছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠান কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানগুলো হলো– বিএফআইইউ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.